৩০ বছর পূর্তিতে দৃষ্টি চট্টগ্রামের বর্ণিল উৎসব

শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামে পালিত হলো দৃষ্টি চট্টগ্রামের ৩০ বছর পূর্তি উৎসব। বাংলাদেশের তরুণদের একটি স্বপ্নের প্ল্যাটফর্ম দৃষ্টি চট্টগ্রাম। তারুণ্যের মাঝে সুনাগরিক হয়ে ওঠার মূলমন্ত্রগুলো ছড়িয়ে দিতে দৃষ্টি চট্টগ্রামের স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা কাজ করে যাচ্ছে বিগত ত্রিশ বছর ধরে।

২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন কিছু দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে দৃষ্টি চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠা। শুরুতে আবৃত্তি নিয়ে কাজ করলেও কালের পরিক্রমায় দৃষ্টি পরিণত হয়েছে একটি সৃষ্টিশীল সংগঠনে। স্বপ্নপূরণের এই গৌরবজনক পদযাত্রায় ৩০তম বর্ষ পেরিয়ে দৃষ্টি চট্টগ্রাম ৩১তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। এ উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত হয় আনন্দ আয়োজনের।

অনুষ্ঠানের শুরুতে দৃষ্টি চট্টগ্রামের ৩০ বছরের পথচলার একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয় এবং এর সাথে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক আবুল মোমেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মফিজুর রহমান, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, শিক্ষাবিদ সাফিয়া গাজী রহমান, শিল্পপতি ও চট্টগ্রাম ক্লাবের সাবে সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ পরিচালক ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, বিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. আদনান মান্নান, ব্যাংকার রাশেদুল আমিন রাশেদ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শামসুল তাবরিজ সনেট, কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব তানভীর শাহরিয়ার রিমন।

দৃষ্টি চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মাসুদ বকুলের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে বক্তব্য রাখেন দৃষ্টির সাধারণ সম্পাদক সাবের শাহ, সহ সভাপতি মুজিবুর রহমান মনি, শহিদুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুদ্দিন মুন্না, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আরফাত, সাবেক বিতর্ক সম্পাদক রেজা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন মিলি চৌধুরী, বনকুসুম বড়ুয়া নুপুর ও প্রিয়ম দাশ।

অনুষ্ঠানে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, দৃষ্টি চট্টগ্রাম সংগঠন হিসেবে সমাজের মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পেরেছে, পেরেছে উদজীবিত করতে । সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষকে প্রানবন্ত মানুষ গড়ে তুলে ৩০ বছর ধরে এগিয়ে চলেছে। সমাজে এমন সংগঠন প্রয়োজন যারা প্রকৃত সমাজকে ধারণ করে, সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, নাট্যকার হিসেবে আমরা নাটককে বিশ্লেষণ করতে শিখি বিতর্কের মত সৃষ্টিশীল আয়োজন থেকে। দৃষ্টির আয়োজন গুলো সমাজের সকল স্তরের মানুষকে উদ্দীপনা দেয়, স্বপ্ন দেখতে শেখায়। চট্টগ্রাম থেকেও জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান করতে পারে এমন সংগঠনের অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিবিদ মফিজুর রহমান বলেন, বাঙালি আজকাল কুতর্ক করে বেশি, বিতর্ক করে কম। দৃষ্টি চট্টগ্রাম শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে এসেছে। আজকের তরুণদের দেশ ও জাতির ভাবনা ধারণ করে দেশের রাজনীতিকে বিকশিত করতে পারবে

সাংবাদিক ও বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, দৃষ্টি সবসময় উদ্ভাবনী অনুষ্ঠান দিয়ে মানুষকে সৃষ্টিশীল স্বপ্ন দেখায়, অনুপ্রাণিত করে। চৌকস তরুণদের অংশগ্রহনের এই প্রাণবন্ত সংগঠনের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত একটি নাম দৃষ্টি চট্টগ্রাম, যা চট্টগ্রামের বিতর্ক অঙ্গনকে করেছে সমৃদ্ধ ও গৌরবান্বিত । প্রথম বিতর্ক উৎসব, প্রথম সংসদীয় ধারার বিতর্ক প্রতিযোগিতা, চট্টগ্রামে প্রথম বিতর্ক কর্মশালা, একমাত্র বিতর্ক স্কুল এবং ধারাবাহিকভাবে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন- সবগুলোই দৃষ্টি চট্টগ্রামের হাত ধরে হয়েছে। দৃষ্টিই দেশের একমাত্র সংগঠন যা বিগত ৩০ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। দৃষ্টি চট্টগ্রাম বাংলা বিতর্ক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ইংরেজি বিতর্ক প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে আসছে। এছাড়াও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্যও নিয়মিতভাবে আয়োজন করে বিতর্ক প্রতিযোগিতার।

তাঁরা বলেন, দৃষ্টি চট্টগ্রাম তরুণদের স্বপ্ন দেখানোর পাশাপাশি নিজেদের নিয়েও স্বপ্ন দেখে। দৃষ্টি প্রমাণ করেছে তরুণদের ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারলে তারা ঠিকই সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে ফেলবে। প্রয়োজন শুধু একটু অনুপ্রেরণা ও সঠিক পথ বাতলে দেয়া। দৃষ্টি সে কাজটি করে এসেছে এবং সামনের দিনগুলাতেও করে যাবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!