চট্টগ্রামে ভাইরাল জ্বরে কাবু শিশুরা, দিনে ৬০-৭০ জন যাচ্ছে হাসপাতালে

নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ

হঠাৎ করে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম নগরীতে বেড়েছে জ্বরের প্রকোপ। সারাদিন সুস্থ শিশুরা রাতে ঘুমাতে গেলেই গা গরম হয়ে জ্বর আসছে। সেই জ্বর কারও কারও তিন-চারদিনে সেরে গেলেও সঙ্গে অনেকের দেখা দিচ্ছে পেট ব্যথা, ডায়রিয়াসহ নানা অসুখ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন জ্বরে আক্রান্ত শিশু রোগী আসছে চিকিৎসা নিতে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এটাকে ‘ভাইরাল ফিভার’ বললেও শিশুর অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শও দিচ্ছেন। তবে নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিতেও বলছেন তারা।

এছাড়া চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন শিশু ভর্তি হচ্ছে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে। যাদের মধ্যে ছয় থেকে ১০ বছরের শিশুর সংখ্যা বেশি।

জানা গেছে, সারাদিন সুস্থ থাকলেও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বাচ্চাদের গা গরম হয়ে জ্বর আসছে। ভোর থেকে বাড়তে থাকে তাপমাত্রা, যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ১০৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা। অনেক শিশুর জ্বরের সঙ্গে দেখা দিচ্ছে পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা ও বমি। হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে অভিভাবকরা ছুটছেন হাসপাতালে। অনেকে যাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারেও।

এছাড়া অনেক শিশুর জ্বর একবার কমে গেলেও দু-তিনদিন পর আবারও আক্রান্ত হচ্ছে। তবে শিশুর যদি করোনা বা ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকে তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

নগরীর হালিশহরের বাসিন্দা রেহানা বেগমের দুই ছেলেই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে বড় ছেলের জ্বর সেরে গেলেও তিন বছর বয়সী ছোট ছেলের কমছে না। দু’দিন পার হয়ে গেলেও তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি থাকছে। বাচ্চাকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে দেখিয়েছেন তিনি।

রেহানা বেগম বলেন, ‘এখন সময়টাই অন্যরকম। খেলাধুলা, খাওয়া-দাওয়া করে সুস্থ বাচ্চা রাতে ঘুমিয়ে গেল, সকাল থেকে দেখি গা গরম। দুপুরের আগে থেকে জ্বর ওঠে গেল ১০৪ ডিগ্রি। কী যে দুশ্চিন্তা হচ্ছে, বলে বোঝানো যাবে না।’

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বাসনা মুহুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জ্বর আক্রান্ত শিশুদের জন্য যত্নটাই আসল। ঋতু পরিবর্তনের এ সময় শিশুরা ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত হয়। এখন আবহাওয়া সারাদিন গরম থাকলেও রাতের শেষের দিকে হঠাৎ ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। যা শিশুরা শরীরে সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘এ সময় শিশুকে ঘুমানোর সময় সুতির জামা পড়িয়ে রাখতে হবে। ঘরে আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শিশুকে রাতে মোটা কাপড়ে জড়িয়ে রাখলে ঘামবে। আর এ ঘাম থেকেই শিশুর ঠাণ্ডা লেগে জ্বর আসবে। জ্বর আক্রান্ত হলে প্যারাসিটামল সিরাপ দেওয়া হয়, সেটাই খাওয়াতে হবে। তরল খাবার খাওয়াতে হবে, পানি বেশি করে পান করাতে হবে।’

ধুলোবালি থেকে শিশুকে মুক্ত রাখতে হবে। আর নিউমোনিয়ায় শ্বাসকষ্ট হলে শিশুকে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিতে অথবা হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন বাসনা মুহুরী।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের শিশু বহির্বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেলের শিশু বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১৭০ থেকে ১৮০ জন রোগী আসছে। এর মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ জন  জ্বরের রোগী থাকছে। আমরা এ জ্বরকে ভাইরাল ফিভারই মনে করছি, জ্বরের সঙ্গে সর্দি থাকছে। প্রথম দু’দিন তাপমাত্রা থাকছে বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুও আমরা পাচ্ছি। আসলে ভ্যাপসা গরমের পর বৃষ্টির শীতলতায় শিশুদের শরীরের তাপমাত্রায় তারতম্য ঘটাচ্ছে। অনেক সময় জ্বর ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তবে দু’দিন পর থেকে সচরাচর সেই তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। আমরা জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের প্যারাসিটামল ওষুধ ৬ ঘণ্টা পর পর খাওয়াতে পরামর্শ দিচ্ছি। আর নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিচ্ছি।’

ডা. সাইফুল বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অনেক রোগীও আসছে। তবে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। তবে এখন গরমের শেষ, শীতের শুরু। এই ঋতু বদলের সময় ভাইরাল ফিভার ঘরে ঘরে দেখা দেয়। জ্বরের পর কয়েকদিন শিশুদের রোদ অথবা ধুলাবালিতে বের না করাই ভালো।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!