প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চট্টগ্রামের ডাক্তার যাচ্ছেন এভারেস্টসহ একইসঙ্গে দুই চূড়া অভিযানে

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে একইসঙ্গে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট ও চতুর্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট লোৎসে অভিযানে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের সন্তান ডা. বাবর আলী। বাংলাদেশের পাঁচ পর্বতারোহী এর আগে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করলেও মাউন্ট লোৎসে বাংলাদেশিদের কাছে এখনও অজেয়। চট্টগ্রাম থেকে প্রথম ২৯ হাজার ২৮ ফুট উচ্চতার এভারেস্ট জয়ের পাশাপাশি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট উচ্চতার চতুর্থ উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট লোৎসেও জয় করতে চান পর্বতারোহী বাবর আলী।

২০২২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২২ হাজার ৩৪৯ ফুট উচ্চতার হিমালয়ের অন্যতম দুর্গম ও টেকনিক্যাল চূড়া ‘আমা দাবলাম’ জয় করেন চট্টগ্রামের এই পর্বতারোহী।
২০২২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২২ হাজার ৩৪৯ ফুট উচ্চতার হিমালয়ের অন্যতম দুর্গম ও টেকনিক্যাল চূড়া ‘আমা দাবলাম’ জয় করেন চট্টগ্রামের এই পর্বতারোহী।

শনিবার (৩০ মার্চ) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে বাবর আলীর এভারেস্ট ও লোৎসে পর্বত অভিযান নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পর্বতারোহণ ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’। এ সময় পর্বত অভিযাত্রী বাবর আলীর হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পর্বতারোহী বাবর আলী বলেন, ‘বেশিরভাগ পর্বতারোহীই বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বিন্দুতে দাঁড়িয়ে বাকি পৃথিবী দেখার স্বপ্ন দেখেন। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। প্রায় ১০ বছর ধরে হিমালয়ের বিভিন্ন চূড়ায় অভিযানের মধ্য দিয়ে এভারেস্টের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছি। আমি সব সময় চ্যালেঞ্জিং আর নতুন কিছু করতে পছন্দ করি। তাই একই সাথে মাউন্ট এভারেস্ট ও মাউন্ট লোৎসে এ দুই পর্বতে অভিযানে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘পর্বতারোহণ একটি দুর্গম খেলা। অন্যান্য খেলার মতো এ খেলায় রেফারি বা দর্শক থাকে না। থাকে প্রতি মুহূর্তে বিপদের সম্ভাবনা। তবে পর্বতারোহণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আমার এই অভিযানে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এগিয়ে এসেছেন। অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমি সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

ছেলেকে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল বাবর আলীর বাবা-মায়ের। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে এমবিবিএস সম্পন্ন করে বাবা-মায়ের সে স্বপ্ন পূরণ করেছেন বাবর। তবে বরাবরই এডভেঞ্চারপ্রিয় বাবরের স্বপ্ন যেন পাহাড়-পর্বতে গাঁথা। এর আগে দেশের ৬৪ জেলায় পায়ে হেঁটে ভ্রমণসহ সমতলে নানা অ্যাডভেঞ্চারমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত হন তিনি। স্থলপথ ছাড়িয়ে জলপথেও রয়েছে তাঁর পদচারণা। বিভিন্ন সময় অংশ নেন আন্ডারওয়াটার ডাইভিংয়ে।

পাহাড়-পর্বতের প্রতি বাবরের রয়েছে আলাদা টান। ২০১০ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে পদচারণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাবরের ট্রেকিং জগত। ২০১৪ সালে শুরু হয় বাবরের পর্বতারোহণে পথচলা। চট্টগ্রামের পর্বতারোহণ ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। এ ক্লাবের হয়ে গত ১০ বছরে ভারত ও নেপালের হিমালয়ের বিভিন্ন চূড়ায় অভিযান চালান বাবর। ২০২২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২২ হাজার ৩৪৯ ফুট উচ্চতার হিমালয়ের অন্যতম দুর্গম ও টেকনিক্যাল চূড়া ‘আমা দাবলাম’ জয় করেন চট্টগ্রামের এই পর্বতারোহী।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর ইউনিয়নের বাসিন্দা বাবর আলী ২০১৭ সালে ভারতের উত্তরকাশীর নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে বাবরের দুই পর্বত অভিযানের সার্বিক দিক তুলে ধরেন অভিযানের সমন্বয়ক ফরহান জামান। তিনি জানান, এ দুই পর্বত অভিযানের লক্ষে ১ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছেড়ে যাবেন বাবর আলী। পর্বতারোহণের প্রয়োজনীয় অনুমতি ও সরঞ্জাম নেওয়া শেষে নেপালের রাজধানী কাটমান্ডু থেকে উড়ে যাবেন লুকলা। এরপর সপ্তাহখানেকের ট্রেকিং শেষে বাবর পৌঁছাবেন এভারেস্টের বেসক্যাম্পে। সেখান থেকেই শুরু হবে বাবরের মূল অভিযান।

তিনি আরও জানান, বেস ক্যাম্প থেকে ওপরের ক্যাম্পগুলোতে ওঠানামা করে শরীরকে অতি উচ্চতার সাথে খাপ খাইয়ে নেবেন বাবর। বাবরের পুরো অভিযানে সময় লাগবে প্রায় দুই মাস। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ বা শেষ সপ্তাহের দিকে চূড়ায় আরোহণ করতে পারেন তিনি।

অভিযান সমন্বয়ক ফরহান জামানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে পর্বতারোহী বাবর আলীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’ এর সাবেক সভাপতি শিহাব উদ্দিন রিয়াদ ও পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ভিজুয়াল নিটওয়ারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ নুর ফয়সাল।

এর আগে ২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম। এর এক বছর পর ২০১১ সালের ২১ মে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি জয় করেন এম এ মুহিত। ২০১২ সালের ১৯ মে প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন নিশাত মজুমদার। এর সাতদিন পর ২৬ মে দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। ২০১৩ সালের ২০ মে পঞ্চম বাংলাদেশী হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচ্চতায় বাংলাদেশী পতাকা উড়ান খালেদ হোসেন (সজল খালেদ)। তবে এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে ৮ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় ‘অজানা কারণে’ মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

জেএন/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!