চট্টগ্রামে ৩০ ভাগ করোনাজয়ী ভুগছেন ৪ জটিলতায়

করোনামুক্তদের ফলোআপ হচ্ছে বিশেষ আউটডোরে

চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণের একেবারে শুরুর দিকে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ডা. মীর্জা নুরুল করিম। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তিনি। ওই সময় মৃদু উপসর্গে ভোগা এই চিকিৎসক নিজ বাসায় চিকিৎসা নিয়ে ১৪ দিনের মাথায় করোনামুক্ত হন। তবে এক মাস পর আবারও জ্বর-কাশিতে ভুগতে শুরু করেন তিনি। যখন করোনা পজিটিভ ছিলেন, ওই সময়ের চেয়ে দ্বিতীয় দফায় অসুস্থ হয়ে আরও বেশি শারীরিক জটিলতায় ভোগেন তিনি। এই সময়ে কিডনিতেও বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয় এই চিকিৎসকের। পাশাপাশি ক্লান্তি আর অবসাদগ্রস্থতাও বেড়ে যায় অনেকাংশে।

তবে করোনামুক্ত হওয়ার একমাস পর আবার করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তিনি সে সময়ে আবারও করোনার নমুনা পরীক্ষা করান। যার ফলাফল নেগেটিভই আসে। এক মাস পর থেকে এখন পর্যন্ত এসব জটিলতায় ভুগছেন এই চিকিৎসক। গত এক সপ্তাহে আবারও জ্বর কাশি বেড়েছে ডা. মীর্জা নুরুল করিমের। এটিকে ‘পোস্ট করোনা কমপ্লিকেশন’ বা করোনা-উত্তর জটিলতা বলে ধারণা করলেও আবারও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কিনা সেটি যাচাই করতে সোমবার (২৪ আগস্ট) নতুন করে নমুনা পরীক্ষা করাবেন তিনি।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে ডা. মীর্জা নুরুল করিম বলেন, ‘২৭ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম আমি। খুব বেশি উপসর্গ না থাকায় বাসায় থেকে চিকিৎসা নিই। ১৪ দিনের মাথায় ১২ মে করোনা নেগেটিভ ফলাফল আসে আমার। এর কিছুদিন পরেই বেশ কিছু শারীরিক জটিলতায় ভুগতে শুরু করি আমি। আগের মত স্ট্যামিনা পাচ্ছি না কাজ করার। বেশ কয়েকবার জ্বর কাশি হলো। আবার কিডনিতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। এজন্য আমাকে চারটা হাই পাওয়ার এন্টিবায়োটিক ইনজেকশনও দিতে হয়েছে।’

তবে করোনামুক্ত হওয়ার পর নিয়মিতভাবেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিয়ে গেছেন এই চিকিৎসক। এই ওয়ার্ডের যারা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরছেন তাদের ফলোআপ চিকিৎসার বিষয়ে ডা. মীর্জা করিম বলেন, ‘করোনামুক্ত হলেও অনেকেই আগের মত সুস্থ হচ্ছেন না। নানা রকম সমস্যায় ভুগছেন অনেকে। এই সংখ্যাটা ৩০ শতাংশের মত। এরা জ্বর কাশিতে ভুগছেন, শ্বাসকষ্টেও ভুগছেন কেউ কেউ। অনেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। তাদের মধ্যে যেসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে আমরা সেই অনুযায়ী বিভিন্ন ওষুধ ও পরামর্শ দিচ্ছি।’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডের ফোকাল পার্সন ও সিনিয়র মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব বলেন, ‘করোনাজয়ীদের কাছ থেকে ক্লান্তি বা অবসাদ, শ্বাসকষ্ট ও মানসিক সমস্যায় ভোগার কথাই বেশি জানা গেছে। বিশেষ করে যাদের হাই ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে তারা ফুসফুসের জটিলতায়ও ভুগছেন।’

ডা. আব্দুর রব বলেন, ‘দুদিন আগে এক মহিলা এসেছেন যার কাশির সাথে রক্ত যাচ্ছে। অনেকে বলছেন তারা আগের ফিটনেস আর ফিরে পাচ্ছেন না। যেমন আগে ৪-৫ তলা অনায়াসে উঠতে পারতেন— এমন অনেকেই বলছেন যে এক তলা উপরে উঠতেই হাঁপিয়ে যাচ্ছেন তারা। অনেক রোগীই যোগাযোগ করছেন। আমরাও তাদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনমতো পরামর্শ দিচ্ছি। দেখা যাচ্ছে করোনামুক্ত হলেও পুরোপুরি সুস্থ বলতে যা বোঝায় অনেকেই তা হননি। এই সংখ্যাটা এখন পর্যন্ত মোটামুটি ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মত।’

জেনারেল হাসপাতালের এই সিনিয়র কনসালটেন্ট বলেন, ‘যেহেতু এই রোগটা নতুন, সেহেতু এর পরবর্তী ধাপগুলো কেমন হবে সে সম্পর্কে আমাদের এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা নেই। তবে এটি নিশ্চিত— পোস্ট করোনা কমপ্লিকেশনে ভুগছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী। কাজেই যারা সুস্থ হচ্ছেন, তাদেরকে চিকিৎসকের সংস্পর্শে বা ফলোআপের আওতায় থাকতে হবে। করোনামুক্ত মানুষের ফলোআপ চিকিৎসার জন্য আমরা জেনারেল হাসপাতালের ১০২ নম্বর রুমে একটা আউটডোর খুলেছি। সেখানে নিয়মিতভাবে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। করোনামুক্ত হয়েও যারা সুস্থ নন, তারা যেকোন সমস্যা নিয়ে এখানে আসতে পারবেন।’

তবে এক্ষেত্রে করোনাআক্রান্ত যারা সুস্থ হচ্ছেন তাদের বিশ্রামে থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. জামাল মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগের মধ্যেই ক্লান্তি আর অবসাদগ্রস্থতা দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে রেস্টে থেকে ধাপে ধাপে নিয়মিত জীবনে ফেরার চেষ্টা করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। অর্থাৎ করোনামুক্ত হয়ে কেউ যদি এক দিনেই আগের মত কাজ শুরু করতে চায়, তাহলে তার জন্য সেটা কঠিন হবে। তাদের যতটুকু সম্ভব রেস্টে থাকতে হবে। আর ধাপে ধাপে আগের লাইফস্টাইলে ফেরার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া যাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের আমরা কিছু ব্যায়াম করার পরামর্শও দিচ্ছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!