হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে সীতাকুণ্ড-মিরসরাইয়ে যাবে ওয়াসার পানি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চল ও মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলে পানি সরবরাহে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। এর ফলে সেখানে অনেকগুলো শিল্প স্থাপন হবে বলে মনে করেন তিনি। শুক্রবার (২৮ জুন) সকালে নগরীর আগ্রাবাদে চট্টগ্রাম চেম্বারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত ‘সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চল ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এ তথ্য জানান। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুুবুল আলম।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ে পানি সংকট সমাধানে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হবে। প্রকল্পের ফিজিবিলিটি ও ডিপিপি চট্টগ্রাম ওয়াসাই করবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে কোন সমস্যা হবে না। তবে সঠিকভাবে প্রকল্প নিতে হবে। আমরা চট্টগ্রামের উন্নয়নে কাজ করতে চাই।’

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘চট্টগ্রামের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আরও প্রকল্প নিতে হবে। প্রকল্প নিতে হবে আগামী ৫০ বছরের পরিকল্পনাকে সামনে রেখে। ফেইজে ফেইজ তা বাস্তবায়ন করতে হবে। রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও চট্টগ্রামের উন্নয়নে কোন মতভেদ নেই। আমরা কাজ করবো। চট্টগ্রামের উন্নয়ন হবে।’

সভায় চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পের ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং সম্পর্কে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘উন্নতমানের ড্রেজার এনেও কর্ণফুলীতে ড্রেজিং করতে পারছে না। সব পলিথিনে ভরা। এরকম চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর অকার্যকর হয়ে যাবে।’

সভায় ওয়াসা ও অন্যান্য সংস্থার রাস্তা অপরিকল্পিতভাবে খোঁড়াখুঁড়ির তীব্র সমালোচনা করেন মন্ত্রী। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন নালা পরিস্কার করবে এমন মত দেন মন্ত্রী। এছাড়া সীতাকুণ্ডে পাহাড়ের পানি আটকে রাখার বিষয়ে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা তাও দেখবেন বলে জানান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

সভায় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (উন্নয়ন) নুরুল আলম নিজামী, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী সদস্য মো. হারুনুর রশিদ।

সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার মাধ্যমে সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চল ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পানি সরবরাহ করা হবে। খাওয়াদাওয়া ও নিত্য ব্যবহার্যের বাইরে এই প্রথম বাণিজ্যিকভিত্তিতে ওয়াসা পানি সরবরাহ করবে। প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি ব্যয় ‘বেজা’ বহন করবে। জিওবি এবং বৈদেশিক ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হতে পারে।’

কর্ণফুলী নদীর উভয় পাশের উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়াকে সেবা সংস্থাসমূহের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সভায় তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে ২৪টি সেবা সংস্থা আছে। কিন্তু জবাবদিহিতা নেই। সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত মানে না সংস্থাগুলো। তাই সমন্বয় সভা করতে ইচ্ছে করে না। অথরিটি না থাকলে কিছু করা যাবে না।’

স্বাগত বক্তব্যে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম সীতাকুন্ড ও মিরসরাইয়ে পানি সরবরাহের প্রকল্পটি ফাস্ট ট্র্র্যাকে বিবেচনা করার জন্য মন্ত্রী ও সচিবকে অনুরোধ জানান। এছাড়া তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রকল্প ও সমস্যার বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সভায় ব্যবসায়ীদের পক্ষে মতামত তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন প্যাসিফিক জিন্সের পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর, ইউরো পেট্রোলিয়ামের কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলমাস শিমুল, বিএসআরএমের কর্মকর্তা তপন চক্রবর্তী।

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!