ভোটারের ‘প্রতিশ্রুতি’ নৌকায়, ফটোসেশন ‘প্রচারণায়’ ব্যস্ত ছিল অন্য প্রার্থীরা

নৌকা প্রতীকের প্রাণবন্ত প্রচার-প্রচারণায় চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ নির্বাচনী এলাকার ভোটারের অংশগ্রহণমূলক উপস্থিতি থাকার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন নোমান আল মাহমুদ। তবে অন্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি বলে জানান স্থানীয় ভোটাররা। বরং এসব প্রার্থীরা ফটোসেশন প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।

এই আসনের চট্টগ্রাম নগরীর অংশ ও উপজেলা ঘুরে কথা হয় বিভিন্ন বয়সী ভোটারের সঙ্গে। এছাড়া কথা হয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও।

বোয়ালখালী শাকপুরা এলাকার গৌতম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘এলাকাবাসীর চাওয়া-পাওয়া মেটাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ। তার মতো একজন স্বচ্ছ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের প্রতিশ্রুতিতে নৌকায় ভোট দেব। অন্য প্রার্থীদের তেমন দেখা যায়নি, তাদের প্রতিশ্রুতি কি করে জানবো?’

পূর্বসূরিদের অসমাপ্ত কাজ এই স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করার দায়িত্ব নেওয়ার কারণে নোমান আল মাহমুদ বেশিরভাগ ভোটারের কাছে বেশি পছন্দের হয়েছেন বলে জানান আমুচিয়া এলাকার প্রণয় দাশ। তিনি বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণায় তার আচরণ দেখে সাধারণ মানুষ মুগ্ধ। সাদা মনের একজন মানুষ তিনি।’

কালুরঘাট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আলী মোহাম্মদ স্লোগান দিয়ে বলেন, ‘ভোট দিবেন হাসিয়া, নৌকা মার্কা দেখিয়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য নৌকার কোনো বিকল্প নেই। রাজনীতির মাঠে, কিংবা সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের লোকজন ছাড়া কাউকে কোথাও পাওয়া যায় না। শুধু নির্বাচন উপলক্ষে মানুষের কাছে গেলে তো হবে না।’

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ নৌকা প্রতীকে, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের অধ্যক্ষ আল্লামা এস এম ফরিদ উদ্দিন চেয়ার প্রতীকে, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মোহাম্মদ আবদুস সামাদ মোমবাতি প্রতীকে, এনপিপির কামাল পাশা আম প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মো. রমজান আলী একতারা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৪৩ নম্বর রাজনৈতিক ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী পৌরসভা ও উপজেলার কধুরখীল, পশ্চিম ও পূর্ব গোমদন্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলী, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপ, আমুচিয়া ও আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসন। এই আসনে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮ জন ভোটারের মধ্যে ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ পুরুষ ও ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ নারী ভোটার।

এদিকে নগরীর ওয়ার্ড কাউন্সিলররা বলছেন, ‘ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়া একমাত্র প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ। তিনিই সকল এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচনী মাঠে দেখা মেলেনি। নির্বাচনী প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের আওতাভুক্ত নগরীর ৫টি ওয়ার্ড ও বোয়ালখালী উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা।’

৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এসরারুল হক এসরাল বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের প্রতিটি ঘরে ঘরে নৌকার প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্য প্রার্থীদের তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। তবে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদানে ব্যাপক উৎসাহিত করেছি। তারাও এই ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকার বেশিরভাগ ভোট নৌকার পক্ষের। ভোটারদের প্রতিশ্রুতিতে বুঝতে পারলাম কাস্টিংয়ের ৯৫ শতাংশ ভোট নৌকায় পড়বে।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীকে বিশ্বস্থতার সঙ্গে ভোট দেবেন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার—এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর কাজী নুরুল আমিন। এরই মধ্যে কেন্দ্র কমিটি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে তার এলাকায় অন্য প্রার্থীদের সরব কোনো প্রচারণা দেখতে পাননি বলেও জানান তিনি।

বোয়ালখালী উপজেলার ৯ নম্বর আমুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজল দে বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে সব সময় নৌকার পক্ষে ভোট পড়ে। এলাকার মা-বোনদেরও ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। আশা করি, আমাদের কেন্দ্রে অন্তত ৬০ শতাংশ ভোট কাস্টিং হবে। এছাড়া ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’

বোয়ালখালী পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দে বলেন, ‘বোয়ালখালী উপজেলায় নৌকার ভোটারের সংখ্যা সব সময় বেশি ছিল। পূর্বের নির্বাচনের ভোটের ফলাফল দেখলেই তা নিরুপণ করা যায়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিতে বাড়ি বাড়ি গিয়েছি।’

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৫০০ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হবে। এজন্য প্রস্তুত রয়েছে নগর ও বোয়ালখালী উপজেলার ১৯০টি কেন্দ্রের ১৪১৪টি ভোটকক্ষ।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ভোটগ্রহণের জন্য রয়েছে ৪ হাজার ৪৩২ জন প্রশিক্ষিত ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার)। এছাড়া আরও ৫০০ অতিরিক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই উপ নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের জন্য মোট ২৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। থাকবে পুলিশ, আনসার, র্যা ব, স্ট্রাইকিং ফোর্স। প্রতিটি বিজিবি মোবাইল টিমে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!