স্রোতে ভেসে নিখোঁজ ২ শিশু, বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত চকরিয়া-পেকুয়ায়

ঘরের দেয়ালধসে বৃদ্ধার মৃত্যু

ছয়দিনের টানা বর্ষণ আর উজান থেনে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়ার বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে দুই উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ২৫টি ইউনিয়নের পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

স্রোতে ভেসে নিখোঁজ ২ শিশু, বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত চকরিয়া-পেকুয়ায় 1

চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরে সড়কের ওপর দিয়ে মাতামুহুরী নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। চকরিয়া-পেকুয়ার অভ্যন্তরীণ সড়কে গাড়ি চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

এদিকে চকরিয়া দেয়ালধসে এক বৃদ্ধার মৃত্যু ও বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে দুই শিশু নিখোঁজ রয়েছে। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢলের প্রবেশমুখ সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন ও কাকারা ইউনিয়ন ৫-৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর সড়কের কয়েকটি অংশের উপর দিয়ে মাতামুহুরী নদী থেকে উপচে আসা ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় বসতঘরগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। চকরিয়া ও পেকুয়ায় বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে বন্যার পানি। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

সোমবার রাত ১২টার দিকে মাতামুহুরী নদীর পানি পৌরশহরের ডুকে পড়েছে। এতে পৌরশহরের সব শপিং কমপ্লেক্সে বন্যার পানি ডুকে পড়েছে। বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গেছে ব্যবসায়ীদের মালামাল। এতে কয়েক শ’ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। গত দু’দিন ধরে বিদ্যুত না থাকায় চরম দুর্বিসহ জীবন অতিবাহিত করছে বন্যা কবলিত বানবাসি মানুষরা।

চকরিয়ার লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁসিয়াখালী, বদরখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী এবং পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালী, টৈটং, শিলখালী, বারবাকিয়া ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

রোববার পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে বন্যার পানি ডুকলেও সোমবার রাত থেকে ৯টি ওয়ার্ড পুরোপুরি বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর বাঁধ ও কোচপাড়ার বাঁধ দুটি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় লোকজন সারারাত চেষ্টা করে বাঁধ দুটি ভাঙন থেকে রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘অতি বৃষ্টির কারণে পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ড পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা কাজ করছে জলাবদ্ধতা কমাতে। এছাড়াও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর বেড়িবাঁধটি রক্ষার জন্য বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম ও কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন জানান, আমাদের ইউনিয়নগুলো মাতামুহুরী নদীর সঙ্গে লাগোয়া। এজন্য পাহাড় থেকে নেমে ঢলের পানি আগে আঘাত হানে এসব ইউনিয়নগুলোতে। এই দুই ইউনিয়নে অধিকাংশ ঘর পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। গত দু’দিন ধরে তাদের রান্নার কাজও বন্ধ। শুধু শুকনো খাবার খেয়ে রয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, ‘সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন সরজমিন পরিদর্শন করেছি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

চকরিয়ার ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, ‘বন্যাকবলিত প্রায় এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী প্রায় দেড় লাখ লোক পানিবন্দি রয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষদের নিকস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যেসব মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তাদের বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার দেওয়ার হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়াও যারা ঘরবাড়ি ছেলে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে চাচ্ছে না, সেসব পরিবারগুলোকে প্রাথমিকভাবে শুকনো খাবার দিতে সকল চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি। চকরিয়ায় বন্যার ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে অবহিত করে ত্রাণ বরাদ্দ চেয়েছি।’

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম জানান, সোমবার রাত থেকে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। বন্যা কবলিত অধিকাংশ লোকজনকে নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তাদের জন্য রান্না করা খিচুড়ি ও শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!