চট্টগ্রাম পিডিবির মেডিকেলে বছরে অযথা খরচ ৩৬ লাখ, ডাক্তাররা ব্যস্ত ব্যক্তিগত চেম্বারে

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চট্টগ্রাম বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের মেডিকেল সেন্টারে ঠিকমতো চিকিৎসা দেন না ডাক্তাররা। দিনের ছয় ঘণ্টা তাদের ডিউটি থাকলেও ব্যক্তিগত চেম্বারে বেশিরভাগ সময় দেন তারা। ফলে মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে অনীহা দেখায় পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। হাসপাতালে চার জন ডাক্তার রয়েছেন, সুরক্ষিত প্যাথলজি ও পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রয়েছে। অথচ হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মচারীদের বেতন এবং আনুষাঙ্গিক ব্যয় বাবদ বছরে প্রায় ৩৬ লাখ খরচ হচ্ছে পিডিবির।

চট্টগ্রাম পিডিবির মেডিকেলে বছরে অযথা খরচ ৩৬ লাখ, ডাক্তাররা ব্যস্ত ব্যক্তিগত চেম্বারে 1

তবে ডাক্তারদের দাবি, রোগী না থাকায় অনেকে হাসপাতালের ভেতরে দরজা বন্ধ করে অলস সময় পার করেন। এখানকার অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আমাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে যান চিকিৎসা নিতে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদের পিডিবি জোন অফিসের নিচ তলায় এই মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জোনের ১৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সেবায় এখানে একজন সিনিয়র মেডিকেল অফিসারসহ ডাক্তার রয়েছেন চার জন। তারা হলেন সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, সহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. সোয়েল আহম্মদ, ডা. তাউস-ই –মোর্শেদ খান, ডা. শামীমা ইসরাত জাহান। এদের মধ্যে ডা. শামীমা হলেন আবদুল্লাহ আল মামুনের স্ত্রী।

এছাড়া রয়েছেন একজন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট, একজন চিকিৎসা সহকারী। রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রয়েছে সুসজ্জিত প্যাথলজি ল্যাব। মেডিকেল সেন্টারে চলতি অর্থবছরে এক লাখ টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে, যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে ২ লাখ টাকার।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডাক্তাররা দিনের বেশিরভাগ সময় বাইরে ব্যক্তিগত চেম্বার করেন। এসব ডাক্তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সন্ধ্যায় চিকিৎসা নিতে যান। ডা. শামীমা ইসরাত জাহান রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিদ্যুৎ ভবনে বসেন। এখানে তিনি দু’ঘণ্টার মতো থাকেন এবং এরপর চলে যান ব্যক্তিগত চেম্বারে। আর সপ্তাহে দু’দিন আগ্রাবাদ সেন্টারে এসে প্যাথলজিক্যাল টেস্টগুলো দেখেন তিনি। প্যাথলজিতে মূলত সপ্তাহের দু’দিন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

ডা. শামীমা ইসরাত জাহান সকালে পাঁচলাইশের শেভরণে নিয়মিত চেম্বার করেন। সেখানেও তিনি প্যাথলজি রিপোর্ট দেখেন।

এ বিষয়ে জানতে ডা. শামীমা ইসরাত জাহানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

এছাড়া ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনও দিনের বেলায় পিডিবির মেডিকেল সেন্টারে না এসে নিজের ব্যক্তিগত চেম্বারে সময় দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, চার ডাক্তারের কেউই ঠিকমত মেডিকেল সেন্টারে আসেন না। ল্যাবে দু’দিন টেস্ট হওয়ার কথা থাকলেও ডা. শামীমা ইসরাত জাহান আসেন না। আর ওষুধপত্র তো আমাদের কপালেই জুটে না।

এদিকে পিডিবির মেডিকেল সেন্টারের সামনে ডা. সোয়েল আহম্মদ ও ডা. তাউস-ই–মোর্শেদ খানের নাম দিয়ে নোটিশ লেখা আছে। সেখানে বলা হয়েছে জ্বর, সর্দি, কাশি রোগী সরাসরি ডাক্তারকে না দেখিয়ে ফোনে যোগাযোগ করতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘করোনার পর থেকেই ডাক্তাররা জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে বেশি ভয়ে থাকে। তাই ফোনে যোগাযেগ করতে বলা হয়েছে।’

পিডিবির মেডিকেল সেন্টারে ইমারজেন্সি ও অবজারভেশন বেডের দেখভালে রয়েছেন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট মো. খোরশেদ আলম, চিকিৎসা সহকারী হিসেবে আছেন বিদ্যুৎ কুমার নাথ। এই দু’জন নিয়মিত দায়িত্ব পালন করলেও বেশিরভাগ সময় কাটে গল্প-গুজবে।

বিদ্যুৎ কুমার নাথ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোগী আসলে আমাদের কাজ থাকে। প্রথমে প্রেসার চেক করানো হয়, সেটি আমিই করে থাকি। কিছু আনুষঙ্গিক টেস্ট থাকলে আমি করতে বলে দিই।’

মেডিকেল সেন্টারটি রোগীবান্ধব না হওয়ার কারণ কী— এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা সবসময় ভালো সেবা দেওয়ারই চেষ্টা করি। কিন্তু পিডিবি স্টাফরা এখানে আমাকে না দেখালেও আমার চেম্বারে ঠিকই দেখাতে যান। আমাকে মাঝে মাঝে পিডিবির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ক্লাস নিতে যেতে হয়। তাই মেডিকেল সেন্টারে সময় দিতে পারি না। তবে অন্য ডাক্তাররা সেন্টারে আসলেও রোগী না থাকায় দরজা বন্ধ করে ভেতরে রেস্ট নিয়ে থাকেন। ওষুধ দরকার পড়লে রোগীদের অবশ্যই দেওয়া হয়।’

চট্টগ্রাম পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘পিডিবির স্টাফদের উন্নত চিকিৎসার জন্যই এ মেডিকেল সেন্টারটি স্থাপন করা হয়েছে। এখান থেকে রোগীরা কম মূল্যে প্যাথলজি সেবা পেয়ে থাকেন। তবে মেডিকেল সেন্টারে ডাক্তারদের অনুপস্থিতির কারণে রোগী সেবা নিতে যায় না—বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আসলে কোনো স্টাফকে তো জোর করে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া যায় না, সেটা তার ইচ্ছের ব্যাপার। তবে সেবা ভালো হলে রোগী যাবে না কেন?’

বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে এক সপ্তাহ স্ট্রিকলি অবজারভেশন করবেন বলে জানান চট্টগ্রাম পিডিবির এই প্রধান প্রকৌশলী।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!