চট্টগ্রামে ১২৫৭ বেডের ৯ হাসপাতালে করোনারোগী নেই একজনও!

মঙ্গলবার পর্যন্ত সিট খালি ৬৯৪, তবু তাড়াচ্ছে রোগী

চট্টগ্রামের নয়টি বেসরকারি হাসপাতালে বেড আছে এক হাজার ২৫৭টি, অথচ সেখানে ঠাঁই পাননি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজন রোগীও! দিন দিন চট্টগ্রামে বাড়ছে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা— যাদের অনেকেই শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ধর্না দিচ্ছেন একটি সিটের আশা নিয়ে। আবার চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়। এই যখন পরিস্থিতি, চট্টগ্রামের নয়টি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত একজন রোগীও নেই— এমন তথ্য রীতিমতো বিস্ময়কর। অনেক হাসপাতালের বিরুদ্ধেই সরাসরি উঠেছে অভিযোগের আঙ্গুল— জ্বর-সর্দিকাশির সাধারণ লক্ষণ থাকলেও তারা রোগী তাড়িয়ে দিচ্ছে। তদবির ও চাপ থাকলেই শুধু কিছু রোগী ভর্তি নেয়— তাও হাতেগোনা।

এমন অবস্থায় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চট্টগ্রামের অন্তত নয়টি বেসরকারি হাসপাতালে একজন করোনা রোগীও বর্তমানে ভর্তি নেই। মঙ্গলবার (২৩ জুন) সকাল পর্যন্ত সেখানে জ্বর-শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গের রোগী ভর্তি আছেন মাত্র ১০৫ জন। অথচ এই নয়টি হাসপাতালে মোট বেডের সংখ্যা এক হাজার ২৫৭টি। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৩ জুন) সকাল পর্যন্ত খালি ছিল ৬৯৪টি বেড। অথচ শুধু একটি হাসপাতাল ছাড়া বাকি সব হাসপাতালই দাবি করেছে সর্বশেষ মঙ্গলবারও তারা কোনো রোগী ফিরিয়ে দেয়নি। এর মধ্যে শুধু সিএসটিসি হাসপাতাল স্বীকার করেছে, তিনজন রোগী ওইদিন তারা ফেরত দিয়েছে তারা।

ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে বেড খালি ৩২টি
খুলশীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে বতর্মানে চিকিৎসাধীন সাধারণ রোগী আছেন ১৮ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তো দূরের কথা, করোনার উপসর্গ থাকা কোনো রোগীও এই হাসপাতালে নেই। এই হাসপাতালে মোট আইসিইউ বেড আছে ১৪টি। এর মধ্যে সবগুলোতেই রোগী রয়েছে বলে দাবি হাসপাতালটির। করোনা রোগীদের জন্য আলাদা ১৪টি আইসিইউ বেড তৈরি করা হচ্ছে বলেও হাসপাতালটি জানিয়েছে। এখানে হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা আছে ৬টি। এই হাসপাতালে মোট বেডের সংখ্যা ৫০টি। মঙ্গলবার (২৪ জুন) পর্যন্ত সেখানে খালি বেড ছিল ৩২টি। ওইদিন হাসপাতালটি কোনো রোগী ফিরিয়ে দেয়নি বলে দাবি করেছে।

রয়েল হসপিটালে খালি বেড ১৫টি
ওআর নিজাম রোডের রয়েল হসপিটালে বতর্মানে চিকিৎসাধীন সাধারণ রোগী আছেন ১৭ জন। অন্যদিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন ১৩ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী সেখানে ভর্তি করা হয়নি। এই হাসপাতালে মোট আইসিইউ বেড আছে পাঁচটি। সবগুলো আইসিইউ বেডই খালি রয়েছে। চিকিৎসকের অসুস্থতা ও চিকিৎসক-স্বল্পতার কারণে আইসিইউ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওই হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের কোনো হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা নেই। রয়েল হাসপাতালে মোট বেডের সংখ্যা ৪৫টি। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেখানে খালি বেডের সংখ্যা ১৫টি। ওইদিন হাসপাতালটি কোনো রোগী ফেরত দেয়নি বলে দাবি করেছে।

এশিয়ান হাসপাতালে খালি বেড ১৩টি
ওআর নিজাম রোডের এশিয়ান স্পেশালাইজড হাসপাতালে বতর্মানে চিকিৎসাধীন সাধারণ রোগী আছেন ৯ জন। অন্যদিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন ১০ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সেখানে ভর্তি করা হয়নি। এই হাসপাতালে কোনো আইসিইউ বেড কিংবা হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা নেই। মোট বেডের সংখ্যা ৪৫টি। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেখানে খালি বেড ছিল ১৩টি। ওইদিন হাসপাতালটি কোনো রোগী ফেরত দেয়নি বলে দাবি করেছে।

