দুবাইয়ের অ্যাপে হুন্ডির কারবারে চট্টগ্রামের এজেন্ট, তিন মাসে ৪০০ কোটি টাকা ব্লক

চট্টগ্রামের এক বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটরকে ব্যবহার করে একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে গত সাড়ে ৩ মাসে প্রবাসীদের ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে দুবাইভিত্তিক একটি চক্র। রেমিট্যান্সের এই পুরো টাকাই বিশেষ কৌশলে বিদেশে রেখে দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন গন্তব্যে দেশ থেকেই টাকা পাঠানো হয়েছে। পুলিশ একে ‘ডিজিটাল হুন্ডি ব্যবসা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

দুবাইয়ের অ্যাপে হুন্ডির কারবারে চট্টগ্রামের এজেন্ট, তিন মাসে ৪০০ কোটি টাকা ব্লক 1

সার্বক্ষণিক অনলাইন মনিটরিংয়ের সময় মাসখানেক আগে এই অ্যাপ ও বিকাশ এজেন্টের সিমে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। এরপর বুধবার (২৭ মার্চ) দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে এসে চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে ডিজিটাল হুন্ডি প্রতারণায় জড়িত পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করার পর চাঞ্চল্যকর সব তথ্য পাওয়া যায়।

সিআইডি জানিয়েছে, ‘ডিজিটাল হুন্ডি ব্যবসা’য় জড়িত বেশ কিছু অ্যাপ বাংলাদেশে চলমান রয়েছে। তারা এ ধরনের কিছু অ্যাপের খোঁজ পেয়েছে। এসবের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় সিআইডি তৎপর রয়েছে।

জানা গেছে, ‘জেট রোবোটিক’ অ্যাপ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ‘ডিজিটাল হুন্ডি ব্যবসা’ চলে আসছিল। অ্যাপটির অ্যাডমিন কুমিল্লার শহিদুল ইসলাম ওরফে মামুন। তিনি ২০২০ সাল থেকে দুবাইতে আছেন। মধ্যপ্রাচ্যে বসে নিজস্ব এজেন্টের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স পাঠানোর দায়িত্ব নিতেন তিনি। জেট রোবোটিক অ্যাপের মাধ্যমে গত তিন থেকে সাড়ে ৩ মাসে প্রবাসীদের ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেন শহিদুল। এরপর তিনি ঠিকই চাহিদা অনুযায়ী গন্তব্যে টাকা পাঠিয়েছেন।

জানা গেছে, দেশের ভেতর থেকে এই টাকা বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠাতে ব্যবহার করা হয়েছে চট্টগ্রামের বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর ‘তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটস’কে। চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়। ওই ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে দেড়শটি এমএফএস এজেন্ট সিম কিনে সেগুলোকে ‘জেট রোবটিক’ অ্যাপের সাহায্যে দুবাই থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন শহীদুল ইসলাম ওরফে মামুন। তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটসের ৪৮টি বিকাশ এজেন্ট সিমে আগে থেকেই সমপরিমাণ বা বেশি অনলাইনে টাকা সংগ্রহ করে রাখা হয়। এরপর সংগ্রহ করা টাকা এজেন্টের সিম থেকে অ্যাপ ব্যবহার করে প্রবাসীদের আত্মীয়দের নম্বরে পাঠিয়ে আসছিল সংঘবদ্ধ চক্রটি। এভাবে গত তিন মাসে চট্টগ্রামের ওই ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের প্রায় ১৫০টি এজেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছে চক্রটি।

চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন— তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটসের মালিক নাসিম আহমেদ (৬২), এজেন্ট সিমের টেরিটরি সেলস ম্যানেজার ফজলে রাব্বি সুমন (৩২) ও মো. কামরুজ্জামান (৩৩)। এছাড়া গ্রেপ্তার করা হয় জেট রোবোটিক অ্যাপের বাংলাদেশের প্রতিনিধি জহির উদ্দিন (৩৭) এবং খায়রুল ইসলাম ওরফে পিয়াসকে (৩৪)।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৬টি মোবাইল, ১৮টি সিমকার্ড, একটি ল্যাপটপ, ৬টি মডেম ছাড়াও ২৮ লাখ ৫১ হাজার ২০০ টাকা জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গত তিন মাসে ৪০০ কোটি টাকা রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে জেট রোবোটিক অ্যাপের মাধ্যমে। কৌশলে এই অ্যাপ ব্যবহারকারী পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীতে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটসের কাছে রয়েছে ১১০০ বিকাশ এজেন্ট সিম। এসব এজেন্ট সিমের যেগুলোর পারফর্মেন্স ভালো না, সেসব এজেন্টের সিম জেট রোবোটিক অ্যাপ ব্যবহারকারীদের সরবরাহ করতো ডিএসও-রা।’

সিআইডি প্রধান জানান, এজেন্ট সিম নেওয়ার পর বিকাশ থেকে ই-মানি এজেন্ট সিমে আনা হয়। এই এজেন্ট সিমের কয়েকটি ভাড়া নেয় রোবোটিক অ্যাপস। হুন্ডি চক্রটির মূলহোতা শহিদুল ইসলাম ওরফে মামুন। দুবাইয়ে বসে মামুন যখন অ্যাপের মাধ্যমে এজেন্ট সিমের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায়, তখন সে বিকাশের মাধ্যমে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাঠাতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিকাশের এজেন্টদের প্রয়োজন হয় না। কারণ বিকাশের এজেন্ট সিমগুলো গ্রহণ করা করা হয় শুধুমাত্র ই-মানি ট্রান্সজেকশনের জন্য।’

মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘শুধু এই জেট রোবোটিক অ্যাপই নয়, এরকম বেশ কিছু অ্যাপ বাংলাদেশে চলমান রয়েছে। আমরা এ ধরনের কিছু অ্যাপের খোঁজ পেয়েছি। তাদের ধরতে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় সিআইডি তৎপর রয়েছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!