ইউএসটিসির হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

চট্টগ্রাম নগরের ইউএসটিসির বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হসপিটালে (বিবিএমএইচ) ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (২৮ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে হাসপাতালের এনআইসিইউতে রায়হান হাসান নামে দেড় বছর বয়সী ওই শিশুটি মারা গেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক।

আনোয়ার হোসেন ও রেনু বেগম দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান রায়হান। তার পরিবার নগরের আকবরশাহ এলাকায় বসবাস করে।

জানা গেছে, ঠাণ্ডাজনিত রোগ হওয়ায় শিশুটির পরিবার বিকালে হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শিশুটির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে পরিবারের সদস্যরা।

মৃত শিশু রায়হান হাসানের খালা নার্গিস আক্তার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সকাল থেকে জ্বর জ্বর ছিল। দুপুরে ২টার সময় তাকে ভর্তি করানো হয়, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ছিল। ডাক্তার এক্স-রে দেয়, সেগুলোও করানো হয়েছে।
ওয়ার্ডের নার্সরা জানান, বাচ্চাকে অক্সিজেন দিতে হবে, তারপর অক্সিজেন দেয়। তখন বাচ্চা অনেক কান্না করতেছিল। আমি সেখানে গেলে আমাকে ঢুকতে দেয়নি। পালস অক্সিমিটার মেশিনটাও নষ্ট ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিকাল ৫টার দিকে শিশুর পাশে কর্তব্যরত ৪ জনকে জিজ্ঞেস করি, বাচ্চার আসল কন্ডিশনটা কি? তারা আমাকে বলেন, কে আপনি? বাচ্চার কি হন?—এসব বলে আমাকে বের করে দিয়েছে। পরে জানিয়েছে, বাচ্চার নিউমোনিয়ার মতো হয়েছে, অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। ভালো আছে। এরপর আমি চলে যাই।’

নার্গিস আক্তার বলেন, ‘এর একটু পর শুনি বাচ্চাকে এনআইসিইউতে দিয়েছে। বাচ্চা নড়ছে না, পেট ফুলে গেছে। ওখানে ডাক্তাররা বুকের উপর চাপছে, ওরা বলছে হার্টবিট আছে, কিন্তু তখনও নেই। আগের স্যালাইন থাকা সত্ত্বেও এনআইসিইউতে আবার স্যালাইন দিয়েছে। ওরা স্যালাইন খুঁজেও পাচ্ছিল না। কোন জায়গা থেকে যেন একটা অনেক কষ্টে খুঁজে বের করেছে৷ ওটা দেওয়ার পরই আমাদের বাচ্চাটা আরও দুর্বল হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘ওদের একজন নার্স কাকে যেন ফোনে বলতেছে—ভুল কি যেন দিয়েছে, তাই এরকম হয়েছে। আমাকে দেখেই তারা রুমের ভেতর ঢুকে গেছে। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে, ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে বাচ্চাটা৷’

এ প্রসঙ্গে মৃত শিশুটির মামাতো ভাই ইয়াসিন আরাফাত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেড় বছর বয়সী বাচ্চা আজ দুপুরে ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসে। হাসপাতালে আসার পর থেকে তারা একবার এই রুমে, একবার ওই রুমে পাঠাচ্ছিল। পরে আমাদের বলে, অনেক টাকা লাগবে, আপনাদের বাচ্চার অবস্থা খারাপ, এনআইসিউতে নিতে হবে তো। এনআইসিইউতে নেওয়ার পর থেকে আমাদেরকে কোনো কিছু দেখতেও দিচ্ছিল না, আমাদের কোনো আপডেটও দিচ্ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন-চার ঘণ্টা পর আমাদের জানিয়েছে, শিশুটি মারা গেছে। শুনেছি সেখানে হাতে ইনজেকশন পুশ করা হচ্ছিল। মূলত ভুল চিকিৎসায় আমার মামাতো ভাই মারা গেছে। কারণ শিশুটি যে অবস্থায় বাসা থেকে এসেছে, সেই অবস্থা মারা যাওয়ার মত ছিল না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা খুলশি থানায় খবর দিয়েছি। এখন এখানে ওসি এবং এসি সবাই আছেন, মিটিং চলছে।’

এ প্রসঙ্গে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নেয়ামত উল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে হাসপাতালে আসলাম। আমার এসি স্যার এখানে আছেন, আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আগে বুঝি বিষয়টা, তারপর বলতে পারব।’

এআইটি/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!