মন্ত্রিসভায় চট্টগ্রামের তিন—পররাষ্ট্রে হাছান, শিক্ষায় নওফেল, কুজেন্দ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের দায়িত্বে
৩৬ জন মন্ত্রীর দপ্তর বন্টন
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সন্তান ড. হাছান মাহমুদ নতুন মন্ত্রিসভায় এবার পেয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এর আগের মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। তারও আগে শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি ২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রামের আরেক সন্তান মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপমন্ত্রী থেকে এবার পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে ‘পদোন্নতি’ পেয়েছেন। আগের মন্ত্রিসভায় তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রী ছিলেন। নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি পেয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ দায়িত্ব। অন্যদিকে এবারই প্রথম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। তিনি পেয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এর আগের মন্ত্রিসভায় ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন বান্দরবান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশেসিং।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে চট্টগ্রামের এই তিনজন ছাড়াও নতুন মন্ত্রিসভার মোট ৩৬ জন সদস্য শপথ নেন। এর মধ্যে এর মধ্যে ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী। তাদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। সব মিলিয়ে পঞ্চমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর অধীনে ৬ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ
- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ
- প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়
- সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ
- বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়
- সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়
- শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
৮ মন্ত্রী আছেন আগের মতোই
- আ ক ম মোজাম্মেল হক : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়
- ওবায়দুল কাদের : সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়
- আনিসুল হক : আইন মন্ত্রণালয়
- নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন: শিল্প মন্ত্রণালয়
- আসাদুজ্জামান খান কামাল : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
- মো. তাজুল ইসলাম : স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়
- সাধন চন্দ্র মজুমদার : খাদ্য মন্ত্রণালয়
- ইয়াফেস ওসমান (টেকনোক্র্যাট) : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
২ মন্ত্রী এবার নতুন দপ্তরে
- মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
- দীপু মনি : সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়
৫ মন্ত্রী ফিরেছেন আবার
- আবুল হাসান মাহমুদ আলী : অর্থ মন্ত্রণালয়
- মুহাম্মদ ফারুক খান : বেসামরিক বিমান ও পর্যটন
- নারায়ণ চন্দ্র চন্দ : ভূমি মন্ত্রণালয়
- জাহাঙ্গীর কবির নানক : বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়
- সাবের হোসেন চৌধুরী : পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়
প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী থেকে এবার পূর্ণমন্ত্রী ৩ জন
- মো. ফরিদুল হক খান : ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়
- ফরহাদ হোসেন : জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
- মহিবুল হাসান চৌধুরী : শিক্ষা মন্ত্রণালয়
৪ প্রতিমন্ত্রী আছেন আগের মতোই
- নসরুল হামিদ : বিদ্যুৎ বিভাগ
- খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়
- জুনাইদ আহমেদ পলক : ডাক, টেলিযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
- জাহিদ ফারুক : পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়
৭ প্রতিমন্ত্রীই মন্ত্রিসভায় এই প্রথম
- সিমিন হোসেন রিমি : মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়
- কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা : পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়
- মহিবুর রহমান : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়
- মোহাম্মদ আলী আরাফাত : তথ্য ও সম্প্রচার
- শফিকুর রহমান চৌধুরী : প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান
- বেগম রুমানা আলী : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
- আহসানুল ইসলাম টিটু : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
নতুন মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে বেশি ১৫ জন স্থান পেয়েছেন ঢাকা বিভাগ থেকে। এর মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও। এর পরই চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে রয়েছেন ৯ জন। এ ছাড়া সিলেটের বিভাগের তিনজন, বরিশাল বিভাগের দুজন, খুলনা বিভাগের দুজন, ময়মনসিংহ বিভাগের দুজন, রাজশাহী বিভাগের দুজন ও রংপুর বিভাগের দুজন স্থান পেয়েছেন নবগঠিত মন্ত্রিসভায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২২ আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বুধবার (১০ জানুয়ারি) শপথ নেন নতুন সংসদ সদস্যরা। এরপর সর্বসম্মতিক্রমে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাদের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করা হয়।
বুধবার বিকেলে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর সন্ধ্যায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের তালিকা নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতির সম্মতি নেওয়ার পর মন্ত্রিসভার ওই তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ৩৬ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়েছেন মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। তবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের জোটভুক্ত দলগুলো এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বাকি একটি আসনের ফল স্থগিত রাখা হয়েছে। ২৯৮টি আসনের ফলাফলে ২২২টি আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। এই আসনগুলোতে জাতীয় পার্টির সমর্থনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী প্রত্যাহার করা হয়েছিল। বাকি ৬৫ আসনের মধ্যে ৬২টিতে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এর মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। অন্যদিকে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি করে আসন। তারাও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়েই নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
সিপি