ইফতার মাহফিলে আড়ালে পটিয়া বিএনপি চাঙ্গা হচ্ছে

চলতি রমজান মাসে ইফতার মাহফিলকেন্দ্রিক ঘরোয়া রাজনীতিতে মনোযোগ দেওয়ার কৌশল নিয়ে ইফতার মাহফিলের ব্যানারে রাজনৈতিক সমাবেশ করছে পটিয়া উপজেলা বিএনপি।

রমজানের শুরু থেকেই ইউনিয়ন পর্যায়ে ইফতার মাহফিলের ব্যানারে ঘরোয়াভাবে রাজনৈতিক সমাবেশের আয়োজন করছে দলটি। ইফতারকেন্দ্রিক এসব সমাবেশে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবির পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দেওয়া হচ্ছে দিকনির্দেশনা। পুরো রমজান মাসজুড়েই বিএনপির এমন কর্মসূচি চলবে বলে জানা গেছে।

দলের স্থানীয় নেতারা জানান, গত জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন মামলায় উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্বাচনের পর তাদের কেউ কেউ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। অনেকে এখনও রয়েছেন কারাগারে। যারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, তাদের আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যেতে হচ্ছে। একেকজনের নামে একটি দুটি থেকে শুরু করে অর্ধশতাধিক পর্যন্ত মামলা রয়েছে।

একদিকে মামলা নিয়ে নেতাকর্মীরা দৌড়ের ওপর রয়েছেন। অন্যদিকে পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে পটিয়া উপজেলা বিএনপিকে বড় পরিসরে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে কৌশলী কর্মসূচি দিতে হচ্ছে। ইফতার মাহফিলের ব্যানারে সমাবেশ আয়োজনও এই ধরনের কৌশলী কর্মসূচি।

উপজেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বিএনপি ছাড়াও সহযোগী সংগঠনগুলো ইফতার মাহফিল এবং সমাবেশের আয়োজন করছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বিএনপির সম্মেলন ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবারও (১৫ এপ্রিল) হয়েছে মৎস্যজীবী দলের ইফতার মাহফিল। পর্যায়ক্রমে বিএনপির ইফতার মাহফিল হওয়ার কথা রয়েছে রমজান মাসজুড়ে অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতে। এছাড়া পৌরসভায় সুবিধামতো সময়ে ইফতার মাহফিল ও সভার আয়োজন করা হবে বলে জানান স্থানীয় নেতারা।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ইফতার মাহফিল একটি ধর্মীয় বিষয়। রাজনৈতিক কর্মসূচি এর থেকে আলাদা। সরকার দীর্ঘদিন আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। তাই আমরা রমজান মাসে ইফতার মাহফিলের সঙ্গে দলের ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে আহবায়ক কমিটি গঠন করে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে এখনও। রাজপথে নামলেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ওই জায়গা থেকে ইফতার মাহফিলের একটা সুবিধা আছে। প্রতিটি থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আমরা যেতে পারছি। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা রক্ষার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি। তাদের কথা শোনার সুযোগ হচ্ছে। তাছাড়া ইফতার মাহফিলে দলীয় নেতাকর্মীর বাইরে স্থানীয় লোকজন এবং নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন আসেন। তাদের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগটাও গড়ে ওঠে।

আপাতত সরকারবিরোধী আন্দোলন না থাকায় রমজান মাসে ইফতার মাহফিলের আড়ালে চাঙ্গা হচ্ছে পটিয়ার বিএনপির রাজনীতি। যদিও আওয়ামী সরকারের সময়ে বড় ধরনের কোনো শোডাউন করতে পারেনি পটিয়া উপজেলা বিএনপি।

অন্যদিকে সাবেক সাংসদ গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল গ্রুপ ও এনামুল হক এনাম গ্রুপ উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে থাকলেও মাঠ পর্যায়ে দলীয় কর্মসূচি পালনে তুলনামূলক বেশি সক্রিয় এনাম গ্রুপের নেতাকর্মীরা।

বিএনপির তৃণমূল পর্যায়োর নেতাকর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন পুলিশের মামলা হামলা ও কোনো সভা-সমাবেশ করতে না পারার কারণে নেতাকর্মীদের মনে হতাশা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে পুনরায় বিএনপির চাঙ্গা হওয়ার সুযোগ হয়েছে। এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চান তারা।

পটিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এনামুল হক এনাম বলেন, ‘বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে। বিএনপির ওপর যত অত্যাচার নির্যাতন হবে বিএনপির সাংগঠনিক দক্ষতা ততো মজবুত হবে। তাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই।’

পটিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম বলেন, ‘ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মিলনমেলা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে তাদের মধ্যে নতুন কর্মস্পৃহা জাগ্রত হবে। রমজান মাসে রাজপথে কর্মসূচি না থাকলেও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকবে না। ইফতার মাহফিলও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের অংশ।’

কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘ইফতার মাহফিল তো প্রতিবছর হয়। এটা নির্ধারিত সাংগঠনিক কর্মসূচি। তবে এটাও সত্য ইফতার মাহফিলে দলের নেতা-কর্মীরা পরস্পরের কাছে যাওয়ার সুযোগ পান। ইফতার মাহফিল দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল আরও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!