চট্টগ্রাম মেডিকেলের ল্যাবে বাড়ছে রোগী, প্রাইভেটের চেয়ে খরচ অনেক কম

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনরিলারি বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় প্যাথলজি ল্যাবের সামনে সকাল ৭টা থেকেই দীর্ঘ লাইন। নারী ও পুরুষের আলাদা আলাদা লাইন এসে ঠেকেছে বাইরের বারান্দায়। ল্যাবে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার অপেক্ষায় আছেন সবাই। আগে যেখানে দৈনিক ১৫০ জনের মতো রোগী ল্যাবে আসতেন পরীক্ষা করাতে, সেখানে গত ছয় মাস ধরে দৈনিক পরীক্ষা করাচ্ছেন প্রায় সাড়ে ৫০০ রোগী।

আগে চট্টগ্রাম মেডিকেলের এ প্যাথলজি ল্যাবের কথা জানতেন না রোগীরা। তাই দালালের খপ্পড়ে পড়ে বাইরের ল্যাবগুলোতে পরীক্ষা করাতেন অধিক মূল্যে। এখন বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখিয়েই স্বল্পমূল্যে রোগীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছেন মেডিকেলের আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত এ প্যাথলজি ল্যাব থেকে।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সকাল ৯টায় মেডিকেলের ল্যাবে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, আগের তুলনায় রোগীর ভিড় বেশি প্যাথলজি ল্যাবের সামনে। সকাল ৭টা থেকেই এখানে লাইনে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। আবার অনেকে বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখিয়ে স্লিপ নিয়ে আসছেন ল্যাবে পরীক্ষা করানোর জন্য। রোগীদের লাইন বারান্দায় এসে ঠেকেছে।

মেডিকেলের নিচে বহির্বিভাগে ১০ টাকার টিকিট কেটে ফিজিক্যাল মেডিসিনের ডাক্তার দেখিয়েছেন দিলরুবা বেগম। ডাক্তার তাকে কয়েকটি ডায়াগোনস্টিক পরীক্ষা দিয়েছেন। ডাক্তারের দেওয়া সেই স্লিপ নিয়ে দিলরুবা সোজা চলে এসেছেন প্যাথলজি ল্যাবের সামনে। কিছু সময় অপেক্ষা করে তিনি স্যাম্পল দিয়ে ফিরে যান বাড়ি।

দিলরুবা বলেন, ‘গতবার এ পরীক্ষাগুলো বাইরের ল্যাবে করিয়েছিলাম। এবারের তুলনায় তখন কয়েকগুণ বেশি টাকা লেগেছিল।’

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন বিল্ডিংয়ের চারতলায় ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগে এ প্যাথলজি ল্যাব। নতুন বিল্ডিংয়ের নিচতলা থেকে শুরু করে তিনতলা পর্যন্ত বহির্বিভাগে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। আর চতুর্থ তলার এ ল্যাবে অত্যাধুনিক মেশিনে দক্ষ জনবল দিয়েই কর হয় রোগ নির্ণয়। আগে যেখানে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগী পরীক্ষা করাতো এখন সে সংখ্যা ছাড়িয়েছেন ৫০০ এর ওপরে।

আগে দৈনিক পরীক্ষা হতো প্রায় দেড় হাজার। এখন সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। বহির্বিভাগের রোগীদের জন্য ল্যাব দুপুর ১টা পর্যন্ত সেবা দিলেও ইনডোরের রোগীদের জন্য সেবা চালু থাকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এছাড়া ডোপ টেস্টের নমুনা সংগ্রহ হয় বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। একইসঙ্গে টয়লেটের পরিবেশ উন্নত হওয়াতে ইউরিন ও স্টুল স্প্যাম্পল দিতে আসা রোগীদের আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। রোগীদের জন্য আছে লিফটে ওঠার ব্যবস্থাও।

এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেলের প্যাথলজি ল্যাবে আগে দিনে ৫০ জন মোটরচালকের ডোপ টেস্ট করলেও এখন করা হয় ১০০ জনের।

কোন্ পরীক্ষার কত খরচ
চট্টগ্রাম মেডিকেলের ল্যাবে বাড়ছে রোগী, প্রাইভেটের চেয়ে খরচ অনেক কম 1