সিএসটিসি হাসপাতালে খালি বেড ৬টি
পাঁচলাইশের সিএসটিসি হাসপাতালে বতর্মানে চিকিৎসাধীন সাধারণ রোগী আছেন ১১ জন। অন্যদিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন ১০ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী সেখানে ভর্তি করা হয়নি। এই হাসপাতালে মোট আইসিইউ বেড আছে ৩টি। এর সবগুলোতেই রোগী রয়েছে বলে দাবি হাসপাতালটির। তাদের কোনো হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা নেই। এই হাসপাতালে মোট বেডের সংখ্যা ৩০টি। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেখানে খালি বেড ছিল ৬টি। ওইদিন হাসপাতালটি মাত্র তিনজন রোগী ফেরত দিয়েছে বলে স্বীকার করেছে।

মেরিন সিটি মেডিকেল হাসপাতালে খালি বেড ২০৯টি
বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বতর্মানে চিকিৎসাধীন সাধারণ রোগী আছেন ৩৪ জন। অন্যদিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন ৭ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী সেখানে ভর্তি নেই। এখানে মোট আইসিইউ বেড বা হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা সম্পর্কিত তথ্য মেলেনি। হাসপাতালটিতে মোট বেডের সংখ্যা ২৫০টি। মঙ্গলবার পর্যন্ত সেখানে ২০৯টি বেড খালি আছে বলে জানিয়ে ওই হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, মঙ্গলবার তারা কোনো রোগী ফিরিয়ে দেয়নি।

সাউদার্ণ মেডিকেলে ২৩৬টি বেড খালি
খুলশীর সাউদার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বতর্মানে চিকিৎসাধীন সাধারণ রোগী আছেন ১৪ জন। অন্যদিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন ২ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী সেখানে ভর্তি নেই। এখানে মোট আইসিইউ বেড বা হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা সম্পর্কিত তথ্য মেলেনি। হাসপাতালটিতে মোট বেডের সংখ্যা ২৫০টি। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেখানে ২৩৬টি বেড খালি আছে বলে জানিয়েছে ওই হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ। তবে ওইদিন হাসপাতালটি কোনো রোগী ফিরিয়ে দেয়নি বলে দাবি করেছে।

ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেলে খালি বেড ১০৩টি
চান্দগাঁওয়ের ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বতর্মানে চিকিৎসাধীন সাধারণ রোগী আছেন ১৪৭ জন। অন্যদিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন ৬৩ জন। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী সেখানে ভর্তি নেই। এখানে কোনো আইসিইউ বেড বা হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা নেই। হাসপাতালটিতে মোট বেডের সংখ্যা ২৫০টি। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেখানে ১০৩টি বেড খালি আছে বলে জানিয়েছে ওই হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ। ওইদিন হাসপাতালটি কোনো রোগী ফিরিয়ে দেয়নি বলে দাবি করেছে।

বিজিসি ট্রাস্ট হাসপাতালে ২৮৯টি বেডই খালি
চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বতর্মানে চিকিৎসাধীন সাধারণ রোগী আছেন ১০ জন। অন্যদিকে করোনার উপসর্গ কিংবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী সেখানে ভর্তি নেই। এখানে কোনো আইসিইউ বেড বা হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলাও নেই। হাসপাতালটিতে মোট বেডের সংখ্যা ৩০০টি। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেখানে ২৮৯টি বেড খালি আছে বলে জানিয়ে ওই হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে ওইদিন তারা কোনো রোগী ফিরিয়ে দেয়নি।

শেভরণ হাসপাতালে খালি বেড ২৭টি
ওআর নিজাম রোডের শেভরণ হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন সাধারণ রোগী আছেন ১০ জন। অন্যদিকে করোনার উপসর্গ কিংবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী সেখানে ভর্তি নেই। এখানে কোনো আইসিইউ বেড বা হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলাও নেই। হাসপাতালটিতে মোট বেডের সংখ্যা ৩৭টি। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেখানে ২৭টি বেড খালি আছে বলে জানিয়েছে ওই হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ। ওইদিন হাসপাতালটি কোনো রোগী ফিরিয়ে দেয়নি বলে দাবি করেছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!