চট্টগ্রাম মেডিকেলে পর্যাপ্ত সরবরাহের পরও মিলছে না ওষুধ, রোগীর ভরসা স্বেচ্ছাসেবীদের স্টল

চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসা চলছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের ৩৬, ৩১ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছে প্রায় অর্ধ শতাধিক পোড়া রোগী। পোড়া রোগীদের জন্য দরকার পড়ছে আ্যান্টিবায়েটিক, স্যালাইন, মলম, খাবার স্যালাইন, জিঙ্ক, ভিটামিন ট্যাবলেটসহ আরও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান জানান, পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রয়েছে। আগামী একসপ্তাহ কিংবা ১৫ দিনেও আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব।

কিন্তু পরিচালকের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। ডাক্তারদের লেখা ওষুধ ওয়ার্ড থেকে না দিয়ে নার্সরা নিচের স্বেচ্ছাসেবীদের স্টল থেকে আনতে বলছেন। আর নার্সদের কথা অনুসারে মেডিকেলের নিচে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যক্তি উদ্যোগ ও মানবাধিকার সংগঠনের স্টল থেকে ওষুধ সংগ্রহ করতে দেখা গেছে রোগীর স্বজনদের।

বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ রাজু রহমান (৪২) চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তার চোখ ও শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সোমবার (৬ জুন) বিকালে রাজুর ছোট ভাই রিপনকে দেখা গেল মেডিকেলের নিচে। হাতে ওয়ার্ড থেকে দেওয়া ডাক্তারের স্লিপ। এতে লেখা ওষুধের মধ্যে রয়েছে, famiclav, clofenec sr, opton 20, cevit-ds, xin b, approxcin eye oint, iventi e/d, systear e/d।

আরেকজন আগুনে পোড়া রোগীর স্বজন মাহতাবের হাতে থাকা লিস্টে দেখা গেল Maxiumacs, losectil (40 mg), eye mox drop, cap civit, (250 mg), smc orsalaine, face tissue, soap, voltaline suppository লেখা আছে। মাহতাব কয়েকটি স্টল ঘুরে প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো নেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের ছয়তলার বার্ন ইউনিটের ৩১ ও ৩৬ এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে রোগীর স্বজনদের স্লিপ হাতে ধরিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে নিচে। এমন অনেক রোগীর স্বজন পাওয়া গেছে, যারা খাবার স্যালাইন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ওয়ার্ড থেকে না পেয়ে নিচের স্টল থেকে নিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে রোগীদের ইনফেকশন এড়াতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু ওষুধ নিতে ওপরে-নিচে রোগীর স্বজনদের বারবার ওঠানামার ফলে জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা।

বিএম ডিপোতে গাড়ি চালাতেন মো. সাহাবুদ্দিন। আহত হয়ে তিনি ভর্তি আছেন ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ডাক্তার ওষুধ লিখে স্লিপ দেয় তার ভাইকে। কিন্তু ওষুধ চাইলে ওয়ার্ডের নার্সরা জানান, সব ওষুধ দেওয়া যাবে না। নিচে থেকে নিয়ে আসতে হবে। তাই সাহাবুদ্দিনের ভাই নিচের স্টল ঘুরে ঘুরে ওষুধ সংগ্রহ করেন।

এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সামনে রোগীদের ওষুধ দিতে স্টল নিয়ে বসেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও রাজনৈতিক সংগঠন। স্টলগুলোর মধ্যে রয়েছে− বাংলাদেশ অটোমোবাইলস প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম সিটি, দাওয়াতে ইসলামী। এছাড়া রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগ, এমআর আজিম, সাইফুল ইসলাম লিমন।

স্টলে দায়িত্বরত রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম সিটির সদস্য সুজিত রুদ্র বলেন, ‘পোড়া রোগীর স্বজনরা ডাক্তারের স্লিপ দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন। পোড়া রোগীদের সব ধরনের ওষুধ এখানে আছে।’

কিন্তু সোমবার সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দু’ওয়ার্ডে নার্সদের রুমে ওষুধ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। রোগীদের ওষুধ বণ্টনে ছিল গাফেলতি। বিকাল সাড়ে ৩টায় ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্সরা জানান, যেসব ওষুধ নেই সেসব আমরা নিচে থেকে আনার জন্য রোগীর স্বজনদের পাঠাচ্ছি।

ওষুধ সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও নিচে পাঠানো হচ্ছে কেন−এমন প্রশ্নের জবাব কোনো উত্তর দেননি তারা। একই সঙ্গে এই প্রতিবেদককে নাম প্রকাশ না করতেও অনুরোধ জানায় কর্তব্যরত নার্সরা।

সোমবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত দেখা গেছে, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন ১৪ জন আগুনে পোড়া রোগী। ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ২ জনকে। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৬ জন। ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ১৫ জনকে।

তবে ওয়ার্ডে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পর্যাপ্ত খাবার দিলেও রোগীরা কষ্ট পাচ্ছেন অসহ্য গরমে। একাধিক রোগী জানান, স্ট্যান্ড ফ্যান থাকলে ঠাণ্ডা বাতাসে তাদের ক্ষত স্থানটির জ্বালাপোড়া ভাব কমতো। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে সিলিং ফ্যান পর্যাপ্ত থাকলেও ৩৬ নম্বরে রয়েছে সংকট। সোমবার দুপুরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ছোট টেবিল ফ্যান দেওয়া হয়।

মেডিকেল পূর্ব গেটের সিটি মেডিকেল হলের স্বত্বাধিকারী অভিজিৎ সেন মিশু বলেন, ‘বার্ন ইউনিটের রোগীদের মূলত দরকার আন্টিবায়োটিক, স্যালাইন আর বার্ন মলম। তবে বিস্ফোরণে পোড়া রোগীর স্বজনরা আমাদের কাছ থেকে ওষুধ কিনতে আসছেন না। ওষুধ কিনতে আসছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা পরবর্তীতে রোগীদের বিনামূল্যে সেসব ওষুধ সরবরাহ করছে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!