চট্টগ্রাম মেডিকেলে হঠাৎ বাগানের শখ, ১০০ টাকার চারা কেনা হল ৩৫০ টাকায়

মরাগাছে পানি ঢালেন ৩২ হাজার টাকা বেতনের দুই কর্মী

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সফরকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তড়িঘড়ি দুটি বাগান করার উদ্যোগ নিয়ে কেনা হয় অর্ধলক্ষ টাকার গাছের চারা। সেখানেও হয়েছে পুকুরচুরি। ১০০ টাকার রঙ্গন গাছের চারা কেনা হয়েছে ৩৫০ টাকায়, ৫ টাকার গাঁদা ফুলের চারা কেনা হয়েছে ৩০ টাকায়। এর নেপথ্যে রয়েছেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি। এতো কিছুর পরও লাগানোর পরপরই মারা গেছে গাছের চারাগুলো। শুধু তাই নয়, বাগান দেখতে ৩২ হাজার টাকা মাসিক বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয় দুজন কর্মী। জীবিত হওয়ার আশায় তারা এখন মরা গাছগুলোতে পানি দিয়ে যাচ্ছেন!

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনসিলিয়ারি বিল্ডিংয়ের সামনে ও ক্যান্সার ওয়ার্ডের পিছনের খালি দুই জায়গায় বাগান করার পরিকল্পনা হাতে নেয় মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। আর এ বাগান পরিচর্যার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১৬ হাজার টাকার বেতনের দুই আউটসোর্সিং কর্মীকে। তারা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ বাগানের যত্ন-আত্তি করে থাকেন। এ বাগানের গাছ কেনা ও আউটসোর্সিং কর্মীদের দেখাশোনা করেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল মতিন প্রকাশ মানিক। বাগানে যেসব গাছ লাগানো হয়েছে সেগুলো লাগানোর পরপরই মারা গেছে। আছে কিছু গাদা ফুলের চারাগাছ। রয়েছে রঙ্গন ফুলের কয়েকটি গাছও। তবে গাছের অবস্থা যাই হোক বাগানের গাছ কিনতে খরচ হয়েছে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা।

চট্টগ্রাম মেডিকেলে হঠাৎ বাগানের শখ, ১০০ টাকার চারা কেনা হল ৩৫০ টাকায় 1

জানা গেছে, সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের চট্টগ্রাম মেডিকেল পরিদর্শনে আসার খবর নিশ্চিত হওয়ার পর হাসপাতালের সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। এরপর তিনি বাগান দেখভাল করতে দুজন আউটসোর্সিং কর্মীও নিযুক্ত করেন। এদের একজন গিয়াস উদ্দিন ও মো. শাহজাহান। এদের প্রত্যেকের বেতন ১৬ হাজার টাকা করে।

গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘বাগান করার আগে এই দুই জায়গার বালি-ইট-পাথর সরিয়ে পরিস্কার করতে আমাদের দুজনের ২ মাস সময় লেগেছে। তারপর মানিক ভাইয়ের (চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি) নির্দেশনায় তার আনা গাছের চারা রোপণ করি। কিন্তু কিছু গাছ লাগানোর পরপরই মরে গেছে।’

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেলে বাগানের জায়গা দুটি ঘুরে দেখা গেছে, ‘যেসব গাছ মারা গেছে, সেগুলোর ডাল মাটিতে পুতে রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, নার্সারি থেকে গাছ কিনে আনার হিসাব দেখানো হলেও লাগানো হয়েছে মূলত ডাল। প্রতি রঙ্গন গাছের চারা কেনা হয়েছে ৩৫০ টাকা দিয়ে। কিন্তু নার্সারিতে এর দাম ১০০ টাকার বেশি নয়। আর গাঁদা ফুলের চারা কেনা হয়েছে ৩০ টাকা করে। যেগুলোর প্রতিপিস ৫ টাকার বেশি নয় বলেই নার্সারি থেকে জানা গেছে।

বাগানের রক্ষণাবেক্ষণকারী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমরা গাছের কাজই সারাদিন করি। মরা গাছে পনি দেই। যদি গাছ জীবিত হয়!’

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম মেডিকেলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল মতিন প্রকাশ মানিকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘কী লিখবেন? আমি টাকা মেরে খেয়েছি। লেখেন। আর কিছু জানতে চাইলে পরিচালককে ফোন দেন।’

চট্টগ্রাম মেডিকেলের এনসিলারি বিল্ডিংয়ের নতুনভাবে বসানো লিফট দিয়েই ৮ তলা প্রশাসনিক ভবনে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন ওঠানামা করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। ওই লিফট থেকে নামলেই সহজে চোখে পড়ে দুই পাশে বাগান দুটির অবস্থান।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসলে হাসপাতালের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে বাজেট বেশি না। আর মরা না জীবিত গাছ লাগানো হয়েছে, এত সব আসলে আমি জানি না। বিষয়টি আমি খেয়াল করবো।’

আইএমই/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!