‘ডিউটি’রত ওরা ১১ জন ধরা খেল ‘তেইল্লাচোরা’র হাতে

ওরা সংঘবদ্ধভাবে চুরি ও ডাকাতি করে। অপরাধ সংঘটনের সময় তারা বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দও ব্যবহার করে। পুলিশকে বলে ‘তেইল্লাচোরা’, চুরিকে বলে ‘ডিউটি’ ও অপরাধ সংঘটনের স্থানকে বলে ‘অফিসম্যান’। ইতোমধ্যে দুই চুরির ঘটনার মামলায় তারা অভিযুক্ত।

নগরের কোতোয়ালী থানাধীন লালদিঘীর পাড় এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থানকালে চোর চক্রের মূল হোতা হানিফ প্রকাশ হাতপোড়া হানিফসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। শনিবার (২৪ আগস্ট) রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন।

চুরি ও ডাকাতিতে ব্যবহৃত অস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী।
চুরি ও ডাকাতিতে ব্যবহৃত অস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী।

পূর্বে দায়েরকৃত দুটি চুরির মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জানা গেছে তারা ডাকাতদলের সাথে যুক্ত ছিলো।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ওই ১১ জন ‘আন্তঃজেলা ডাকাত দলের’ সদস্য। এদের দলনেতা হানিফ প্রকাশ হাতপোড়া হানিফ। আমরা হানিফসহ দলের তার দলের আরো ১০ জনকে গ্রেপ্তার করি। তাদের থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, দরজা ও লকার ভাঙ্গার বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত ওই যুবকরা বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। তারা বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে বড় আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে। পরে দলের অন্যদের জড়ো করে সেসব প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি করে। চট্টগ্রামেও তারা এ ধরনের একটি ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং সেজন্য সবাই ওই হোটেলে উঠেছিল বলে জানান ওসি মহসীন।

তিনি আরো জানান,গত ২৭ জুন কোতোয়ালী থানাধীন নন্দনকানন গোলাপ সিংহ এলাকার লাকি ইলেকট্রিক কোম্পানি নামক দোকান থেকে কৌশলে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা চুরি করে এই চক্র।

এর আগেও গত ২০ ফেব্রুয়ারি কোতোয়ালী থানাধীন জুবলী রোড এলাকার কাজী কম্পিউটারস নামক দোকানের শার্টারের তালা কেটে ১২টি ল্যাপটপ, ৫২৫পিস পেনড্রাইভ,৪৫০ পিস মেমোরি কার্ডসহ কিছু টাকা পয়সা চুরি করে এরা।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন দলনেতা মো.হানিফ (৪০),দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড মো. কামাল (২৮), মো. লিয়াকত হোসেন (২৪),মো.আকরাম (২৩), মো.তৌফিক (২৬), মো.মাসুম (২৬), নয়ন মল্লিক (২২), মো. মিলন (২৫), জামাল উদ্দিন (৩০), মো.মিজান (২৫) এবং মো. কামাল প্রকাশ ভূসি কামাল (৩২)।

রোববার (২৫ আগস্ট) দুপুরে এদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে নগর উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান জানান, ‘নগরীর জুবিলি রোড এলাকায় দুটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা তদন্তে গিয়ে আমরা এই চোরচক্রের সন্ধান পাই। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বেশ কয়েকজনকে শনাক্তের পর তাদের মধ্য থেকে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর ওই ১১ জন স্বীকার করেছে যে- এই দলের সদস্যরা সারাদেশে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন দোকান, ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি করে। সাধারণত মোবাইল, ল্যাপটপ এবং নগদ টাকা তারা নিয়ে যায়।’

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে তিনি আরও বলেন, আসামিদের দলনেতা হানিফ আর এই হানিফের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ছোট ছোট নয়টি গ্রুপ। আর গ্রপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০-৪৫জন। গ্রুপের সদস্যরা দশ থেকে বার বছর ধরে এই ধরনের চুরির কাজ করে আসছে বলে স্বীকার করে তারা।

তাদের চুরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে উপ-কমিশনার বলেন, তার নিজেদের মধ্যে সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে চুরির প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে। যেমন টার্গেট করা দোকানকে বলে অফিস, তালাকে বলে আম, পুলিশকে বলে ‘তেইল্লাচোরা’, চুরি করাকে বলে ‘ডিউটি’, চুরি করতে দোকানের ভেতরে যে ঢুকে তাকে বলে ‘অফিসম্যান’।

উপ-কমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, ইতোমধ্যে তারা আমাদের অনেকগুলি চুরির ব্যাপারে তথ্য দিয়েছে। সারাদেশের যেসব থানায় তারা চুরির ব্যাপারে তারা তথ্য দিয়েছে আমরা সেসব থানাকে অবহিত করেছি। এসব মামলায় তাদের শ্যোন এরেস্ট দেখিয়ে মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। তাছাড়া আমরা এদের রিমান্ড আবেদন করবো। এদেরকে রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। তাছাড়া এ চক্রের বাকি সদস্যদেরকেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুর রউফ, কোতোয়ালী জোনের সিনিয়র এসি নোবেল চাকমা ও কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।

এইচটি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!