চট্টগ্রামের হাসপাতালে হঠাৎ অক্সিজেনের চাহিদা দ্বিগুণ, এক জেনারেলেই লাগছে সাড়ে ৩ হাজার লিটার

চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে

চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসার প্রধান কেন্দ্র জেনারেল হাসপাতালে আগে যেখানে প্রতিদিন লাগতো দেড় হাজার লিটার অক্সিজেন, সেখানে এখন প্রতিদিনই লাগছে সাড়ে ৩ হাজার লিটার অক্সিজেন। চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতি হঠাৎ অবনতি হওয়ার পর গত এক সপ্তাহে হঠাৎ করেই অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে গেল দ্বিগুণেরও বেশি। এই অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক চাপ। পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে অক্সিজেনের খোঁজে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ছোটাছুটিও বেড়েছে অনেক বেশি।

চট্টগ্রামের বেশিরভাগই হাসপাতালেই মেডিকেল গ্রেডের অক্সিজেন সরবরাহ করে মোটামুটি তিনটি প্রতিষ্ঠান মিলে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো নগরীর সাগরিকায় সরকারি-বেসরকারি যৌথ মালিকানার বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড, নগরীর কালুরঘাটের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড এবং নারায়ণগঞ্জভিত্তিক ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেড।

করোনার জন্য ‘ডেডিকেটেড’ চট্টগ্রামের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে সেবা দেওয়া জেনারেল হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করে স্পেকট্রা অক্সিজেন। এই হাসপাতালটিতে দুদিন আগেও অক্সিজেন নেওয়া হতো দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার লিটার। গত মঙ্গলবার (৬ জুলাই) রাতে হঠাৎ একলাফে ৫ হাজার লিটার অক্সিজেন নেয় হাসপাতালটি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের আগে দৈনিক দেড় হাজার লিটার অক্সিজেন লাগতো। এখন ডেইলি সাড়ে তিন হাজার লিটার অক্সিজেন লাগছে। স্বাভাবিকভাবে আমরা এটা নিয়ে একটা দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় অক্সিজেনের জন্য কল দিলে আসতেও সময় লাগে। যেমন মঙ্গলবার অক্সিজেন রিফিল হয়েছে রাত ১২টায়।’

শুধু জেনারেল হাসপাতাল নয়, চট্টগ্রামের সব হাসপাতালেই অক্সিজেনের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে গত এক সপ্তাহে।

চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল পার্কভিউতে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করে মেঘনা অক্সিজেন লিমিটেড। মেঘনা অক্সিজেন আবার অক্সিজেন নেয় ইসলাম অক্সিজেনের কাছ থেকে। চট্টগ্রামে অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা দ্বিগুণের মত বেড়ে গেছে জানিয়ে মেঘনা অক্সিজেনের পরিচালক তানভীর আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমাদের দৈনিক ১০০টা সিলিন্ডার লাগতো, আর এখন সেখানে আমাদের লাগছে ১৮০ টি সিলিন্ডার।’

চট্টগ্রামের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল অক্সিজেন সিলিন্ডার নেয় লিন্ডে বাংলাদেশের কাছ থেকে। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সকালে অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন হলেও লিন্ডের কাছে সিলিন্ডার না থাকায় অন্যান্য সরবরাহকারীদের সাথে যোগাযোগ করে হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ।

সিলিন্ডার অক্সিজেনের ক্ষেত্রে এমন ঘটনার বিষয়ে লিন্ডের জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) সাইকা মাজেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা মূলত অক্সিজেনের সংকট না। এটা হচ্ছে মূলত সিলিন্ডার ম্যানেজমেন্টের সমস্যার কারণে। অক্সিজেন আমাদের কাছে পর্যাপ্তই আছে। কিন্তু সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা সিলিন্ডার দেওয়ার পর সেটা ঢাকায় পাঠিয়ে রিফিল করে আনতে হয়। এখন সিলিন্ডার ব্যবহারের চাপ বাড়ায় এই সিলিন্ডার ম্যানেজমেন্টের সার্কেলটা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও করোনাবিষয়ক স্বাচিপের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক আ ম ম মিনহাজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘সারাদেশেই করোনার একটা পিক টাইম চলছে। চট্টগ্রামে এর মধ্যে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। জেনারেল হাসপাতালে একটাও আইসিইউ খালি নেই। এর বাইরে অনেককে ১৫-২০ লিটার প্রেসারে অক্সিজেন দেওয়া লাগছে। হাসপাতালে ভর্তি বেশিরভাগ রোগীরই অক্সিজেন লাগছে। এভাবে চললে সামনে আরও বড় একটা সংকট আসতে পারে। এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ যেন অক্সিজেন মজুদ করে রাখতে না পারে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। এই মুহূর্তে নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!