মাথায় হাতুড়ি মেরে শ্বাসরোধে খুন পটিয়ার সেই সিএনজিচালককে

হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত ও ড্রাই (লোহা বাঁকানোর মেশিন) দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় সিএনজি অটোরিকশা চালক নূর আলমকে।

গ্রেপ্তার দুই আসামি মোমিন সরকার ও নেজাম উদ্দীন ওরফে মিজান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান।

বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) পটিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বেশ্বর সিংহের আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে পটিয়া থানা পুলিশ মোমিন সরকার ও নেজাম উদ্দিনকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। বিকেল সাড়ে ৬টায় মোমিন সরকারের জবানবন্দি রেকর্ড শেষ হয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিং করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান। তিনি বলেন, ঘটনার দুই-তিনদিন আগে থেকে নূর আলমকে খুন করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন মোমিন সরকার ও নেজাম উদ্দিন ওরফে মিজান। এরপর তারা বিশ্বাস অর্জনের জন্য নূর আলমের গাড়ি ভাড়া করে বোয়ালখালী যান। এভাবে নূর আলমের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেন মোমিন ও নেজাম। ঘটনার একদিন আগে নূর আলমকে নিয়ে আবারো বোয়ালখালী গেলে ভাড়া বকেয়া রাখেন তারা।

পরেরদিন (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভাড়া টাকার নিয়ে যাওয়ার জন্য নূর আলমকে বোয়ালখালীতে ডেকে নিয়ে যান নেজাম। এরপর তাকে নিয়ে মোমিনের বোয়ালখালীর ভাড়া বাসায় যান নেজাম। বিকালে তিনটি ঘুমের বড়ির গুঁড়ো কৌশলে নূর আলমের চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাইয়ে দেন নেজাম। বাসা থেকে বের হয়ে নূর আলমকে নিয়ে নেজাম গাড়ির পেছনে বসলে অটোরিকশা চালিয়ে বোয়ালখালীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে থাকেন মোমিন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান আরও বলেন, এক পর্যায়ে নূর আলমের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাকে পটিয়া উপজেলার বড়লিয়া ইউনিয়নের বাড়ৈকাড়া গ্রামের বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে নিয়ে আনা হয়। ওই স্থানে হাতুড়ি দিয়ে নূর আলমের মাথায় আঘাত করেন মোমিন। এরপর ড্রাই দিয়ে কপালে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে সামনের অংশ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। পরে ড্রাই মেশিন দিয়ে দুইজন নূর আলমের গলা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

তিনি আরও বলেন, পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে নূর আলমের লাশ হত্যার স্থান থেকে আরও ১ কিলোমিটার দূরে বুধপুরা সড়কে ফেলে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যান মোমিন ও নেজাম। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি ও ড্রাই মেশিন এবং খুনি নেজামের রক্তমাখা লুঙ্গিটিও উদ্ধার করা হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, আসামি মোমিন সরকার (৩০) ও নেজাম উদ্দিন ওরফে মিজান (৩৫) সিএনজি অটোরিকশা চালক নূর আলমকে খুন করার ঘটনা সবিস্তারে আদালতকে জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে পটিয়ার কর্তলা এলাকায় রাস্তার পাশে সিএনজি চালক নূর আলমের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে পুলিশে খবর দিলে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ওইদিন রাতে নূর আলমের স্ত্রী মুন্নি আকতার বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এক সন্তানের জনক নিহত নূর আলম পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নের ইদির মোল্লার বাড়ির মো. আলীর ছেলে।

গত সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে পটিয়া পৌর এলাকা থেকে মোমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার তথ্যমতে ছিনতাই হওয়া সিএনজি অটোরিকশাটি উদ্ধার করে পুলিশ। মোমিনকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় নেজামকে।

নেজাম পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত কবির আহমদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নগরের চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা রয়েছে। তিনি ওই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি।

কেএ/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!