দীর্ঘ ৭ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর কমিটি ঘোষণার পরেই চবি’র মাটিতে ছাত্রদলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল। তবে ছাত্রদলের দাবি, যে নিজেই (রুবেল) ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত সে আমাদের অবাঞ্ছিত করার বিষয়টি পাগলের প্রলাপের মতো। খুব শীঘ্রই চবিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানান চবি ছাত্রদলের নেতারা।
শুক্রবার (১১আগস্ট) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যর আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মহসিনকে সভাপতি ও আব্দুল্লাহ আল নোমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটিতে মামুনুর রশিদ মামুনকে সিনিয়র সহ-সভাপতি,মো. ইয়াসিনকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়কে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।
আর কমিটি ঘোষণার পর দিনই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ছাত্রদলকে হুমকি দেন রুবেল। তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে লিখেন, ‘ছাত্রদলের কমিটি হইছে, কমিটি নিয়ে বাসায় থাকবেন, ক্যাম্পাসে আসার চেষ্টা দয়া করে করবেন না। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা, হিজবুত তাহেরী এবং ছাত্রদলকে একবিন্দু ছাড় দিবে না৷ হিজবুত তাহেরী সাবধান, ছাত্রদলের নতুন কমিটি, দয়া করে বাসায় থাকবেন।’
রুবেলের এমন স্ট্যাটাসকে পাগলের প্রলাপ বলছেন নবনির্বাচিত ছাত্রদলের নেতারা। এই বিষয়ে চবি ছাত্রদলের সভাপতি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মহসীন বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি তিনি (রুবেল) নিজেই দলের কাছে অবাঞ্ছিত। দল ক্ষমতায়, নিজে সভাপতি থাকার পরও তিনি ক্যাম্পাসে যেতে পারেন না। তিনি কি করে আমাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবেন?’
মহসীন আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যাওয়া প্রতিটি ছাত্রের অধিকার, তিনি আমাদের অধিকার হরণ করতে পারেন না। আমরা খুব শীঘ্রই ক্যাম্পাসে যাবো। ইতোমধ্যে আমি আমার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি, আমরা ক্যাম্পাসে গিয়ে মিছিলও করবো, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও চালাবো।’
ছাত্রদল সভাপতির বক্তব্যর বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। আর এই দলের ছাত্র সংগঠন হলো ছাত্রদল। এর আগে সারাদেশ বিএনপি-ছাত্রদলের তাণ্ডব দেখেছে। আমরা চাইনা, আমাদের শান্তিময় চবি ক্যাম্পাসে কোনো অশান্তির দৈত্য আসুক। তাই আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ওদেরকে আগাম ক্যাম্পাসে আসার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। যদি আমার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আসে তবে তাদের চরম মাসুল দিতে হবে।’
আপনি তো ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত—ছাত্রদল সভাপতির এমন প্রশ্নের উত্তরে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের ছাত্রলীগ দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন। আমাদের নেতাও বেশি, কর্মীও বেশি। তাই আমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়ে থাকে, তবে আমাদের নীতির আদর্শে, অস্তিত্বের আদর্শে আমরা এক এবং অভিন্ন। বিএনপি-ছাত্রদলের বিপক্ষে আমরা চবি ছাত্রলীগ এক ও অভিন্ন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর আমি অবাঞ্ছিত নই, এখনও ক্যাম্পাসে আছি, নিয়মিতই আসি, হলে থাকি। একটি মহল বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করে আমার নামে অপপ্রচারে লিপ্ত আছে। আর ছাত্রদল সভাপতির তো ছাত্রত্বই নেই।’
ছাত্রত্বের বিষয়ে ছাত্রদল সভাপতি মহসীন বলেন, ‘আমি ভাষা কোর্ষের ছাত্র, এর আগে আমি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলাম। যদিও ছাত্রদলের ওপর হামলা-মামলার কারণে আমি মাস্টার্সের কোর্স শেষ করতে পারিনি, সেখানেও আমার ছাত্রত্ব আছে।’
শুধু মহসিন নিজে নন, চবি ছাত্রদলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে যেতে দেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি। মহসিন আরও বলেন, ‘গত নির্বাচনের সময় আমাদের অনেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। বিনা অপরাধে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে যাওয়ার অধিকার সবার, কিন্তু ছাত্রলীগ আমাদের অধিকার হরণ করেছে।’
২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর সর্বশেষ চবিতে ছাত্রদলের ৬৯ সদস্যের কমিটি করেছিল ছাত্রদল। পরে কমিটি ঘোষণার সাত মাসের মধ্যেই ২৪৩ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও ঘোষণা করে তারা। এবার পাঁচ সদস্যর কমিটির মধ্যেও রয়েছে অন্তর্কোন্দল। যোগ্যতার অবমূল্যায়ন ও বুড়োদের দিয়ে কমিটি করার ঘোষণা করার অভিযোগও করেছে অনেকে।
ডিজে