স্তন ক্যানসার সচেতনতায় একা এক নারী— গোলাপী টিশার্টের মাধবী

১০ অক্টোবর স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস

স্তন ক্যানসার সচেতনতায় কাজ করছেন এক নারী—সাবিনা ইয়াসমিন মাধবী। রোদ হোক কিংবা বৃষ্টি, আর্থিক হোক কিংবা শারীরিক—কোনো সমস্যাই মাধবীর কাছে বড়ো নয়। গোলাপী টিশার্ট পরে সাইকেলে চেপে তিনি যাচ্ছেন স্কুল, কলেজে, পোশাক কারখানায়। সময় নিয়ে বুঝিয়ে বলছেন স্তন ক্যানসারের লক্ষণ কী কী। স্তন ক্যানসার থেকে সচেতন থাকতে হবে কিভাবে। সমস্যা যদি হয়েই যায়, তখন চিকিৎসা নিতে হবে কিভাবে?

ঢাকার একটি কলেজে মাস্টার্স করছেন সাবিনা ইয়াসমিন মাধবী। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার রানা হিজল গ্রামে।

চট্টগ্রাম প্রতিদিন অফিসের আড্ডায় মাধবী।
চট্টগ্রাম প্রতিদিন অফিসের আড্ডায় মাধবী।

স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে কয়েকদিন আগে তিনি এসেছিলেন চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম সফরকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন স্তন ক্যান্সাররোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সাইকেল চালিয়ে কাজ করার সুবিধার জন্য মাধবীকে সাইকেল কেনার জন্য ২৫ হাজার টাকা উপহার দেন। মাধবী এক ফাঁকে ঘুরে গেলেন চট্টগ্রাম প্রতিদিন অফিসেও। তখনই তার সঙ্গে হয় নানান কথা, তার অভিনব উদ্যোগের নেপথ্যের কথা।

একজন শিক্ষার্থী হয়েও এমন উদ্যোগের ভাবনা এল কিভাবে আপনার?
মাধবী: সারা বিশ্বে নারীদের জন্য স্তন ক্যানসার একটি আতঙ্কের নাম। এর প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। ইদানিং ক্যানসারের প্রচলিত ওষুধে কাজ হচ্ছে না। কারণ বেশিরভাগ সময়ে নারীরা শেষ ধাপে এসে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ঠিক এ কারণেই কেমোথেরাপিও ঠিক প্রতিষেধক হতে পারছে না। তার ওপর নারীরা এটা নিয়ে কথা বলতে চান না। এ নিয়ে ট্যাবু আছে। ট্যাবুটা ভাঙতে হবে। কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করেছি।

চট্টগ্রামে কোন কোন স্থানে গিয়েছেন?
মাধবী: নগরীর বাওয়া, খাস্তগীর, কুসুম কুমারী ও কাজেম আলী স্কুলসহ প্রায় ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েছি। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কথা বলেছি ছাত্রীদের সাথে। এছাড়াও প্রায় ১৫টি গার্মেন্টসে গিয়েছি। সেখানকার কর্মীদের সাথে কথা বলেছি। তাদের সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করেছি। এছাড়াও বাইসাইকেলে চড়েই তথ্য নিয়ে যেতে চাই উপজেলাগুলোতেও।

স্তন ক্যানসার নিয়ে শুধু সচেতনতা সৃষ্টি করছি তাও ঠিক নয় সহায়তাও দিচ্ছি। এরকম যাদের লক্ষণ দেখা দিয়েছে তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য দিচ্ছি। তবে স্তনে চাকা বা পিণ্ড অনুভব করলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ঠিক, তবে অনুভূত সব চাকা বা পিণ্ড ক্যানসার নয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে স্তনের চাকার ক্ষেত্রে শতকরা ১০ ভাগ শেষ পর্যন্ত ক্যানসার হিসেবে চিহ্নিত হয় বাকি ৯০ ভাগ টিউমার সাধারণ রোগ।

স্তন ক্যানসার সচেতনতায় চট্টগ্রামের স্কুলে স্কুলে সাবিনা ইয়াসমিন মাধবী।
স্তন ক্যানসার সচেতনতায় চট্টগ্রামের স্কুলে স্কুলে সাবিনা ইয়াসমিন মাধবী।

স্তন ক্যানসার এখনো একটি সামাজিক ট্যাবু। এটি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রতিক্রিয়া কেমন পেয়েছেন?
মাধবী: চট্টগ্রামে আমি ভালো ফিডব্যাক পেয়েছি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা আমাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করেছে। সেটাই অনেক পাওয়া। সামাজিক কুসংস্কারজনিত নিষেধাজ্ঞাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া খুব সহজও নয়। ট্যাবুগুলোকে ভাঙতে হলে আমাদের সবার সেখানে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। নেতিবাচক কিছুও লক্ষ্য করিনি তা নয়, সেগুলোকে এড়ানো সম্ভব। নারীর স্বাস্থ্য মানে এদেশের অর্ধেক জনসংখ্যার স্বাস্থ্য। সে বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!