চট্টগ্রামের মুফতির মুখে আরাকান ও ভারতে জিহাদের ঘোষণা, হেফাজত আমীরের হাতে বাইয়াত

চট্টগ্রামের ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীর (মুফতি ইজহার) ছেলে মুফতি হারুণ বিন ইজহার এবার মিয়ানমারের ‘আরাকান’ ও ‘হিন্দুস্থানে’ (ভারত) জিহাদের শপথ নিয়েছেন। হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী নিজ বাসায় তাকে এ শপথ পাঠ করান। এতে তার সঙ্গে অংশ নেন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। মুফতি হারুণ আফগানফেরত মুজাহিদ বলে জানা গেছে।

শনিবার (৩০ মার্চ) জোহরের নামাজের পর শপথ গ্রহণের একটি ভিডিও ফুটেজ এসেছে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে।

ওই ভিডিওতে মুফতি হারুণ বিন ইজহারকে বলতে শোনা যায়, কওমি মাদ্রাসার লাখ লাখ মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আছে।

এসময় আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে উদ্দেশ্য করে হারুন বলেন, হুজুরের ইন্তেকালের পর যেন আমরা একজন ভাল আমীর পাই, সেজন্য হুজুর দোয়া করে দিবেন। অথবা হুজুর কেউ একজনকে এ দায়িত্ব দিয়ে যাবেন, আমরা তাঁকে মানবো। এছাড়া আমরা হুজুরের নির্দেশনায় সকল কাজ করবো। হুজুর করতে বললে করবো, হুজুর থামতে বললে থেমে যাবো। হুজুর আমাদের ঢাল।

ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর হাত ধরে বাইয়াত গ্রহণ করেন। এসময় মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী জানতে চান কিসের বাইয়াত?

হারুণ ইজহার জানান, আরাকান বিজয়ের ও হিন্দুস্থান পয়দা করার বইয়াত দিবেন।

এসময় কালেমাসহ বিভিন্ন দোয়া পড়ে এসব যুবকদের শপথ পড়ান হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। এসময় হেফাজত নেতা হারুন ইজহারসহ মুফতি ইজহারের নাতিন জামাতা কামরুল ইসলাম হেলাল উদ্দীন পুকুরিয়া, জুনায়েদ বাবুনগরীর খাদেম ইনামুল হক, আসাদুল্লাহ আসাদসহ ১৫জনের বেশি সংখ্যক লোক উপস্থিত ছিলেন।

কে এই মুফতি হারুণ বিন ইজহার
হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মুফতি হারুন ইজহার। তিনি বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীর বড় ছেলে এবং চট্টগ্রামের লালখানবাজারের জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক। তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদ’র (হুজি) ঘনিষ্ঠ সহচর। এছাড়া পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে তার যোগসূত্র রয়েছে।

২০০৯ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম নগরীর লালখানবাজার জমিয়তুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার পেছনের পাহাড় থেকে লস্কর-ই-তৈয়বার সন্দেহভাজন দুই বিদেশি জঙ্গিসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন হারুণ। ঢাকায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে হামলা পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে।

এর আগে রাউজান রাবার বাগান গোদারপাড় এলাকায় পাহাড়ের চূড়ায় হুজির প্রশিক্ষণকালে জিহাদি বই ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করে র‍্যাব। এ ঘটনায় বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। দুটি মামলায় মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীসহ আটজনকে আসামি করা হয়।

২০১৩ সালে লালখানবাজার জমিয়তুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে বড় ধরনের বিস্ফোরণে তিনজনের মৃত্যু হয়। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাজা গ্রেনেডসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ।

২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীবিরোধী বিক্ষোভের সময় হাটহাজারী ও পটিয়া থানায় হারুণের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১১টি মামলা। ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম নগরের লালখানবাজার জমিয়তুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অন্তত ২৮টি মামলায় তিনি দু’বছরের অধিক সময় কারাভোগ করেন। ২০২৩ সালের ২৩ মে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন হারুন ইজহার।

হারুন ইজহার জামিনে থাকলেও তার আগের ভূমিকার কারণে তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!