চট্টগ্রামে ‘বডি ওর্ন’ ক্যামেরা বন্ধ রেখে পুলিশের কৌশলী ঘুষ বাণিজ্য

চট্টগ্রাম নগরীতে আধুনিক পুলিশিংয়ের অংশ হিসেবে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’ চালু করা হলেও অনৈতিক কাজে জড়ানোর আগে কিছু কিছু পুলিশ সদস্য সেই ক্যামেরা বন্ধ করে রাখছেন। ক্যামেরা বন্ধ রেখে ঘুষ নেওয়ার এমন কিছু ভিডিও ফুটেজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে।

গত বছরের ২৪ জুলাই আধুনিক পুলিশিংয়ের অংশ হিসেবে ও যে কোনো ধরনের অপরাধ দমনে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) উদ্যোগে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’ লাগানো হয় পুলিশ সদস্যদের শরীরে। ওই ক্যামেরার মাধ্যমে অডিও, ভিডিও ও ছবি ধারণ করা যায়।

ওই সময় পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, যে কোনো অপরাধ পুলিশ সদস্যদের চোখ এড়িয়ে গেলেও সব রেকর্ড থাকবে এই বিশেষায়িত ক্যামেরায়। পাশাপাশি জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যেই লোকেশন শনাক্ত করা যায়। তাছাড়া কর্তব্যরত পুলিশের কর্মকাণ্ডও এসব ক্যামেরায় ধারণ হয়ে থাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।

তবে বিশেষায়িত এই ক্যামেরা নিয়েও কিছু কিছু পুলিশ সদস্য অনৈতিকতার আশ্রয় নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ডিউটি তদারকি ও অপরাধ দমনের উদ্দেশ্যে লাগানো হলেও বডি ক্যামেরা বন্ধ রেখে অনেক পুলিশ সদস্যই করছেন ঘুষ নেওয়ার মত অপরাধ।

গত মঙ্গলবার (২১ জুন) রাত পৌনে ৮টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী মোড়ে ১ নম্বর বাসে যাত্রী ওঠানোর সময় হঠাৎ করে নবীর নামের এক সার্জেন্ট এসে গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে বলেন। হাতে থাকা ডিজিটাল পজ মেশিন চালু করে মামলা দেওয়ার বাহানা করেন ওই সার্জেন্ট। এর একপর্যায়ে তিনি দেখতে পান গাড়ির সঠিক কাগজপত্র নেই। তার কিছুক্ষণ পরেই বডিতে লাগানো ক্যামেরা বন্ধ করে গাড়ির হেলপারের সাথে কথা বলার জন্য তাকে এককোণায় নিয়ে যান ওই সার্জেন্ট।

এমন অবস্থায় বাসে থাকা যাত্রীদের নেমে অন্য বাসে করে চলে যেতে বলেন ১ নম্বর রুটের ওই বাসচালক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাসচালক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগে পুলিশের শরীরে ক্যামেরা লাগানো ছিল না, সেই সময় যখন-তখন টাকা দাবি করত। না হলে মামলার ভয় দেখাত। কিন্তু এখন ক্যামেরা শরীরের লাগানোর পর আগে ক্যামেরা বন্ধ করে তারপর আমাদের কাছে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না চাইলে ক্যামেরা চালু করে গাড়ির নম্বরসহ ভিডিও রেকর্ডের প্রস্তুতি নিতে থাকলে তখন মামলার ভয়ে আমরা টাকা দিয়ে দিই।’

ওই বাসে থাকা একজন যাত্রী বলেন, ‘অফিস শেষ করে বাসায় যাওয়ার জন্য ১ নম্বর রুটের বাসে উঠি। তার কিছুক্ষণ পর দেখি একজন সার্জেন্ট গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। গাড়ির হেলপার চেষ্টা করছে ওই সার্জেন্টকে বোঝাতে— যাতে গাড়িটা ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্ত সার্জেন্ট গাড়ি না ছেড়ে উল্টো হেলপারকে এককোণায় নিয়ে কী যেন বলার চেষ্টা করছে। এরপর বাসচালক আমাদের নেমে অন্য বাসে করে চলে যেতে বলেন। আমরা দেখতে পাই কোতোয়ালি মোড় পুলিশ বক্সের সার্জেন্ট বাসচালক ও হেলপারকে নিয়ে গেছে।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে ডিউটিরত সার্জেন্ট নবীর সাথে কথা বললে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটা করা হয়েছে তা অসত্য। এমন কোন ঘটনা ঘটে নাই।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!