চট্টগ্রাম হঠাৎ ছোঁয়াচে ‘চোখ উঠা’র অস্বস্তিতে, দিনে গড়ে ১০০ রোগী মেডিকেলে

অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপেই সমাধান দেখছেন ডাক্তাররা

চট্টগ্রাম নগরীতে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে চোখ উঠা বা কনজাংটিভাইটিস রোগী। প্রতিবছর গ্রীষ্মে এ ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগের দেখা মিললেও এবার শরতে বেড়েছে এর প্রকোপ। চট্টগ্রাম মেডিকেলের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১০০ রোগী আসছেন চিকিৎসা নিতে।

চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারো চোখে তাকালেই চোখ উঠা রোগ হয় না। তবে এ রোগ ছোঁয়াচে, এটির জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো কিছু না ছোঁয়া ও তাদের ব্যবহারের জিনিস আলাদা করতে হবে। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালোভাবে তৈরি হয়নি, তারা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

জানা গেছে, চোখ উঠাকে কনজাংটিভাইটিস বা রেড/পিংক আই বলে। অর্থাৎ কনজাংটিভা নামক চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে তাকে চোখ উঠা রোগ বলা হয়। চোখ উঠার মূল কারণ ভাইরাসজনিত এবং এটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে। আক্রান্ত কারও চোখে তাকালেই কারোর চোখ উঠে না। কারও কারও চোখ ওঠা হয়তো তিনদিনে ভালো হয়ে যায়। আবার অনেকের তিন সপ্তাহও লাগতে পারে। সেটা নির্ভর করে কাকে কোন্ ধরনের ভাইরাস আক্রান্ত করেছে এবং সেই রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন তার ওপর।

এদিকে চট্টগ্রামে এ রোগের প্রকোপ বাড়ায় বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীদের সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত স্কুলে আসতে নিষেধ করেছে। চট্টগ্রামভিত্তিক বিভিন্ন ফেসবুক পেইজে চোখ উঠা রোগীরা পরামর্শ চেয়ে পোস্ট দিচ্ছেন।

একটি গ্রুপে সাহাদত ইমন নামে একজন লিখেছেন, ‘প্রথমে ছোট বোনের হয়েছিল। তার থেকে আম্মু-আব্বুর হয়েছে, প্রায় ১ সপ্তাহ। ট্রিটমেন্ট চলছে কিন্তু কমছে না।’

ফরিদা ইয়াছমীন নামের একজন লিখেছেন, ‘আমাদের বায়েজিদ শেরশাহ এলাকায় তো একদম ছড়িয়ে গেছে। আমাদের ঘরে কারও বাদ পড়েনি। মাত্র দুদিন হলো ঘরের সবাই সুস্থ হয়েছে।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মোহাম্মদ উল হক মেজবাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চোখ উঠা বা কনজাংটিভাইটিস রোগটি বর্তমানে ভাইরাল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাই এটি এখন সবারই হচ্ছে। ঘরে ঘরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে এটি হলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। চোখে পানি দিতে হবে বারবার। ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল খেতে হবে। আর সঙ্গে চোখের ডাক্তার দেখিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। তবে রাস্তাঘাট বা বাড়ির পাশের ফার্মেসি থেকে এক্সট্রা ড্রপ কিনে ব্যবহার করা উচিত নয়।’

তিনি বলেন, ‘চোখ উঠা ব্যক্তিকে আলাদা রাখতে হবে। তার চোখে মোছা টিস্যু, ব্যবহৃত জিনিস অন্য কেউ যাতে ব্যবহার না করেন, সে খেয়াল রাখতে হবে। আমার চেম্বারে প্রতিদিন চোখ ওঠা রোগী দেখছি। কিন্তু এতে ছোঁয়াচে রোগটি আমাকে আক্রমণ করছে না। কারণ আমি রোগীর ব্যবহৃত জিনিস স্পর্শ করছি না। আক্রান্ত ব্যক্তির চোখের রস বা লালা যে স্পর্শ করবে মূলত রোগটি তারই হবে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির দিকে তাকালেই এ রোগ হয় না। যখন চোখের পানি মুছতে যাই, তখনই এটি আমাদের হাতে এসে যায়। এরপর থেকেই সেই হাত দিয়েই আমরা যা কিছুই ছুঁই না কেন, সেখানে ভাইরাস চলে আসে। এজন্যই আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই সময় বাসায় থাকতে হবে। রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্রও কিছুটা আলাদা রাখা ভালো।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বহির্বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. সুব্রত দাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিদিন প্রচুর চোখ ওঠা রোগী চিকিৎসা নিতে বহির্বিভাগে আসছেন। গড়ে প্রতিদিন আমরা ৩০০ জন চোখের রোগী দেখি। এর মধ্যে ১০০ জনই চোখ উঠা রোগী।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর গ্রীষ্মে চোখ উঠা রোগের প্রকোপ বাড়লেও এবার শরতে দেখা দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে আমরা মনে করছি করোনার প্রভাব। করোনায় অনেকেরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। আর এজন্য অন্য ভাইরাস খুব সহজেই কাবু করতে পারছে করোনায় ভোগা ব্যক্তিদের।’

ডা. সুব্রত দাশ বলেন, ‘চোখ উঠা রোগ অনেক সময় সারতে বেশি সময় নিচ্ছে। আক্রান্ত স্থানটি ফুলে যাচ্ছে, চুলকায়ও বেশি। এক্ষেত্রে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে এবং আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে। তাই সেসব রোগীকে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞ সার্জন দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!