করোনার আবহে পবিত্র আশুরা আজ

আজ রোববার ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। মুসলিম বিশ্বের কাছে দিনটি শোক ও বেদনার। ৬১ হিজরির এই দিনে ফোরাত নদীতীরবর্তী কারবালা প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, মহররমের ১০ তারিখে আকাশ ও মাটি সৃষ্টি হয়। কেয়ামত হবে এ দিনেই। আরবিতে আশারা মানে ১০। তাই ১০ মহররম আশুরা নামে পরিচিত।

আশুরা উপলক্ষে আজ বাংলাদেশে সরকারি ছুটি। আশুরার দিনে সুন্নি মুসলমানরা রোজা রাখেন। তবে শিয়া সম্প্রদায় ক্রন্দন ও মাতমের মাধ্যমে ইমাম হোসাইনের (রা.) শাহাদাতকে স্মরণ করে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সব ধরনের তাজিয়া, শোক ও পাইক মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিয়া মসজিদ ও ইমামবাড়াগুলোতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা যাবে। কিন্তু এসব অনুষ্ঠানস্থলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আতশবাজি ও পট্কা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

কারবালার বেদনাদায়ক ইতিহাস ছাড়াও আশুরার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী এ দিনেই পৃথিবীতে হজরত আদম (আ.) আগমন করেন। নবী হজরত মুসার (আ.) শত্রু ফেরাউনকে নিল নদে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। নূহ (আ.)-এর কিস্তি ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পায়। হজরত দাউদ (আ.)-এর তওবা কবুল হয়। তিনি রক্ষা পান নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে। হজরত আইয়ুব (আ.) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত হন।

ঈসা (আ.)-কে ঊর্ধ্বাকাশে আল্লাহর নির্দেশে এই দিনেই উঠিয়ে নেওয়া হয়। এত ঘটনার পরও আশুরার দিনটি শোকের দিনে পরিণত হয় কারবালায় হজরত মুহাম্মদের (সা.) দৌহিত্রের শাহাদাতের কারণে। হজরত মুয়াবিয়া (রা.) হজরত মুগির (রা.)-এর পরামর্শে নিজ পুত্র ইয়াজিদকে খেলাফতের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন।

কিন্তু সাধারণ মানুষ শাসক হিসেবে ইমাম হোসাইনকে (রা.) চেয়েছিল। ইসলামী শরিয়ায় বংশানুক্রমিক শাসন হারাম। তাই ইয়াজিদের কাছে বাইয়্যাত (আনুগত্য স্বীকার) নিতে অস্বীকৃতি জানান ইমাম হোসাইন (রা.)।

ইয়াজিদের শাসনের প্রতিবাদে ইমাম হোসাইন (রা.) মদিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। পরে মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশে রওনা হন। বাইয়্যাত নিতে বাধ্য করতে উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য পাঠান ইয়াজিদ। সেনাবাহিনী ইমাম হোসাইন (রা.)-এর কাফেলাকে ফোরাত নদীতীরে কারবালা প্রান্তরে অবরোধ করে।

ইয়াজিদের সৈন্যদের অবরোধে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শিবিরে খাদ্য ও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। নারী-শিশু সবাই পানির জন্য কাতর হয়ে পড়েন। কিন্তু ইমাম হোসাইন (রা.) আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম ইয়াজিদ বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ইমাম হোসাইন (রা.)। অসম যুদ্ধে ইমাম হোসাইন (রা.) তার ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদাত বরণ করেন। সিমার ইবনে জিলজুশান কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে ইমাম হোসাইনকে (রা.) হত্যা করে।

কারবালার শোকের দিনের অনেক আগেই রাসূল (সা.) জীবদ্দশায় আশুরার দিনে রোজা রাখতেন। আবু হুরায়রা (রা.) হাদিসে বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসূলকে ১০ মহররম রোজা পালন করতে দেখেছি। আর বলতে শুনেছি, রমজানের রোজা ছাড়া অন্য যে কোনো সময়ের রোজার চেয়ে উত্তম মহররমের রোজা।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!