সড়ক আইন বাস্তবায়নে বিআরটিএকে আরো শক্তিশালী করার সুপারিশ

বহুল আলোচিত সমালোচিত সড়ক আইন বিষয়ক টাস্কফোর্স কমিটির প্রথম সভায় এ আইন শিথিলভাবে বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারের অবস্থানের কথা জানানো হয়েছে। এ আইনের নানা দিক নিয়ে কথা বলার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাস্তবায়ন পর্যায়ে নানা সীমাবদ্ধতা ও দুবলর্তা রয়ে গেছে। যে কারণে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে যথাযথ সময় এবং সুযোগ দিয়ে এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেসসহ বিভিন্ন কাগজপত্র হালনাগাদের জন্য মালিক-শ্রমিকদের আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আইন (সড়ক পরিবহন আইন) স্থগিত করা হয়নি, সবই (বাস্তবায়ন) চলবে।’

রোববার (২৪ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে টাস্কফোর্স কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইন বাস্তবায়নে নতুন করে চার সচিবের নেতৃত্বে চারটি উপ-কমিটি করা হয়েছে। তারা আগামী দুই মাসের মধ্যে সুপারিশ ও অ্যাকশন প্ল্যানসহ প্রতিবেদন জমা দেবেন। পরে টাস্কফোর্স কমিটির সভায় আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইন কিন্তু ইমপ্লিমেন্ট হয়ে গেছে। কয়েকটি বিষয়ে আমাদের দুর্বলতা রয়েছে। যেমন- আমরা বিআরটিএ লাইসেন্স নবায়ন করতে পারিনি, এর জন্য অ্যাকশন প্ল্যান শুরু করেছি। লাইসেন্স না দিলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো। কয়েকটি জায়গায় ৩০ জুনের মধ্যে সেরে নিতে হবে। পরিবহন মালিকদের বিভিন্ন যানবাহনের আকার নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে সেটিও সমাধান করা হবে। তারা ডিফল্ডার হয়ে গিয়েছিল, ট্যাক্স-টোকেনের বিষয়ে আবেদন জমা দিলে আশা করি জরিমানা এবারের মতো মাফ করা হবে।

সড়ক পরিবহন আইনের কিছু স্থানে গাড়ি চালকদের পরিবর্তনের দাবি প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চালকরা বলছেন নতুন আইনের জরিমানা দেওয়া সম্ভব না, আইনে মৃত্যুদণ্ডের কথা লেখা নেই। অপরাধ করলে কত বছর সাজা হবে এবং জরিমানা হতে পারে সর্বোচ্চ তা লেখা আছে। তা কমার কোনো প্রশ্ন আসে না, সর্বোচ্চ লিমিট বিচারক ব্যবস্থা নেবেন, আমরা সিলিং দিয়েছি সর্বোচ্চ, তিনি ইচ্ছা করলে কোন জায়গায় যেতে পারেন সেটা তার এখতিয়ার। জামিন অযোগ্যর বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এটি বৃহৎ আকারে আলোচনা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, টাস্কফোর্স কমিটির কাজটি ছিল পরিবহনখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও এখানে যে অসুবিধা ছিল যেগুলোর একটি বাস্তবমুখী সমাধান করা এবং সব দুর্ঘটনা নিয়ে একটি পরিকল্পনা করা। আজ সেই কমিটির প্রথম সভা হলো। সভায় সৈয়দ আবুল মকসুদ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খানের করা ১১১ সুপারিশমালা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই সুপারিশ বাস্তবায়নে চারটি উপ-কমিটি করা হয়েছে। যার নেতৃত্ব দেবেন চারজন সচিব। তারা চিহ্নিত করবেন কোন স্থানে আমাদের দুর্বলতা আছে। এজন্য কোন স্থানে আমাদের কীভাবে কাজ করতে হবে সেই পরিকল্পনা তারা দেবেন। আমাদের দুর্বল পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিআরটিএ’কে আরো শক্তিশালী করতে হবে। তাদের দুর্বলতাগুলোকে কমাতে হবে। সেজন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানকে এখাতে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তারা ডিফেন্ডার হয়ে গিয়েছিল ট্যাক্স টোকেনের বিষয়ে। সেই জরিমানাটা তারা মওকুফ চেয়েছিল। (সড়ক পরিবহন) সচিবের কাছে তারা আবেদন জমা দেবেন, মন্ত্রী (সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী) এটা সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। আশা করি জরিমানা এবারের মতো মাফ করা হবে। তাদের অনুরোধ করা হয়েছে, ভবিষ্যতে আর কোনো জরিমানা মওকুফ হবে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, আরেকটি জিনিস ক্লিয়ার করতে চাই- আইনটি বাস্তবায়নের আগে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন। আমি, আইনমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রী মহোদয়- আমরা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা সুপারিশ দিয়েছি। সেই সুপারিশ সড়ক পরিবহনমন্ত্রী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী অ্যাকশনে যাবেন।

সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিচালক ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খানসহ টাস্কফোর্সের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!