আইসিইউ ভেন্টিলিটরে যাওয়া করোনা রোগী বাঁচে না চট্টগ্রামে

করোনাকালের শুরু থেকে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত আইসিইউ ভেন্টিলিটর সাপোর্ট নেওয়া একজন রোগীও জীবিত ফেরেননি। গুরুতর করোনা রোগীদের ‘শেষ ভরসা’ হিসেবে সাধারণ বিবেচনায় ভেন্টিলিটরযুক্ত আইসিইউর কথা ভাবা হয়ে থাকে। সংকটাপন্ন রোগীকে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দিতে এই আইসিইউ ব্যবহার হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে দেখা গেছে, গুরুতর করোনা রোগীদের যাদেরই এ পর্যন্ত ভেন্টিলিটরে সাপোর্ট দিতে হয়েছে, তাদের কেউ আর শেষপর্যন্ত বাঁচেননি।

চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের দুটি হাসপাতালে আইসিইউ সেবা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে এখন পর্যন্ত। এই দুই হাসপাতালের মধ্যে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চারজন রোগীকে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। যাদের একজনও বেঁচে ফিরেননি।

একইভাবে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেও যাদের ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে হয়েছে, তাদের কাউকেই বাঁচানো যায়নি বলে জানিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা।

করোনার চিকিৎসায় সবমিলিয়ে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট সামান্যতম কার্যকর ভূমিকাও রাখছে না বলে মনে করছেন চট্টগ্রামের করোনা চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত অক্সিজেন দেওয়াকেই করোনার একমাত্র চিকিৎসা হিসেবে উল্লেখ করে ডাক্তাররা বলছেন, রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই এই মুহূর্তে।

বেশ কিছুদিন ধরেই করোনাভাইরাস মহামারির মোকাবেলায় চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে যথেষ্ট সংখ্যক ভেন্টিলেটর না থাকা নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। এক্ষেত্রে আইসিইউ নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে— তাকে একেবারেই ‘অযথা’ ও ‘হুজুগ’ উল্লেখ করে করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকরা বলছেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার হচ্ছে অক্সিজেন। এক্ষেত্রে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহের বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সবাই দেখছি আইসিইউ নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের উপলব্ধি হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত ক্রিটিক্যাল রোগী বাঁচানোর জন্য আইসিইউ নয়— প্রয়োজন হচ্ছে অক্সিজেন, অক্সিজেন এবং অক্সিজেন।’

চমেক পরিচালকের মত সংখ্যা উল্লেখ করে বলতে না পারলেও জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছেন— এমন একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশে অসম্মতি জানিয়ে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যতজনকেই ভেন্টিলেটর লাগাতে হয়েছে তাদের একজনও ফিরেননি। এক্ষেত্রে আইসিইউতে যাদের আমরা হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন দিতে পেরেছি এবং এর পাশাপাশি অন্যান্য সাপোর্টিং চিকিৎসা দিতে পেরেছি তারাই সুস্থ হয়েছে। কিন্তু যাদের অবস্থা এই পর্যায়ের চেয়ে অবনতি হয়েছে তাদের আর বাঁচানো যায়নি। কাজেই অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারাটাই এখনকার জন্য সবচেয়ে বড় সমাধান বলে আমি মনে করি।’

তবে শুধু অক্সিজেন সরবরাহ নয় বরং নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে এই রোগে আক্রান্তদের সেবা দেওয়া অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে চমেক হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘একটা রোগীকে সারিয়ে তুলতে হলে তাকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে। কথা হলো সেটা কিভাবে করবেন আপনি? সিলিন্ডার দিয়ে করা যায়, আবার সেন্ট্রাল লাইন দিয়েও করা যায়। তবে সিলিন্ডারের অক্সিজেন দিয়ে বেশি চাপে অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব না। নিরবচ্ছিন্নভাবে দেওয়া তো কোনোভাবেই সম্ভব না। কাজেই এখানে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া। সেটা করা গেলে আপনি নিরবচ্ছিন্নভাবে একজন রোগীকে ৭০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দিতে পারবেন।’

‘এক্ষেত্রে সবচেয়ে জটিল উপসর্গের রোগীকে হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারাটাই সর্বোচ্চ চিকিৎসা। এটুকু নিশ্চিত করতে পারলেই পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে’— যোগ করেন তিনি।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির আরও বলেন, ‘আইসিইউ ভেন্টিলেটর ব্যয়বহুল তো বটেই, এর জন্য দক্ষ জনবলও লাগে। পাশাপাশি আরও অনেকগুলো বিষয় আছে। কিন্তু তার চেয়ে অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো, হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ানোটা বেশি সহজ ও কার্যকর।

তিনি বলেন, ‘এখন কথা হচ্ছে রোগীদের লোকজন বলছে আইসিইউ লাগবে। আজও একজন আমাকে ফোন করে বললেন আইসিইউ লাগবে। আমি স্পষ্ট বলেছি আইসিইউ কেন চাইছেন? যদি বলেন আইসিইউ লাগবে— তাহলে তা আমার কাছে নাই। আর যদি বলেন চিকিৎসা লাগবে, তাহলে আমি চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!