চট্টগ্রামের স্কুলশিক্ষক এরশাদুল যেভাবে হয়ে ওঠেন হিযবুত কমান্ডার

স্কুলজীবন থেকে তিনি ছিলেন ছাত্রশিবিরের সক্রিয় কর্মী। কলেজ জীবনেও ছিলেন শিবিরের দায়িত্বশীল। সেই ধারা অব্যাহত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় তিনি একপর্যায়ে সরকার পতনের মাধ্যমে খিলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে যোগ দেন হিযবুত তাহরীরে। পরবর্তীতে সংগঠনটি নিষিদ্ধঘোষিত হলেও সংগঠনের সঙ্গ ছাড়েননি তিনি। দিনে দিনে বরং আরও সক্রিয় থেকে একসময় হয়ে উঠেন হিযবুত তাহরীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার।

শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানা পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে ১৫ কর্মীসহ গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এ তথ্য জানা যায় এরশাদুল আলমের বিষয়ে। তিনি চট্টগ্রামের একটি বিশেষায়িত ইরেজি মাধ্যম স্কুলের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক। নগরীর বায়েজিদে বসবাস করলেও তার গ্রামের বাড়ি বাঁশখালীর গুনাগরী এলাকায়।

জানা গেছে, এরশাদুল আলম পড়তেন চট্টগ্রামের সরকারি মুসলিম হাই স্কুলে। থাকতেন নগরীর কোরবানীগঞ্জ ও নন্দনকাননে। ওই সময়েই জড়িয়ে তিনি পড়েন শিবিরের রাজনীতিতে। পরে সেই ধারা অব্যাহত রাখেন যখন সরকারি সিটি কলেজে পড়তেন তখনও। এরপর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন তখনও শুরুতে শিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে তার এক সহপাঠী জানান, তাকে হিযবুত তাহরীরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকতে দেখা যেতো। ওই সময় তাকে হিযবুতের প্রচারপত্র বিতরণ করতে দেখা যেতো প্রায়ই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষে এরশাদুল আলম গত ৮ বছর ধরে চট্টগ্রামের একটি বিশেষায়িত ইরেজি মাধ্যম স্কুলে বাংলার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। সেখানেও গোপনে তিনি হিযবুত তাহরীরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকতেন।

জানা গেছে, আড়াই বছর আগে একদিন এরশাদুল তার মাকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে যান। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় সাতকানিয়ার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মাহফুজের সঙ্গে। যিনি নোভারটিস ফার্মাসিউটিক্যালসের টেরিটরি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। এরশাদের দাবি, মূলত এই মাহফুজের মাধ্যমেই হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন তিনি। এমনকি এরশাদ গ্রেপ্তার হয়েছেন এই মাহফুজের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসা থেকেই। যদিও বা পুলিশ বলছে, এরশাদকে ইতিমধ্যে পাঁচ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তখনই তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য জানা যাবে। প্রাথমিক তদন্তে এরশাদুল আলমকেই হিযবুত তাহরীরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, চট্টগ্রামে হিযবুতের সক্রিয় সদস্য রয়েছে কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০জন। এদের কমান্ডার এরশাদুল আলম। মূলত বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তাদের দলে ভেড়াচ্ছেন। মূলত তারা বিভিন্ন সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে হিযবুতের কর্মী নিয়োগের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে। সে জন্যই স্কুল-কলেজ লেভেলের শিক্ষার্থীদের মগজধোলাইয়ের মাধ্যমে কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের পতাকা তলে ভেড়াচ্ছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘গ্রেপ্তার হিযবুত কমান্ডারসহ সব কর্মীদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। এছাড়া তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদের গ্রপ্তার করা হবে। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও তাদের সন্তানদের প্রতি নজর রাখতে হবে, যাতে কোচিং বা স্কুল-কলেজের নামে জঙ্গিবাদে জড়াতে না পারে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!