তৌহিদ আফ্রিদিকেও ঠেলে বের করতে হল, মানবিক বিপর্যয়ে ‘লাইভের’ যন্ত্রণা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে অসহায় মানুষের প্রতি ‘মানবতার দরদ দেখিয়ে’ চিকিৎসা সেবায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদি। দলবল নিয়ে পুলিশি বাধা অমান্য করে বার্ন ইউনিটে প্রবেশের পর আবার পুলিশের ধাক্কায় তিনি শেষপর্যন্ত বের হতে বাধ্য হন ওয়ার্ড থেকে। এর আগে হাসপাতালে দর্শনার্থী কমানোর অনুরোধ জানান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। কিন্তু এসব নির্দেশনা না মেনে উল্টো দলবল নিয়ে চিকিৎসাসেবায় বিঘ্ন ঘটান এই ইউটিউবার।

শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের একদিন পর রোববার (৫ জুন) রাত সাড়ে ১০টায় লাইভে এসে ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদি জানান, খবর পাওয়া মাত্র ঢাকা থেকে বিমানে চট্টগ্রামে এসেছেন তিনি।

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রামবাসীর আন্তরিক সহযোগিতায় আহতরা যেখানে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু রোববার (৫ জুন) ফেসবুক লাইভে এসে তৌহিদ আফ্রিদি দাবি করেন, সেখানে ব্লাড সংকট, ওষুধ সংকট, খাবার সংকটসহ নানা সমস্যা।

দুর্ঘটনার প্রায় ২৫ ঘন্টা পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে বাধা অতিক্রম করতে ব্যবহার করেন রেড ক্রিসেন্টের অফিসিয়াল পোশাক। লাইভের সাড়ে ৫ মিনিটের সময় দেখা গেছে, হাসপাতালের ইমারজেন্সি গেট দিয়ে দলবল নিয়ে প্রবেশ করার সময় সিকিউরিটি গার্ড অসহায় হয়ে প্রশ্ন তোলেন— ‘এত মানুষ!’ এরপরই এই ইউটিউবার নিরাপত্তাকর্মীদের তোয়াক্কা না করে দলবল নিয়ে ছোটেন ওয়ার্ডের পথে। ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে প্রবেশের পর সেলফি তোলার সময় তাদের সতর্কও করা হয়।

ফেসবুক লাইভের ১১ মিনিটের সময় দেখা গেছে, হাসপাতালের ৩১ নম্বর বার্ন ইউনিটের প্রবেশমুখে দলবেধে জটলা করতে নিষেধ করছে পুলিশ। কিন্তু দুই মিনিট পরই আফ্রিদি ওয়ার্ডে ঢোকেন তার দলবল নিয়ে। এ সময় নিরাপত্তার খাতিরে ‘ফেসবুক লাইভ’ বন্ধ করতে বলা হলেও গোপনে ‘লাইভ’ চালিয়ে যায় আফ্রিদির এক সহযোগী। অনেক ধাক্কাধাক্কির পর ‘লাইভ’ বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই লাইভ চলতেই থাকে।

এই লাইভের সাড়ে ১৪ মিনিটে আফ্রিদি ও তার দলবল এক রোগীকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগী দেখতে চাইলেও তার দলবলের জন্য যেতে পারছিলেন না। তখন কর্তব্যরত এক ডাক্তার বলেন, ‘এটা টাইম না।’

লাইভের ১৮ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের সময় পুলিশ এসে তাকে বেরিয়ে যেতে বললেও তিনি কর্তব্যরত কোনো ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার জন্য ওয়ার্ডে হাঁটাহাটি করছিলেন। এ সময় পুলিশ আবারও লোক কমানোর জন্য তাগিদ দেয়। এ সময়ও পুলিশের কথা না শোনায় লাইভের ২১ মিনিটের সময় দেখা যায়, পাচঁলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার শাহ আলম এসে তাকে ঠেলে ওয়ার্ড থেকে বের করে দেন। এ সময় আফ্রিদিকে বলা হয়, তিনি যেন হাসপাতালের বাইরে গিয়ে লাইভ করেন।

তৌহিদ আফ্রিদির বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

মানবিক বিপর্যয়ের সময় হাসপাতালে ফেসবুকার-ইউটিউবারদের উপদ্রব নিয়ে করিম রনি নামে একজন ফেসবুকে লিখেন, ‘এইসব বলদ চট্টগ্রাম মেডিক্যালে যায় শো-অফ করতে। আর এদিকে দেখেন অনেক বাবা-মা তার সন্তানের লাশ নিয়ে যেতে পারছে না টাকার অভাবে— সেটাই খবর নেই কারো। সবাই বলে অমুক গেছে তমুক গেছে হাসপাতালে। এরা গিয়ে ওখানে কি রোগীর কী লাভ করছে?’

নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘এসব ব্যাড প্র্যাকটিস হচ্ছে। ইউটিউবার বা অন্যান্য তারকারা আসতে পারে, তবে তাদের কারণে চিকিৎসাসেবা বাধাগ্রস্ত হতে পারবে না। যার কারণে হাসপাতালে সিকিউরিটি ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার রাতে চার-পাঁচশ রোগী একসাথে হাসপাতালে আসার কারণে চিকিৎসাসেবায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যালে যখন সংকট ছিল মানবিক বিপর্যয় দেখে চট্টগ্রামের মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।’

এদিকে সোমবার (৬ জুন) দর্শনার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এর প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘হাসপাতালে ভিড় করবেন না। একটা কারণেই বাংলাদেশে বার্ন রোগী মারা যায়, সেটা হলো ইনফেকশন। ইনফেকশন হলে সেই বার্ন রোগীকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। একটা ছোট বার্ন বড় হয়ে যায় ইনফেকশন হলে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!