অভিযানের পরও রমজানে মাল্টাজাতীয় ফলের চড়ামূল্য কমেনি, বরং বদলেছে বিক্রির কৌশল। এমন ঘটনা জানতে পেরে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত চট্টগ্রাম নগরীর ফলের পাইকারি বাজার ফলমন্ডিতে অভিযান চালিয়ে এক ব্যবসায়ীকে জরিমানা এবং বাজার কমিটির সভাপতির কাছ থেকে নিয়েছে মুচলেকা।
মঙ্গলবার (৫ মে) জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল আলমের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এতে ফলমন্ডির আড়তদার আল-আমিন ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে কয়েকজন আড়তদার পালিয়ে গেলেও ফলমন্ডি বাজার ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মালেক ও সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীরের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে মুচলেকা। অন্যদিকে অভিযানের খবর পেয়ে মাল্টা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চিটাগাং ফল বাণিজ্য (প্রা.) লি., জিএস ট্রেডিং, মেসার্স নুবাইদ, ইব্রাহিম এন্টারপ্রাইজসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক দোকান খোলা রেখে কৌশলে সটকে পড়েন। আবার অনেকে জরিমানা এড়াতে সাইনবোর্ড থেকে প্রতিষ্ঠানের নামও মুছে দেন আগেভাগেই।
জানা গেছে, হঠাৎ করে মাল্টার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার পেছনে আড়তদারের হাত রয়েছে এটি জানার পর ৩০ এপ্রিল ও ২ মে দুই দফা অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। অভিযানে মাল্টার দাম কমে আসার খবর বেরোলেও একদিন পর বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। অভিযানে দাম তো কমেইনি, বরং ব্যবসায়ীরা বদলে ফেলেন বিক্রির কৌশল। কম দামের ভুয়া রশিদের মাধ্যমে তারা চালিয়ে যাচ্ছিল কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বাণিজ্য। আমদানিসহ সব খরচ মিলে ৬০-৬৫ টাকার মাল্টা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে তারা বিক্রি করছিলেন ১৬০ টাকায়।
জানা গেছে, ১৫ কেজি ওজনের কার্টনপ্রতি মাল্টা ২৪০০ টাকায় খুচরো বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে তাদের ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল ১৫০০ টাকার রসিদ। আড়তে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযানে আসলে রশিদ যাচাই করে দেখেন সঠিক দামে বেচাকেনা চলছে। কিন্তু খুচরা বাজারে অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, মাল্টার দাম কমেনি। বরং বদলেছে কৌশল। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ফলমন্ডিতে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
মঙ্গলবার (৫ মে) অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের চোখ ফাঁকি দিয়ে আড়তে মাল্টা বিক্রি বন্ধ রেখে তা কোল্ডস্টোর থেকে বিক্রি করছেন। আবার হাতেগোনা কয়েকজন আড়তদার খুচরো বিক্রেতাদের কাছে মাল্টা বিক্রি করলেও তাও বিক্রি হচ্ছিল আবার ভুয়া রসিদের মাধ্যমে। দেখা যায়, কার্টনপ্রতি ২৪০০ টাকা বিক্রি করলেও ১৫০০ টাকার রসিদ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। আর যারা কোল্ডস্টোর থেকে কেনেন, তাদেরকে কোন ধরনের রসিদ ছাড়াই ২৪০০ টাকা প্রতি কার্টন মাল্টা কিনতে হয়।
জানা যায়, আমদানিকারকেরা ফল আমদানির পর মূল্য বাড়ানোর জন্য এজেন্টদের কাছে বিক্রি করে দেন। এজেন্টরা ফল বন্দর থেকে আনা থেকে শুরু করে মজুদ করা ও আড়তদারের কাছে বিক্রিসহ সবকিছু করেন। আর এই এজেন্টরাই মূলত মাল্টাসহ সব ফলের দাম বাড়িয়ে দেয়। এই চার চক্র সিন্ডিকেট এ বছর শুধু মাল্টা বাজার থেকে লোপাট করেছে কোটি টাকা।
সিএম/সিপি