চট্টগ্রামের ৪ জায়গায় চলবে রেলের উচ্ছেদ অভিযান

চট্টগ্রামের চার জায়গায় অবৈদ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে তিনটি জায়গা নগরে এবং একটি উপজেলায়। অভিযানে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের জন্য চট্টগ্রাম নগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার বরাবরে চিঠি দিয়েছে রেলের ভূসম্পত্তি বিভাগ।

তবে এসব অভিযানের তালিকায় বেশ কয়েকটি অবৈধভাবে দখল হওয়া স্থাপনার নাম নেই বলে জানা গেছে।

যেসব জায়গায় অভিযান চলবে

সদরঘাটের পশ্চিম মাদারবাড়ী এলাকায় সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের রিভিউ পিটিশন (২৮৬/২০২৩) আদেশ অনুযায়ী রেলওয়ে মাস্টারপ্ল্যানভুক্ত প্লট-৬১ ও ৬২-তে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চলবে।

৭ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের গুণবতী স্টেশন এলাকায় ০.৭৪ একর জায়গায় পুকুরের ভেতর গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানঘর উচ্ছেদ করা হবে।

১৪ ফেব্রুয়ারি খুলশীর ঝাউতলা রেলওয়ে কলোনির বাসা নম্বর ৬২২/এ-এর পূর্ব পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ কাঠামো ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

১৯ ফেব্রুয়ারি খুলশীর ঝাউতলা স্টেশন বাজার সড়কের উত্তর পাশে রেলের মালিকানাধীন ভূমি (নার্সারি) যেটি অহিদ কলোনি নামে পরিচিত, সেখানকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চলবে।

২৮ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী স্টেশন এলাকায় ১৭৭/৩- ১৭৭/৪ এর মধ্যবর্তী রেল লাইনের পশ্চিম পাশে ০.৩৪ একর ভূমি ও কৃষি জমির অবৈধ দখল, বহুতল ভবন এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

৬ মার্চ সীতাকুণ্ডের চট্টগ্রাম-ফৌজদারহাট সেকশনের কি.মি ৮/২ হতে ৮/৪ বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের পূর্ব পাশে রেলভূমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।

বাসা এখন ক্রোকারিজের দোকান

ওয়ালেস ঝাউতলা স্কুল সড়ক-ঝাউতলা বাজার পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের রেল ভূমি ও পথচারী চলাচলের সড়কও অবৈধ দখলে। ঝাউতলা ‘ই/৭০’ বাসাটি রেল কর্মচারী, সিআরবি প্রকৌশল দপ্তরের (ব্রিজ) ট্রেসার জহিরুল ইসলামের। কিন্তু বাসাটি তিনি না থেকে দোকান ভাড়া দিয়েছেন। সড়কের পাশে হওয়ার সুবাদে তিনি সেটি ক্রোকারিজের দোকানদারকে ভাড়া দিয়েছেন। বাসার প্রবেশমুখ দখল করে ‘ফেনী ক্রোকারিজ’ নামের একটি দোকান বসেছে। বাসার সীমানার ভেতর অবৈধ সেমিপাকা ঘর, কাঁচাঘর, গোডাউন নির্মাণ করে তাতেই সংযোগ দিয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিও।

রেলের দেওয়া বাসায় নিজে না থেকে ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাসায় একটি রুম আমার জন্য রয়েছে।’ এছাড়া অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও রাস্তা দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

অভিযানের পর ফের দখল

রেলের এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান নতুন নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার অভিযান চালালেও পরে ফের দখল হয় এসব জায়গা।

২০২২ সালে ৩১ মে পাহাড়তলী ঝাউতলা পানির ট্যাংকি এলাকায় অবৈধ দখলে থাকা রেল ভূমি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু কয়েক মাস না যেতেই ফের স্থানগুলো দখল হয়ে যায়।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) সরেজমিন খুলশীর ওয়ালেস ঝাউতলা স্কুল থেকে ঝাউতলা বাজার রোড পানির ট্যাংকি সড়ক পর্যন্ত দেখা গেছে, জনসাধারণের চলাচলের এই সড়ক দখল করে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এসব কাজে যোগসাজশ আছে রেল থেকে বরাদ্দ পাওয়া বাসার মালিকদের। এসব অবৈধ দখল থেকে মোটা টাকা আয় করছেন এসব বাসার মালিকরা। অবৈধভাবে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগও।

তবে রেলের অভিযানের তালিকায় ঝাউতলা স্কুল থেকে ঝাউতলা বাজার রোড পানির ট্যাংকি সড়ক পর্যন্ত এলাকাটিও স্থান পায়নি।

ঝাউতলা রেলওয়ে সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. শোয়াইব বলেন, ‘যানবাহন ও পথচারী চলাচল সড়কের দু’পাশ দখল করা হয়েছে। এতে স্থানীয় লোকজনের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।’

রেলওয়ের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (পূর্ব) সুজন চৌধুরী বলেন, ‘উচ্ছেদের পরও দখলদারদের বিরত রাখা যাচ্ছে না। এবার অবৈধ দখলদার রেল কর্মচারীদের নাম, বাসা নম্বর তাদের নিজ নিজ দপ্তরপ্রধানের কাছে তালিকা করে পাঠানো হবে। এই সব কর্মচারীর শাস্তির সুপারিশ করা হবে।’

রেলওয়ের বিভাগীয় কর্ম ব্যবস্থাপক (পূর্ব) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রেলের ভূমি দখল এবং বাণিজ্যিক সুবিধা আদায়কারীদের উচ্ছেদসহ শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!