খুলনার জয় আর রংপুরের হার চলছেই

নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে দাপুটে এক জয়ে শতভাগ সাফল্য নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ধাওয়া করছে খুলনা টাইগার্স। অন্যদিকে রংপুরকে চতুর্থ ম্যাচেও হারের তিক্ত স্বাদ দিয়ে পাঠিয়ে দিল পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে। মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে দারুণ অবস্থানে রয়েছে খুলনা টাইগার্স। এক ঝাঁক দেশি-বিদেশী তারকা নিয়ে গড়া দলটি তিন ম্যাচের তিনটিতেই তুলে নিয়েছে জয়। আর চার ম্যাচের চারটিতেই হেরেছে মোহাম্মদ নবীর রংপুর রেঞ্জার্স। অথচ এই দলের হয়ে খেলছেন দেশ সেরা পেসার মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদরা।

একদিন বিরতি শেষে ছুটির দিন শুক্রবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দিনের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় খুলনা টাইগার্স ও রংপুর রেঞ্জার্স। ঢাকায় দর্শকশূন্য গ্যালারি কিছুটা ভরেছিল শুক্রবারদিন। ১৭ ডিসেম্বর থেকে বিপিএল চট্টগ্রামে এলেও দর্শকশূন্যতা থেকে মুক্তি মিলেনি বিপিএলের। অথচ, অন্যান্যবার ঢাকায় দর্শক না হলেও চট্টগ্রামে কানায় কানায় ভরে যেতো গ্যালারি। কিন্তু এবারের আসরে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রামে। প্রথম দুদিন খাঁ খাঁ করার পর শুক্রবার ছুটির দিনে আবারও ভরপুর হয়ে উঠে দর্শক।

শুক্রবার দিনের প্রথম খেলায় টসে জিতে রংপুরকে ব্যাটিংয়ে পাঠান খুলনার অধিনায়ক মুশফিক। অধিনায়কের সিদ্ধান্তে আস্থা জানিয়ে রংপুরের ব্যাটসম্যানদের খোলসবন্দি করে রাখেন খুলনার পেসাররা। তাতে করে প্রথম ৬ ওভারে রংপুর রেঞ্জার্স করল ২ উইকেটে ৩৯ রান। আর খানিকবাদে নিজেদের পাওয়ার প্লে’তে খুলনা টাইগার্স তুলল ১ উইকেটে ৮৩! ম্যাচের ফয়সালা তো ওখানেই! ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে সেই দাপটই প্রমাণ করল খুলনা টাইগার্স। রংপুর যে উইকেটে অনেক কষ্টে তুলল ১৩৭ রান। সেই রান অনায়াস কায়দায় খুলনা টাইগার্স টপকে গেল ৮ উইকেট ও ৪৫ বল অক্ষত রেখে! বাজে ব্যাটিংয়ের পরে রংপুর যে বোলিংয়েও রং হারা। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে চার ম্যাচের চারটিতে হেরে রংপুর রেঞ্জার্স এখন টুর্নামেন্টের সবচেয়ে অসহায় দল! আর টানা তিন ম্যাচ জয়ী খুলনা টাইগার্স যেন সত্যিকার অর্থেই ‘বাঘ’!

মাত্র ৩১ বলে সাত চার আর জোড়া ছয়ে ৬৬ রান করে দলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন খুলনার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো। ছবি: আজীম অনন
মাত্র ৩১ বলে সাত চার আর জোড়া ছয়ে ৬৬ রান করে দলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন খুলনার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো। ছবি: আজীম অনন

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ১৩৭ রান শুধু কমই নয়, মামুলি স্কোর। প্রতি ম্যাচেই এখানে বড় রান উঠছে। সেই রান আবার টপকে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আর সেই উইকেটে ১৩৭ রানের সামান্য যোগাড় নিয়ে ম্যাচ জিততে হলে বোলিংয়ে দুর্দান্ত কিছু করে দেখাতে হয় যে! কিন্তু রংপুর এদিন যে বোলিং করল তাতে বোলিং কোচের কাছ থেকে দল এখন জবাবদিহি দাবি করতেই পারে! মুস্তাফিজ তার শুরুর দুই ওভারে দিলেন ১৮ রান। আরাফাত সানির প্রথম ওভারে মেরে কেটে খুলনা তুলে নিল ১৮ রান। মোহাম্মদ নবির প্রথম ওভারে খরচা ১২ রান। তাসকিন আহমেদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। নিজের প্রথম ওভারেই তার খরচা ১৯ রান।

শুরুর ৬ ওভারে খুলনার স্কোরবোর্ডে জমা ৮৩ রান। যে রান এলো ছয় ছক্কা ও ছয় বাউন্ডারিতে! ৮.৪ ওভারেই খুলনার সঞ্চয় ১০০ রান ছাড়িয়ে গেল। ম্যাচ জেতার জন্য বলের চেয়ে রানের প্রয়োজন তখন কম!

ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ২০ বলে ৩৬ রান করে ফিরলেন। দারুণ ফর্মে থাকা রাইলি রুশো ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে সহজ জয় তুলে মাঠ ছাড়ল খুলনা। রুশো করলেন ৩১ বলে অপরাজিত ৬৬ রান। আরাফাত সানিকে রিভার্স সুইপে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে মাত্র ২৩ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পুরো করার পর মাঠেই বাঁশি বাজানোর কায়দায় এক পাক নেচে নিলেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান!

অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম অপরাজিত রইলেন ১৭ রানে। খুলনা টাইগার্সের এই ব্যাটিং উৎসবের দিনে দুঃখী ব্যাটসম্যান হয়ে রইলেন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। মাত্র ১ রান করে বিদায় নেন শান্ত।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রেঞ্জার্স: ১৩৭/৯ (২০ ওভারে, মোহাম্মদ নাঈম ৪৯, ফজলে রাব্বী ৪২, গ্রেগরি ২২, শফিউল ৩/২১; আমির ২/২৪)।
খুলনা টাইগার্স: ১৩৮/২ (১২.৩ ওভারে, রহমানউল্লাহ গুরবাজ ৩৬, রুশো ৬৬*, মুশফিকুর ১৭*; মুস্তাফিজ ১/১৮)।
ফল: খুলনা টাইগার্স ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: শফিউল ইসলাম।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!