প্রকল্পের কোটি টাকা ফেরত, অবহেলার দায়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডাক্তারকে বদলি

৩ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা না দিলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা

উন্নয়ন প্রকল্পের কোটি টাকা ফেরত যাওয়ায় বদলি করা হয়েছে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহবাজকে। আগামী তিনদিনের মধ্যে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে যোগদান করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে টাকা ফেরতের বিষয়ে সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

এদিকে, লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদুল হককে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৫ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে পরিচালক (প্রশাসন) ডা. বেলাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, হাসপাতালের টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প. প. কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহবাজের অবহেলায় গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রকল্পের প্রায় কোটি টাকা ফেরত চলে যায়। এরপর থেকে চকরিয়া জনগণের মাঝে এক বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা নিয়ে খোদ স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলমও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নজরে আসলে শোকজ নোটিশ দিয়ে বদলির আদেশ দেওয়া হয় ডা. মোহাম্মদ শাহবাজকে।

গত ১৪ জুলাই কক্সবাজার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মহিউদ্দিন মো. আলমগীর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়। এতে আগামী তিনদিনের মধ্যে কি কারণে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের চিকিৎসা ও শৈল চিকিৎসা সরঞ্জাম (এমএসআর) ক্রয় না করার বিষয়ে সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয় শোকজে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে ছয়টি গ্রুপের ৬টি সরঞ্জামের উপর প্রায় কোটি টাকার দরপত্র আহবান করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি। ২০২০ সালের মে মাসের ১১ তারিখ ঠিকাদাররা দরপত্র ড্রপ করেন। এতে অন্তত ঢাকা-চট্টগ্রাম ও স্থানীয় মিলে ১০ জন ঠিকাদার অংশ নেন। কিন্তু সর্বনিম্ন দরদাতা না পাওয়া এবং কাগজপত্র সঠিক নয় অজুহাতে ওই দরপত্র বাতিল করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এরপর ২০২০ সালের ২৯ মে আবারও দ্বিতীয়বারের মতো দরপত্র আহবান করা হয়। চলতি বছরের ১৪ জুন আবারও দরপত্র ড্রপ করেন ঠিকাদাররা। ওই দরপত্র প্রক্রিয়ায় চারটি ঠিকাদারি কোম্পানি অংশ নেয়। কিন্তু ওই দরপত্রও নানা অজুহাতে বাতিল করে দেন হাসপাতাল মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি। ফলে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করতে না পারায় ফেরত চলে যায় প্রায় কোটি টাকার প্রকল্প।

বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আমির হামজা বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহবাজকে লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। এর স্থলে লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প. প. কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদুল হককে পদায়ন করার একটি প্রজ্ঞাপনের চিঠি পৌঁছেছে।

এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদুল হক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে পরিচালক ডা. বেলাল হোসেন স্বাক্ষরিত বদলির প্রজ্ঞাপন হাতে পেয়েছি। আগামী সোমবার যোগদান করবো বলে আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, আগেও যেহেতু চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করেছি, সেহেতু একটু অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে চকরিয়ার মানুষকে পরিপূর্ণ সেবা দিতে চেষ্টা করবো।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!