ই-কমার্সের আড়ালে এমএলএম/ চট্টগ্রামে এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইডে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটক

ই-কমার্সের আড়ালে ডেসটিনির আদলে পিরামিড আকৃতির এমএলএম ব্যবসার মাধ্যমে প্রতারণার অভিযোগে কোতোয়ালী থানা পুলিশ চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি ভিআইপি টাওয়ারের চতুর্থ তলায় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটকে করেছে।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি টিম এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড লিমিটেড নামের এমএলএম কোম্পানিতে এই অভিযান চালায়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার পুরো ধরন কথিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) হলেও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল ই-কমার্স পদ্ধতিকে। ই-কমার্স ও ডাইরেক্ট মার্কেটিংয়ের আড়ালে পিরামিড আকৃতির এই এমএলএম ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে ডেসটিনি-২০০০ গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন অভিযান ও আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভুক্তভোগীদের কোতোয়ালী থানায় লিখিত অভিযোগ দিতেও অনুরোধ করেছেন তিনি।

আটককৃতদের মধ্যে রাজীব তালুকদার (৪০) এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার (জিএম) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আগে ডেস্টিনি-২০০০ এর ডায়মন্ড এক্সকিউটিভ ও ডেস্টিনি ডিস্ট্রিবিউটর ফোরামের বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে চট্টগ্রামের লাভলেইন আবেদীন কলোনির বাসিন্দা রাজীব তালুকদার চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নলুয়া মিলন মাস্টার বাড়ির নিরঞ্জন তালুকদারের পুত্র।

আটকে হওয়া রাজীব দাশ (৩৯) এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড লিমিটেডের পরিচালক। তিনিও ডেস্টিনি-২০০০ এর পিএসডি (প্রফিট শেয়ার ডিস্ট্রিবিউটর) ছিলেন।
বর্তমানে চট্টগ্রামের ঘাটফরহাদবেগের বাসিন্দা রাজীব দাশ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নলুয়া মিলন মাস্টার বাড়ির মিলন কান্তি দাশের পুত্র তিনি।

পুলিশের হাতে আটক রবিন মিত্র (৩৩) এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড লিমিটেডের চট্টগ্রাম কাস্টমার কেয়ারের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইডের প্রেসিডেন্ট রাজিব মিত্রের ছোট ভাই। তিনি ছিলেন ডেসটিনির পিএসডি (প্রফিট শেয়ার ডিস্ট্রিবিউটর)। বর্তমানে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা রাজাপুকুর লেইনের বাসিন্দা রবিন মিত্র ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া সদরের উল্লাহ পাড়ার বাদল মিত্রের পুত্র। চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ই-কমার্স ও ডাইরেক্ট মার্কেটিংয়ের আড়ালে এমএলএম-এর পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছেন ডেসটিনির আলোচিত ‘ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ’ রাজিব মিত্র। ডেসটিনির বিরুদ্ধে সারা দেশে অভিযান শুরুর পর তিনি ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড ডিস্ট্র্রিবিউটর (বিনিয়োগ) ফোরাম নামের একটি সংগঠন গড়ে তুলে ডেসটিনির পক্ষে মানববন্ধনসহ বিভিন্নভাবে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেন। ২০১২ সালে এমএলএমের নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর ডেসটিনির বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান শুরু হলে ডেসটিনি চট্টগ্রামের ‘সমন্বয়ক’ রাজিব মিত্র আত্নগোপনে চলে যান।

আটককৃতদের মধ্যে আরও রয়েছেন বোয়ালখালী কানুনগোপাড়ার হিমাংশু সেনের পুত্র উজ্জ্বল সেন (৪১) এবং পটিয়ার ছনহরার বাউলডাঙ্গা এলাকার সূর্য মোহন বিশ্বাসের পুত্র সুমন বিশ্বাস (৩৮)। এরা দুজনই ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডে কথিত ‘ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ’ ছিলেন। আটককৃতদের মধ্যে এছাড়া রয়েছেন পাহাড়তলী উত্তর কাট্টলীর মনিন্দ্র গুহের পুত্র রঞ্জিত গুহ (৪৮) এবং নগরীর আসকারদিঘীর পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দা অপু দাশ (২৯)। অপু ছিলেন এমএলএম প্রতারণার দায়ে বহুল আলোচিত স্পিক এশিয়া ও ইউনিপের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ। বর্তমানে এরা সবাই এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইডের পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্বে রয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতারণা ও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের দায়ে সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়া এমএলএম কোম্পানি ‘ডেসটিনি-২০০০ লি:‘এর কথিত ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভরাই ‘এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড’ নামের প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। ২০১২ সালে ডেসটিনির বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান চলাকালে এদের প্রায় সবাই গ্রেপ্তারের ভয়ে দেশের বাইরে পলাতক ছিলেন। আবার কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন। সুযোগ বুঝে এরাই এখন ই-কমার্স পদ্ধতির নামে নতুন কৌশলে প্রতারণার ফাঁদে আটকে রেখেছেন শত শত তরুণ-তরুণীকে। আর চট্টগ্রামে হাজার টাকা বিনিয়োগ করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এসব গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নাম।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!