চট্টগ্রামের সেই মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যুদণ্ড, ‘সিরিয়াল ধর্ষক’ আখ্যা আদালতের

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার উপজেলার মহত পাড়া এলাকার আহমদিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসার মাদ্রাসার চার ছাত্রকে ধর্ষণের দায়ে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষককে একজন ‘সিরিয়াল ধর্ষক’ বলে আখ্যায়িত করেন আদালত। এমন সমকামিতার কারণে তার বউ অনেক আগেই তাকে ছেড়ে চলে যান।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ার) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক সিনিয়র জেলা জজ জয়নাল আবেদিন আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডিত মাদ্রাসা শিক্ষকের নাম মো. নাছির উদ্দিন (৩৫)। তিনি কক্সবাজারের চকরিয়া থানার কৈয়ারবিল ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট বেউলায় নুরুল ইসলামের ছেলে।

ঘটনার শুরু যেভাবে

২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর ১০ বছরের এক ছাত্র মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে বাসায় চলে আসে। পালিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে সে জানায়, শিক্ষক নাছির উদ্দিন তাকেসহ চারজনকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে দু’মাস ধরে প্রতিরাতে ধর্ষণ করত।

২০২০ সালের ১২ অক্টোবর রাত ১টার দিকে ওই শিশুকে ঘুম থেকে তুলে নাছির উদ্দিন তার নিজের কক্ষে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। এমনকি ধর্ষণের সময় বাচ্চাদের কান্নাকাটির শব্দ যাতে বাইরে বের না হয় সেজন্য শক্ত করে মুখ চেপে রাখা হতো।

ঘটনার আটদিন পর ২০ অক্টোবর শিশুটির জবানবন্দির ভিত্তিতে ভুক্তভোগী চার ছাত্রের অভিভাবকরা থানায় অভিযোগ দাখিল করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে নাছির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ।

আদালত যা বলছেন

আদালতের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বিশেষ পিপি জিকো বড়ুয়া জানান, আদালত বলেছেন, আসামি একজন সিরিয়াল ধর্ষক’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। ভিকটিমদেরকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদানের পরিবর্তে আসামি নিজেই ধর্ষণের মত ঘৃণিত ও জঘন্য অপরাধে জড়িয়েছেন। দিনের পর দিন ভিকটিমদেরকে ভয়ভীতির মধ্যে রেখে বলাৎকার করেছেন, যা তার স্বাভাবিক অভ্যাস হিসেবে পরিলক্ষিত হয়েছে।

জিকো বড়ুয়া আরও জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।

পাঁচ বছর আগে ছেড়ে যান বউ

মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার আগে বিদেশে ছিলেন নাছির। যদিও সমকামিতায় আগে থেকেই জড়িয়ে ছিলেন তিনি। এলাকাভিত্তিক যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়লে বিদেশ চলে যান নাছির। সেখানেও এসব কাজের কথা জানজানি হলে ২০১৮ সালে সন্তানকে নিয়ে নাছিরের স্ত্রী আলাদা হয়ে যান।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন নাছির। ২০২১ সালের ৪ জুলাই তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি অভিযোগ গঠন করে আদালত তার বিচার শুরুর আদেশ দেয়।

বিচার চলাকালে মোট ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত রোববার নাছিরকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিল।

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!