রেল চলবে আগের মতোই, জনবল নিয়ে চিন্তা চট্টগ্রামে

৩০ আগস্টের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন চলাচল আগের মত স্বাভাবিক হতে পারে। করোনা মহামারির কারণে ৫ মাস বন্ধ থাকার পর স্বাভাবিক হচ্ছে ট্রেন চলাচল। করোনাকালীন খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানি, জরুরি পণ্য সরবরাহে স্পেশাল মালবাহী ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও কিছুদিন পর আর্থিক ক্ষতি হওয়ায় সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ৩১ মে থেকে সীমিত ও স্বল্প পরিসরে যাত্রীবাহী ট্রেন, পার্সেল ট্রেন, ম্যাংগো স্পেশাল ও ক্যাটেল ট্রেন পরিচালনা করে প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পূর্ব) আনসার আলী বলেন, ‘ধাপে ধাপে এ মাসেই সব ট্রেন চলাচলের সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। এ বিষয়ে এখনও কোন চিঠি আমার দপ্তরে এসে পৌঁছায়নি। ১৬ আগস্ট একসাথে ১৩ জোড়া ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে সারাদেশে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া শুরু করে রেলপথ মন্ত্রণালয়।’

এদিকে পাঁচ মাস পর রেলওয়ের কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলেও জনবল সংকট নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের যান্ত্রিক বিভাগ ৫০ শতাংশ লোকবল নিয়ে কোনমতে এগিয়ে গেলেও আগামী কয়েক মাসে শতাধিক শ্রমিক অবসরে গেলে যন্ত্রের চাকা অচল হয়ে পড়বে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, করোনাকালীন সময়ে শ্রম দিয়েও প্রণোদনার বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন যান্ত্রিক শ্রমিকরা। মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সিসিএফওয়াই, রেলওয়ে ওয়ার্কশপ পাহাড়তলী যান্ত্রিক বিভাগে সরেজমিন ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

রেল সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা ঝুঁকির মধ্যে কর্মচারীদের কাজে ফেরানো, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা— এ দুটোই ছিল বেশ কঠিন কাজ। দুর্যোগের মুহূর্তে এই কঠিন কাজটাই কেবল ৫০ শতাংশ জনবল নিয়ে সম্পন্ন করেছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের যান্ত্রিক বিভাগ। অর্ধেক লোকবলে কর্মচারী কর্মকর্তার আন্তরিকতায় যান্ত্রিক বিভাগ কোনভাবে সচল রাখা গেলেও কয়েক মাসের মধ্যেই শতাধিক অভিজ্ঞ কর্মচারীর অবসর গ্রহণে অন্যরকম শঙ্কা তৈরি হয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল যান্ত্রিক বিভাগে।

চট্টগ্রাম সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডের একজন কর্মচারী মইনুল ইসলাম (৩০) বলেন, ‘এমনিতে কারখানা, ক্যারেজ ডিপো, লোকোসেড সবখানেই দক্ষ লোকের সংকট। সংকটকালীন এ সময়ে ট্রেনের চাকা সচল রাখতে একটি দিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি লোকোসেড বা ক্যারেজ ডিপো। বিভাগীয় প্রধানের নেতৃত্বে কর্মকর্তাদের সুপারভিশন কর্মচারীদের শ্রমে যান্ত্রিক বিভাগ সচল রাখলেও আমরা প্রণোদনা ভাতা পাইনি।’ শুধু মইনুল নয় এমন কষ্টের কথা জানিয়েছেন পাহাড়তলী রেলওয়ে ওয়ার্কশপের বেশ কয়েকজন কর্মচারী।

ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার প্রস্তুতি কেমন— জানতে চাইলে নবনিযুক্ত পাহাড়তলী কারখানার কর্মব্যবস্থাপক রাশেদ লতিফ জানান, ‘সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে লোকবল সংকটে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

এ পরিস্থিতিতে কিভাবে চলছে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা— জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী এফএম মহিউদ্দিন বলেন,‘আমার ইউনিটের সবাইকে নিয়ে প্রস্তুত রয়েছি। কর্মচারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে। পূর্ণ উদ্যোমে কাজ শুরু করতে সকলকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। করোনাকালীন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য প্রণোদনা প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। সহসা পাব বলে আশাবাদ রাখছি। দক্ষ জনবলের ঘাটতি একটা বড় সমস্যা। বর্তমানে প্রায় ৫০ শতাংশ জনবল ঘাটতির সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ দিক নির্দেশনা দেবেন।’

জেএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!