চট্টগ্রামে সেই আড়ংয়েই এখন ক্রেতার মনে সংক্রমণের ভয়

শুরুতে হুড়োহুড়ি। সামাজিক দূরত্ব না মেনে একপর্যায়ে রীতিমতো ভাইরাল ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল হাউস আড়ংয়ের চট্টগ্রাম আউটলেট। কিন্তু যখনই করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা হুড়োহুড়ি করে বাড়তে লাগলো, ক্রেতাদের আগ্রহ দ্রুতই মিইয়ে এসেছে।

এদিকে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘আড়ং’ সারাদেশের ২১টি আউটলেটের মধ্যে ১৭টি আউটলেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। বিপরীতে নিম্ন আয়ের মানুষের মার্কেটগুলো বন্ধ স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়িতে। বুধবার (১৩ মে) আড়ংয়ে যখন বড়লোক ক্রেতাদের হুড়োহুড়ি চলছিল, সেদিনই দুপুরে নন্দনকানন, রাইফেল ক্লাব এবং মোসাফিরখানা মার্কেটে ‘ছোটলোকের’ শতাধিক দোকানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় তালা দিয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার (১৫ মে) চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদ সিডিএ এভিনিউতে আড়ংয়ের চট্টগ্রাম আউটলেটে ক্রেতা দেখা গেছে খুবই কম। স্বাস্থ্যবিধি মানায় অপর্যাপ্ততার কারণে সংক্রমণের ভয়ে অনেককে কেনাকাটা না করেই ঘরে ফিরে যেতে দেখা গেছে অনেকে।

দুপুরে যে কয়েকজন ক্রেতাকে ভেতরে ঢুকতে দেখা গেছে, বেরিয়ে এসে তাদের একজন বললেন, শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না প্রবেশপথে। মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে না দেওয়ার কথা থাকলেও সেভাবে কাউকে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখেননি। ৩ ফুট দূরত্ব রাখার বিষয়টিও সেখানে লক্ষ্য করা যায়নি।

তানজিলা নামের এক ক্রেতা বলেছেন, বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছিলাম। এখানে সবাই মাস্ক ব্যবহার করছে না। সংক্রমণ প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধিও সেখানে ঠিকঠাক অনুসরণ হচ্ছে না। এখন কেনাকাটা স্বাস্থ্যের জন্য সুখকর হবে না।

এর আগে বুধবার (১৩ মে) আড়ংয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভিড় লক্ষ্য করা গিয়েছিল। অনলাইনে বুকিং দেওয়া ও মুঠোফোনে পাঠানো ‘ক্ষুদেবার্তা’ দেখিয়ে প্রবেশের নিয়মটি অনুসরণ করা হয়নি। তাপমাত্রা মেপে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়ার কথা থাকলেও সেটিও করা হয়নি।

আড়ংয়ের অব্যবস্থাপনাকে দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে আলবিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান রাইসুল উদ্দিন সৈকত বলেন, ‌‘দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড আড়ং। আড়ংয়ের এমন অব্যবস্থাপনা দুঃখজনক। করোনা দুর্যোগে আমরা আড়ংয়ের কাছে আরো দায়িত্বশীলতা আশা করি। আড়ংয়ের ক্রেতারাও সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির। তাদেরই সবচেয়ে বেশি সচেতন হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা গেলো কারও মুখে মাস্ক নেই, সামাজিক দূরত্বও কেউ মানছিলেন না। করোনার বিস্তার রোধে যার যার অবস্থান থেকে সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত।’

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সিএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর বিভাগ) বিজয় বসাক, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিজানুর রহমান, সিনিয়র সহকারী কমিশনার দেবদূত মজুমদারসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে আড়ংয়ের আউটলেট পরিদর্শনে যান। তারা সিএমপির নিদের্শনা পালনের ক্ষেত্রে আড়ংয়ের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করতে নির্দেশ দেন।

শুক্রবার (১৫ মে) স্বাস্থ্যবিধি তদারকি করতে আসা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে করোনা ভীতি থেকে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। আগের মতো হুমড়ি খেয়ে পড়ছে না। ভিড় অনেক কমে গেছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আড়ংয়ে ঈদের বাজারের আমেজ ছিল না।’

উল্লেখ্য, মার্কেট খুলতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ নির্দেশনার সাথে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) আরও ৬টি নিদের্শনা ছিল। তদারকির দায়িত্ব পড়েছে সংশ্লিষ্ট থানার। স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি ও ভিড় ব্যবস্থাপনা দুরূহ বলেই ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রামের মার্কেট-শপিংমল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!