চট্টগ্রাম মেডিকেলের প্যাথলজি ল্যাবে রক্তের সিবিসি পরীক্ষা করাতে খরচ ২০০ টাকা (বেসরকারি ল্যাবে ৬০০ টাকা), পিবিএফ ১০০ টাকা (বেসরকারিতে ৪০০ টাকা), এমপি ২০ টাকা (বেসরকারিতে ১৫০-২০০ টাকা), আরবিএস ৬০ টাকা (বেসরকারিতে ১৮০-২০০ টাকা), ক্রিয়েটিনিন ৫০ টাকা (বেসরকারিতে ৩০০-৪০০ টাকা), লিপিড প্রোফাইল ৩০০ টাকা (বেসরকারিতে ৬০০-৮০০ টাকা), ইলেক্ট্রোলাইট ২৫০ টাকা (বেসরকারিতে ৬০০-৮০০ টাকা), এসজিপিটি ৭০ টাকা (বেসরকারিতে ৩০০- ৪০০ টাকা), ইউরিন আর/ই ২০ টাকা (বেসরকারিতে ১৮০-২৫০ টাকা), স্টুল আর/ই ২০ টাকা (বেসরকারিতে ১৫০-২০০ টাকা), ইউরিক এসিড ১০০ টাকা (বেসরকারিতে ২৫০-৩০০ টাকা) এবং বিলিরুবিন ৬০ টাকা (বেসরকারিতে ২৫০ টাকা)।

এছাড়া মেডিকেলের ল্যাবে এসজিপিটি পরীক্ষা করাতে খরচ পড়ে ৭০ টাকা, পিসি ৫০ টাকা, এএসও টাইটর ১০০ টাকা, বিটি.সিটি ৩০ টাকা, টিজি ৫০ টাকা, এইচবি% ৩০ টাকা, কোলেস্টেরল ৫০ টাকা, এফবিএস ৬০ টাকা, আরএ ৬০ টাকা, এস ক্যালসিয়াম ৮০ টাকা, ওজিটিটি ১২০ টাকা, অ্যালক্যালাইন ফসফেট ৭০ টাকা, ইউপিটি ৮০ টাকা, এচবিএ ওয়ান সি ৩০০ টাকা, ডোপ টেস্ট ৯০০ টাকা, ইউরিয়া ৫০ টাকা, সিমেন অ্যানালাইসিস ৫০ টাকা, বিলিরুবিন ৬০ টাকা, এস অ্যালবুমিন ১৫০ টাকা, ইএসআর ৩০ টাকা, ভিডিআরএল ৫০ টাকা এবং সিআরপি পরীক্ষায় খরচ মাত্র ১৫০ টাকা।

প্যাথলজি ল্যাব ইনচার্জ শুভাশীষ বড়ুয়া রাজু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘হাসপাতালের পরিচালক মহোদয়ের নির্দেশ, কোনো রোগী যাতে রোগ নির্ণয়ের সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি থাকায় এখানে শতভাগ সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় হয়। এখানে প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আগে রোগীরা দালালদের খপ্পড়ে পড়ে বেসরকারি ল্যাবে যেত। কিন্তু এখন নিজ উদ্যোগেই এখানে রোগ নির্ণয় করতে আসছেন তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চায়, রোগীরা রোগ নির্ণয়ের জন্য বেসরকারি ল্যাবে না গিয়ে এখানে আসুক। আমাদের লোকবল থেকে কয়েকজন সরেজমিন মনিটরিংয়ে থাকি। রোগীদের টিকিট কাটা, স্যাম্পল দেওয়া, রিপোর্ট ডেলিভারি যাতে সুশৃঙ্খলভাবে হয় সে চেষ্টা করি।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোগীদের ল্যাবমুখি করতে নতুন বিল্ডিংয়ের নিচতলায় বহির্বিভাগে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। লিফটের দরজার দেয়ালে ল্যাবের কোন পরীক্ষা কত টাকা তার চার্ট টাঙিয়েছি। রোগীরা পরীক্ষার দাম জেনেই প্যাথলজি ল্যাবে রোগ নির্ণয় করতে আসছেন।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!