ফেসবুকে ব্যবসার ছদ্মবেশে প্রতারণা, অগ্রিম টাকা হাতানো হয় অর্ডার নিশ্চিতের নামে

এক পণ্য দেখিয়ে, দেওয়া হয় আরেক পণ্য

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘সিরামিকস শপ বিডি ৯৯’ নামের একটি পেইজে ডিনার সেট বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখেন চট্টগ্রামের মেয়ে খোদেজা আফ্রা। পছন্দ হওয়াতে তিনি ২ হাজার ২০০ টাকা দামের পণ্য নিতে যোগাযোগ করেন পেইজে দেওয়া নম্বরে এবং পরে অর্ডার করেন। গত ১৭ জুলাই পণ্যের ডেলিভারি ২৫০ টাকা বিকাশ করে পাঠিয়ে অর্ডার নিশ্চিত করেন।

গত ১৮ জুলাই বিকালে ০১৬১৩১৫২৫৯৮ নম্বর থেকে ফোন করে ২ হাজার ২০০ টাকা বিকাশে পাঠাতে বলা হয় এবং পণ্য নগরীর এ কে খান এলাকা থেকে নিতে বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত বাবাকে বলেন আফ্রা। পরে নম্বরটি যাচাই করলে ট্রু কলারে ধান্ধাবাজ হিসেবে দেখায়। এরপর তিনি বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন।

এভাবে শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশজুড়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব প্রতারক চক্র। ফেসবুকে ব্যাঙের ছাতার মতো বেড়েছে অনলাইন পণ্য কেনাবেচার পেইজ। এসব পেইজের অধিকাংশই ভুয়া। অনেকে আবার এক পণ্য দেখিয়ে ক্রেতাকে দিচ্ছে অরেক পণ্য।

তেমন এক ভুক্তভোগী চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বাসিন্দা কৃষ্ণা চক্রবর্তী। তিনি গত ১০ জুলাই ‘Luxury Shop’ নামের অনলাইন পেইজে একটি গলার চেইন অর্ডার করেন। পরে পণ্যের প্যাকেট হাতে নিয়ে টাকা পরিশোধ করের। চেইন সকালে গলায় দেওয়ার পর বিকালে দেখেন রং চলে গিয়ে কালো হয়ে গেছে। এরপর তিনি পণ্যের ছবিসহ বিস্তারিত লিখে পেইজের ইনবক্সে পাঠালেও কোনো সাড়া পাননি।

আবার অনেকের প্রতারণার কৌশল বদল করেছে। অনলাইনে পেইজ নেই এমন কোনো ভালো ব্র্যান্ডকে টার্গেট তারা। পরে সেই প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া পেইজ খুলে অপপ্রচারের পাশাপাশি বিক্রি করে নিম্নমানের পণ্য। এই কায়দায় প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন আব্দুল মোতালিব নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বিএসটিআই নিবন্ধিত ‘তাহমিন গোল্ড অ্যান্ড বেভারেজ’ নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী।

তার বিক্রি পণ্য ‘প্যারিস ঘি’ এর নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে অপপ্রচার চালানো অভিযোগ আদালতের দারস্থ হন আব্দুল মোতালিব। আদালতের শরণাপন্ন হলে সেখান থেকে পাহাড়তলী থানা এবং পরে থানা হতে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) পাঠানো হয়। সেখানে তিনি অভিযোগ দেন।

চট্টগ্রামের পিবিআই কর্মকর্তা নুরুন্নবী ভুয়া আইডির বিষয়টি তদন্ত করছেন বলে জানা গেছে। তবে এই বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে অনলাইন প্রতারণা শিকার অনেকেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু প্রায় অভিযোগ ঝিমিয়ে আছে ফাইলবন্দি হয়ে।

অথচ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯-এর ৭৬(১) ধারায় বলা হয়েছে, যেকোনো ব্যক্তি, যিনি সাধারণভাবে একজন ভোক্তা বা ভোক্তা হতে পারেন, এই অধ্যাদেশের অধীনে ভোক্তা অধিকার বিরোধী কাজ সম্পর্কে মহাপরিচালক বা এই উদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের কাছে, ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবহিত করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন।

চট্টগ্রামের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণা হওয়ার বিষয়ে আমরা অনেক অভিযোগ পাই। এসব বিষয়ে আমরা ব্যবস্থাও নিয়ে থাকি।’

তবে অনলাইনে কেনাবেচার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে বলে জানান তিনি।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!