ভারতের জেদে গড়ে উঠলো ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড

আন্তর্জাতিকমানের ব্যাট বানাচ্ছে বাংলাদেশি ‘এমকেএস’

ভারতীয় কোম্পানির কাছ থেকে ভালো ব্যাট না পাওয়ার জেদে ইমরুল নিজেই ব্যাট কারখানার মালিক বনে যান। ইমরুলের এমন উদ্যোগ মিরাজের কানে যেতেই তাকে ফোন দিয়ে জানান, তিনিও থাকবেন। মিরাজ-কায়েস-শাহীন— এই তিনজনের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে ব্যাটের নামও (এমকেএস) পেয়ে যান তারা। এটা সাধারণ কোনো স্পোর্টস ব্রান্ড নয়, এই ‘এমকেএস’ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি স্পোর্টস ব্রান্ড— যার মাধ্যমে দেশেই এখন পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক মানের ব্যাট।

ভারতের জেদে গড়ে উঠলো ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড 1

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরীর চান্দগাঁও এলাকার ফরচুন ক্রিকেট অ্যারেনাতে হয়ে গেল স্পোর্টস ব্রান্ডটির প্রচারণা কার্যক্রম। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস ও মেহেদি হাসান মিরাজ।

এদিন শিশুশিল্পীদের একাধিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় চট্টগ্রামের প্রচারণা অনুষ্ঠান। এতে ফরচুন স্পোর্টস এরেনার কর্মকর্তারা ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্পোর্টস একাডেমির কর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে দেশী ক্রিকেটারদের হাত ধরে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত এমকেএস ব্যাটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল আইসিসিও স্বীকৃতি দিয়েছে এমকেএস স্পোর্টসকে— এমন কথা জানিয়ে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস বলেন, এখন থেকে বাংলাদেশের তৈরি এই ব্যাট দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ক্রিকেটারও খেলতে পারবেন। শুধু তাই নয় এখন থেকে ক্রিকেটাররা নিজের মতো করে ব্যাট তৈরি করেও নিতে পারবেন।

ক্রিকেটার মেহেদি হাসান মিরাজের (এম), ইমরুল কায়েসের (কে) ও ব্যাটের ডাক্তার হিসেবে খ্যাত আফতাব আহমেদ শাহীনের (এস) অক্ষর দিয়ে তৈরি হয় ব্র্যান্ডনেম— এমকেএস।

অনুষ্ঠানে ইমরুল কায়েস আক্ষেপ করে বলেন, ‘ইন্ডিয়ানরা অনেক বড় বড় ছক্কা মারে, কিন্তু আমরা পারি না। কারণ তাদের কাছে খুব ভালো মানের ব্যাট আছে, যা আমাদের নেই। আর ব্যাটগুলো আমাদের দিতেও চায় না তারা।’

ক্রিকেটার ইমরুল আরও বলেন, ‘আমি একাধিকবার ভারত সফর করেছি। এমনকি ১০ বছর আমি একটা ভারতীয় কোম্পানির সাথে চুক্তিতে ছিলাম। চুক্তি শেষের পর যখন আমি সেই কোম্পানিকে আমার জন্য কাস্টমাইজড ব্যাট বানিয়ে দিতে বললাম তখন তারা অস্বীকৃতি জানালো, টাকার বিনিময়েও দিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় কোম্পানিটি।’

‘তখনই ওদের চ্যালেঞ্জ করি বছরদুয়েকের মধ্যেই আমি ইন্টারন্যাশনালমানের ব্যাট বানিয়ে দেখাবো। যদিও তারা কথাগুলো বিশ্বাস করতে চায়নি। তারপরও শেষ পর্যন্ত বানিয়ে নিলাম এমকেএস। যদিও সফলতার গল্পটা এত সুন্দরও না’— বলেন ইমরুল।

কোম্পানিটির আরেক অংশীদার ক্রিকেটার মেহেদি হাসান মিরাজ বলেন, আপাতত ব্যাট উৎপাদন হলেও আগামীতে সম্পূর্ণ স্পোর্টসজোনে রূপ নিবে এমকেএস কোম্পানি। সামনে কাস্টমাইজড গ্লভস ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খেলাধুলার সামগ্রী তৈরির প্রচেষ্টার কথাও জানান তারা।

যেভাবে বানানো হয় আন্তর্জাতিক মানের দেশীয় ব্যাট—
ক্রিকেটদুনিয়ার সব কোম্পানি যে প্রক্রিয়ায় ব্যাট তৈরি করে, একই কায়দায় ব্যাট তৈরি করছে এমকেএসও। সুদূর ইংল্যান্ড থেকে ‘ইংলিশ উইলো’ কাঠ দিয়ে বডি ও সিঙ্গাপুরের কাঠ দিয়ে ব্যাটের হাতল তৈরি করা হয়। আর ‘ব্যাটের ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত আফতাব আহমেদ শাহীনের হাতেই গাছগুলো রূপ নেয় ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ব্যাট এমকেএস লগোতে।

আপাতত কোম্পানিটির কোন শোরুম না থাকলেও www.mkssports.com ওয়েবসাইটে ঢুকে ব্যাট ও গ্লভস অর্ডার করতে পারবেন ক্রেতারা— এমনটাই জানানো হয়েছে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে।

বিএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!