রেলে ময়লা কম্বল-ছেঁড়া বালিশ, দুদক কর্মকর্তা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালেন নালিশ
বেডিং ইনচার্জ সাময়িক বরখাস্ত
রাতে তুর্ণা নিশীথা ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন চট্টগ্রামে কর্মরত দুর্নীতি দমন কমিশনের এক কর্মকর্তা। ওই ট্রেনের ‘গ’ নম্বর বগির এসি বার্থে তাকে সরবরাহ করা হয় ময়লা কম্বল ও ছেঁড়া বালিশ— যা ছিল পুরোপুরি ব্যবহার অনুপযোগী। দুদকের ওই কর্মকর্তা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সকালে ঢাকা পৌঁছান। এরপর তিনি হোয়াটসঅ্যাপে সেই ময়লা কম্বল ও ছেঁড়া বালিশের ছবি তুলে পাঠান রেলের উর্ধতন এক কর্মকর্তাকে। ঘটনা জেনে ওইদিনই বেডিং ইনচার্জকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে কর্মরত দুদকের ওই কর্মকর্তার জরুরিভিত্তিতে ঢাকা যাওয়ার প্রয়োজন পড়লে তিনি রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে বিশেষ অনুরোধ করে চট্টগ্রাম-ঢাকা তুর্ণা নিশীথা ট্রেনের একটি টিকিট সংগ্রহ করেন। রোববার (৬ মার্চ) রাতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বার্থে ওঠেই দুদক কর্মকর্তা দেখতে পান, তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ময়লা কম্বল ও ছেঁড়া বালিশ। উৎকট গন্ধে যা গায়ে দেওয়ারই অনুপযুক্ত। পুরো রাত তিনি আর ঘুমাতে পারেননি। সকালে ঢাকায় পৌঁছে তিনি রেলের রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সর্দার শাহাদাত আলীর কাছে হোয়াটসঅ্যাপে ময়লা কম্বল ও ছেঁড়া বালিশের ছবি তুলে পাঠান।
অভিযোগের কথা জেনে সোমবার (৭ মার্চ) রেল পূর্বাঞ্চল বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার কন্ট্রোল আদেশে (তারবার্তা) বেডিং ইনচার্জ জিয়াউল হক ঠাকুরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এ ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত বেডিং ইনচার্জ জিয়াউল হক ঠাকুর অবশ্য চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে দাবি করেছেন, ‘প্রতিদিন ওয়াশ করা কম্বল-বালিশ যাত্রীদের দেওয়া হয়। আমাদের কাজ ট্রেনের প্রতিটি এসি/নন এসি বার্থে সেগুলো পৌঁছে দেওয়া। কী কারণে আমি বরখাস্ত হলাম সেটাই বুঝতে পারছি না।’
রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা-২ শাহাদাত হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাকে কন্ট্রোল আদেশ দেওয়ার ভিত্তিতে জিয়াউল হককে সাময়িক বরখাস্তের আদেশে স্বাক্ষর করি।’
দুদক কর্মকর্তার অভিযোগে ত্বরিৎ এমন ব্যবস্থা নেওয়া হলেও চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে যাওয়া ট্রেনের বার্থগুলোতে যাত্রীদের সরবরাহ করা হয় ময়লা কম্বল, নোংরা চাদর ও ছেঁড়া বালিশ— এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যাত্রীদের এমন দুর্দশার কথা চট্টগ্রামে রেলের উর্ধতন কর্মকর্তারা জানেন না, তাও নয়। কিন্তু দিনের পর দিন এভাবেই চলে আসছে। সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, এই দফায় বেডিং ইনচার্জকে সাময়িক বরখাস্ত করে রেলের উর্ধতন কর্মকর্তারা নিজেদের দায় একজনের ওপরই চাপিয়ে দিলেন।
জানা গেছে, বেড পরিস্কার করার জন্য রেলের বাণিজ্যিক দপ্তর টেন্ডার ডেকে মাসে লাখ লাখ টাকা পরিশোধ করে ঠিকাদারকে। এরপরও আন্তনগর ও ঢাকা মেইল ট্রেনে যাত্রীসেবার উন্নতি নেই।
এ বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সর্দার শাহাদাত আলীকে ফোন করেও সংযোগ না মেলায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সিপি