ব্যাংকের টাকা মেরে দুদকের জালে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী

বাবার কাছেই জালিয়াতির হাতেখড়ি হয় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় মেসার্স সাহেদ শিপ ব্রেকিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. সাহেদ মিয়ার। তার বাবার পরামর্শে ঋণ নিতে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করতেন। ব্যাংক থেকে বড় অংকের টাকা আত্মসাৎ করতে বিদেশ থেকে আমদানি পণ্য ক্রয়ে ব্যাংকে খোলেন এলসি। এলসি বিপরীতে ব্যাংকে দেওয়া হয় তার ভাই ও কথিত চাচার জমি। সাবেক দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও কর্মকর্তা, ন্যাশনাল সার্ভে বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পরস্পর যোজসাজশে জমির মূল্য বেশি দেখিয়ে ৫৬ কোটি ৬৭ লাখ ৫৭ হাজার ২০ টাকার ঋণ পাস করা হয়।

জালিয়াতির মাধ্যমে এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সাহেদ মিয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধায় দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম বাদি এ মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর দপ্তরে রেকর্ড করা হয়।

মামলার অভিযুক্তরা হলেন দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক উদ্যোক্তা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী/অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের মাহবুবুল হক চিশতি (৫৬), দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের খতুনগঞ্জ শাখার সাবেক হেড অব ব্যাঞ্চ শওকত ওসমান চৌধুরী (৫৬), দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক এসইও অ্যান্ড ম্যানেজার অপারেশন মো. আনোয়ার হোসেন (৪৪), মেসার্স সাহেদ শিপ ব্রেকিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. সাহেদ মিয়া (৩০), চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার লালবাগ হাবিব কোম্পানির বাড়ির ওমর হোসেনের ছেলে আবুল কালাম (৬২), ন্যাশনাল সার্ভে বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম (৪৫), দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক কর্মকর্তা ও বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের এফভিপি মৃণাল মজুমদার (৪৩) এবং দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক সিইও ও বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের কর্মরত এ কে এম শামীম (৭০)।

দুদকের মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, মেসার্স সাহেদ শিপ ব্রেকিং এর স্বত্বাধিকারী মো. সাহেদ মিয়া একজন ঋণখেলাপি। তার বাবা আবুল কালামের পরামর্শে ২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন শুরু করেন গ্রাহক মো. সাহেদ মিয়া। তারাই ধারাবাহিকতায় পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড সাবেক দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সঙ্গে লেনদেন শুরু করেন মো. সাহেদ মিয়া।

২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রয়ারি আবেদনের প্রক্ষিতে প্রতি মেট্রিকটন ২৩৫ ধরে ৩০৬২৯ দশমিক শূন্য শূন্য মেট্রিক টন ওজনের ৭০৮৪৪৬২ দশমিক ৭৫ ইউএস ডলার বাংলাদেশি টাকা ৫৬ কোটি ৬৭ লাখ ৫৭ হাজার ২০ টাকা আমদানির জন্য শতকরা ২০ শতাংশ এলসি মার্জিনে ৩৬৫ দিন মেয়াদি এলসি খোলা এবং অবশিষ্ট টাকা এলটিআর সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করেন গ্রাহক সাহেদ মিয়া। তার ঋণের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১ মার্চ তৎকালীন দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের খাতুনগঞ্জ শাখার বরাবরে একটি প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়। ঋণ প্রস্তাবে ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল গ্রাহকের আবেদনের প্রক্ষিতে আমদানি জন্য ২৫ শতাংশ ক্যাশ মার্জিনে ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা টাকা এলসি ওপেনিং অনুমোদন প্রদান করেন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়। এই ঋণের বিপরীতে গ্রাহকের কথিত চাচা আখতার হোসাইন চৌধুরীর ১৪৫ দশমিক ৫০ ডেসিমেল ও তার ভাই মো. জাহিদ মিয়ার ১১৭ দশমিক ১৩ ডেসিমেল মর্টগেজ হিসেবে বন্ধক দেওয়া হয়। এসব মর্টগেজ যাচাই করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ন্যাশনাল সার্ভে বাংলাদেশ লিমিটেডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এসব মর্টগেজের মূল্য ছিল ২৬২ দশমিক ৬৩ ডেসিমেল, সেখানে সম্পত্তির মূল্য দেখানো হয়েছে ৪৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা ১৯ টাকা এবং ফোর্সসেল মূল্য দেখানো হয়েছে ৩৫ কোটি ৩২ লাখ ৯৫ টাকা। যা ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া তথ্য।

অর্থাৎ ৫৬৬৭ দশমিক ৬৭ লাখ টাকা ঋণের জন্য সর্বমোট ৩৪২ দশমিক ৭২ ডেসিমেল জায়গা মর্টগেজ রাখা হয়েছে। এসব মর্টগেজের জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ৫৫ কোটি ৩১ লাখ ৩৪ টাকা। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উক্ত ঋণের বিপরীতে সুদসহ সুদসহ ৭১ কোটি ১৮ লাখ টাকার মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এ ঘটনায় দন্ডবিধি ৪০৯, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ৪২০, ১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ৫ (২) ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম।

এমএ/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!