মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধনে হামলা এমপি মোস্তাফিজ অনুসারীদের, রেহাই পায়নি সাংবাদিকও

চট্টগ্রাম নগরীতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে হামলা চালিয়েছে বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারীরা। এ হামলায় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী ও চট্টগ্রাম যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মৌলভী সৈয়দের পরিবারের তিন সদস্যসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছেন। সোমবার (২৪ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর এপিএস তাজুল ইসলাম ও বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র সেলিম উল হকের নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় মৌলভী সৈয়দের ভাতিজা জয়নাল আবেদীন, জহির উদ্দীর মো. বাবর, ইমরানুল ইসলাম তুহিনসহ আহত হয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন। এ ঘটনায় আহত হন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদও। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজন হামলাকারীকে আটক করেছে।

হামলায় আহত মৌলভী সৈয়দের ভাতিজা ও দক্ষিণ জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহির উদ্দীন মোহাম্মদ বাবরের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা।

জানা গেছে, বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী কতৃক মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে কটুক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মৌলভী সৈয়দ আহমদের বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা ডা. আশরাফ আলীকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না দেওয়ার প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ড চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন আয়োজন করে।

সকাল ১১টায় আয়োজিত এ মানববন্ধন শুরু হলে বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারীরা সেখানে উপস্থিত হয়। একপর্যায়ে তারা মানববন্ধনে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা ও মৌলভী সৈয়দের পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালায়। তাদের হাতে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে বলে জানিয়েছে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এ সময় হামলাকারীরা উপস্থিত সাংবাদিকদের উপরও চড়াও হয়৷ তাদের হামলায় আহত হন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল আইয়ের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান চৌধুরী ফরিদসহ কয়েকজন সাংবাদিক।

হামলায় আহতদের মধ্যে রয়েছেন মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার মোজ্জাফফর, বাঁশখালী কমান্ডার আবুল হাশেম, সাতকানিয়া কমান্ডার আবু তাহের, মুক্তিযোদ্ধা আজিমুল ইসলাম ভেদু, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, ফটো সাংবাদিক আকতার হোসাইন, মৌলভী সৈয়দের ভাতিজা জয়নাল আবেদীন, জহির উদ্দীর মো. বাবর, ইমরানুল ইসলাম তুহিন, মোব্বাশের হোসেন সোহান, কামরুল হুদা পাভেল।

এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে কয়েকজন হামলাকারীকে আটকও করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর এপিএস তাজুল ইসলাম ও বাঁশখালী পৌর মেয়র সেলিমুল হকের নেতৃত্বে হামলায় অংশ নেন বাঁশখালীর বাহারছড়ার মো. মনজুরুল ইসলাম, নুর উদ্দিন রকি, খানখানাবাদের ফয়জুল মুবিন, ডোংরার শাহে জিসানসহ ১৫ থেকে ২০ জন।

ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া কিছু স্থিরচিত্রে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর এপিএস তাজুল ইসলাম ও বাঁশখালী পৌর মেয়র সেলিমুল হককে সেখানে দেখা যায়।

মৌলভী সৈয়দের ভাতিজা ইমরানুল ইসলাম তুহিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এমপির এপিএস তাজুল ও পৌর মেয়র সেলিমুলের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। এতে আমার ভাই জয়নাল, জহির উদ্দিন বাবরসহ ১০ থেকে ১২ জন আহত হয়েছে। বাবরের অবস্থা আশংকাজনক। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।’

এদিকে হামলার ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বে জামালখান সড়কে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিসহ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে কমান্ডার মোজাফফর আহমদ সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানকে আওয়ামী লীগের সকল পদ ও সংসদ সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান।

এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ মারা যাওয়ার পর গার্ড অব অনার না দেওয়ার প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচিতে বাঁশখালীতে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারীরা। এ সময় মৌলভী সৈয়দের পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা হয়।

এর আগে গার্ড অব না দেওয়ার প্রতিবাদ করায় মৌলভী সৈয়দের ভাইপো সাংবাদিক ফারুক আব্দুল্লাহ’র বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে সাংসদ মোস্তাফিজের এক অনুসারী। মামলার এজাহারে সাংসদের নির্দেশনা অনুযায়ী সাংবাদিক ফারুকের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয় বলে উল্লেখ করেন বাদি।

এদিকে এসব ঘটনায় বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে মৌলভী সৈয়দের পরিবার। সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

এফএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!