১২৭ টাকার তেল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বেরোতেই ১৯০ টাকা, ৬ কোম্পানির হাতে কলকাঠি

বিদেশ থেকে আমদানি করা সয়াবিন তেল চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছা পর্যন্ত সবমিলিয়ে খরচ পড়ে প্রতি লিটারে ১২৭ টাকা। বন্দর থেকে বের হওয়ার পর সেই সয়াবিন তেলই ক্রেতার হাতে পৌঁছতে পৌঁছতে হয়ে যায় ১৯০ টাকা পর্যন্ত। দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে এভাবে দাম বাড়ায়। মূলত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের একটি সিন্ডিকেট দেশে সয়াবিন তেল আমদানির পুরো কলকাঠি নাড়ছে। যদিও সরকারের কড়াকড়ির পর শুক্রবার (১১ মার্চ) থেকে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকায় মিলছে।

বিশ্ব বাজারে ভোগ্যপণ্যের মূল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইনডেক্স মুন্ডি’র তথ্য অনুসারে, গত ডিসেম্বরে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল এক হাজার ৪১১ ডলার। ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি টনে জাহাজ ভাড়া পড়ে ৭০ ডলার। সব খরচ মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার পর প্রতি টন সয়াবিন তেলের মূল্য দাঁড়ায় এক হাজার ৪৮১ ডলার বা ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৬৬ টাকা। এই হিসাবে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম পড়ে ১২৭ টাকা ৩৬ পয়সা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর পর ভোক্তার হাত পর্যন্ত যেতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে যোগ হতে পারে আরও ২৫ থেকে ২৭ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে রিফাইনিং খরচ, ভ্যাট, এআইটি, ইন্সুরেন্স ব্যয়। এর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের লাভের অংশটি যোগ করার পর খোলাবাজারে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম বড়জোর হতে পারে ১৫৩ টাকা।

কিন্তু বাস্তবে মাত্র কয়েকদিন আগেও প্রতি লিটার সয়াবিন কিনতে ক্রেতার পকেট থেকে গেছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা। অথচ টিসিবির ট্রাকে সেই একই সয়াবিন মিলছে প্রতি লিটার মাত্র ১১০ টাকায়। এভাবে এই এক তেল নিয়েই চলছে রীতিমতো হরিলুট। এর নেপথ্যে রয়েছে দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর শক্ত সিন্ডিকেট— ছয়টি প্রতিষ্ঠানের একটি চক্র যার কলকাঠি নাড়ে।

সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পর সরকারের হস্তক্ষেপে শুক্রবার (১১ মার্চ) থেকে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকায়ই মিলছে। এর আগে সয়াবিন তেলের ওপর শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাটও প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি তেল বিক্রিতে পাকা রসিদের নিয়ম চালু হয়েছে।

গত চার বছরে যে কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, সয়াবিন ও পাম অয়েল তার মধ্যে শীর্ষে। ২০১৯ সালে দেশের বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ১০৪ টাকা। মাত্র এক বছর পর ২০২০ সালে সেটি বেড়ে হয় ১১৩ টাকা, ২০২১ সালে ১৩০ টাকা এবং ২০২২ সালের শুরুতে এসে হয় ১৬৮ থেকে ১৭০ টাকা। গত শুক্রবারের (১১ মার্চ) আগ পর্যন্ত চলছিল ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা। অন্যদিকে পামঅয়েলের লিটার (খোলা) ২০১৯ সালে ছিল ৫৮ টাকা, ২০২০ সালে লিটারে ৭৮ টাকা, ২০২১ সালে ১০৭ টাকা এবং ২০২২ সালের শুরুতে হয় ১৫০ টাকা। আর এখন চলছে ১৬৫ টাকা।

দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। অথচ ২০২১ সালে ২৭ লাখ ৭১ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি হওয়ার পরও বাজারে এখন সয়াবিন তেল স্বাভাবিক মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানিকারকরাই নির্দিষ্ট ডিলারদের দিয়ে সয়াবিন তেল অবৈধভাবে মজুত করে এই সংকট তৈরি করছেন— এমন অভিযোগের রয়েছে শক্ত ভিত্তি।

বাংলাদেশে ভোজ্য তেল আমদানি করে ছয়টি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো— সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বসুন্ধরা ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!