আইআইইউসির নতুন অর্জন, নদভীর নেতৃত্বাধীন ট্রাস্টি বোর্ড পেল চূড়ান্ত অনুমোদন
জামায়াত সমর্থিত ট্রাস্ট্রি বোর্ড চূড়ান্তভাবে বাতিল
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) ট্রাস্টি বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস) প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভীকে চেয়ারম্যান মনোনীত করে ট্রাস্টি বোর্ডের বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) এই রেজিস্ট্রেশন অনুমোদন দেয়।
এই ট্রাস্টি বোর্ড রেজিস্ট্রেশন পাওয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর আ.ন. ম. শামসুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আইআইইউসির ট্রাস্টি বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন চূড়ান্তভাবে বাতিল হয়ে গেল।
আইআইউসি’র রেজিস্ট্রার এএফএম আখতারুজ্জামান কায়সার বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন।
আইআইইউসি সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে চেয়ারম্যান মনোনীত করে ট্রাস্টি বোর্ডেকে রেজিস্ট্রেশন প্রদান করে। এর আগে ২০২১ সালের মার্চে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভীকে আইআইইউসি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে চিঠি দিয়ে নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করতে অনুরোধ করা হয়। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে আইআইইউসি ট্রাস্টি বোর্ডের দায়িত্ব নেন প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী।
এর আগে সাবেক ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আ ন ম শামসুল ইসলাম ও জামায়াতের নেতারা কোনো পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই কোটি কোটি টাকা নগদেই লোপাট করছিল বলে অভিযোগ ওঠে। প্রতিষ্ঠানটির টাকায় চালানো হচ্ছিল জামায়াতের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া শত শত নাশকতা মামলার কার্যক্রম। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে জামায়াতের নির্বাচনী ফান্ডও তৈরি হতো এই প্রতিষ্ঠানের টাকায়।
অভিযোগ ওঠে, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা শামসুল ইসলামের নির্দেশনায় নাশকতার মামলার আসামি থেকে শুরু করে জামায়াত-শিবির কর্মীদের এই প্রতিষ্ঠানে লাখ টাকা বেতন দিয়ে করা হয়েছিল পুনর্বাসনও। বিশ্ববিদ্যালয়ে এত কর্মকর্তার প্রয়োজন না থাকলেও জামায়াত-শিবির কর্মীদের দেওয়া হয়েছে নিয়োগ। তাদের অনেকেই তাই চাকরি না করেও তুলে নিতেন বেতন।
চট্টগ্রাম সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সদ্য সাবেক সাংসদ প্রফেসর ড. আবু রেজা নদভীর নেতৃত্বে আইআইইউসি ট্রাস্টি বোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পর জামায়াতের এই আধিপত্য ভেঙে দেওয়া হয়। গড়ে তোলা হয় একাডেমিক পরিবেশ। খ্যাতিমান শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে গঠিত হয় ট্রাস্টি বোর্ড।
জানা গেছে, বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় জড়িত জামায়াত নেতাদের প্রশাসনের সব স্তর থেকে দেওয়া হয় অব্যাহতি। ঢেলে সাজানো হয়েছে একাডেমিক সেক্টর। অবকাঠামো উন্নয়নে হাতে নেওয়া হয় ১০০ কোটি টাকা প্রকল্প। গবেষণাখাতে আমুল পরিবর্তনের লক্ষ্যে নেওয়া হয় বিশেষ উদ্যোগ। অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে বিভিন্ন পর্ষদ ও কমিটি গঠন করা হয়েছে নতুন করে।
আইআইইউসির একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধ কিংবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামই নেওয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর সেই ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এখন বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও বঙ্গবন্ধু রিসার্চ সেন্টার। সাংসদ নদভীর নেতৃত্বে নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের পর এভাবেই বদলে গেছে আইআইইউসির চিত্র।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইআইইউসির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামকে আমরা এশিয়া মহাদেশের জ্ঞানচর্চার একটি সমৃদ্ধ ক্ষেত্র হিসেবে তৈরি করেছি। শিক্ষার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা বিকাশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবদান রাখতে পারে সেই উপযোগী একটি প্রতিষ্ঠান আমরা বিনির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমি এই প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে একাডেমিক ও অবকাঠামো উন্নয়ন শুরু করেছি। অবকাঠামো উন্নয়নে ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প আমরা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মননে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালনের পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করেছি মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার ও বঙ্গবন্ধু রিসার্চ সেন্টার। যেগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতে ছিল না।’
সাবেক সাংসদ নদভী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয় মৌলবাদী অপশক্তির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। তারা এখান থেকে কোটি কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়ে গেছে। এই টাকায় দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালিয়েছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাদের আস্ফালন বন্ধ হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা কেবল লুট করেছে। কোনো উন্নয়ন করেনি। তারা প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও নিয়ে গেছে। এখানকার কর্মকর্তা, কর্মচারীরা তাদের হাতে নিগৃহীত হয়েছে। আমরা দায়িত্ব নিয়ে সবার বেতন বাড়িয়েছি। প্রভিডেন্ট ফান্ড পুনরায় চালু করেছি।বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া বিশ্ব র্যাংকিংয়ে এগিয়ে নিতে একাডেমিক সিস্টেম আরও আধুনিক করার সব কার্যক্রম হাতে নিয়েছি আমরা। ইউজিসি ইতোমধ্যে রেড মার্কিংও তুলে নিয়েছে। আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের মোরালিটি ডেভেলপমেন্টের জন্যও বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সকল আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মাধ্যমে আমরা যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন পেয়েছি ৪ এপ্রিল। ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে এই রেজিস্ট্রেশন কার্যকর হবে। আমরা মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’