পেকুয়ায় স্কুলের এক প্রধান শিক্ষিকাকে প্রাণনাশের হুমকি

পেকুয়ায় স্কুলের এক প্রধান শিক্ষিকাকে প্রাণনাশের হুমকি 1পেকুয়া প্রতিনিধি: কক্সবাজারের পেকুয়ায় শিক্ষকদের দ্বন্ধের জের ধরে প্রধান শিক্ষিকাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে ইউপি সদস্য। শিক্ষকদের দ্বন্ধকে ঘিরে উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের বারবাকিয়া ওয়ারেচীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। প্রধান শিক্ষিকার স্বাক্ষর জাল করে একজন সহকারী শিক্ষক ঋন নিতে স্কুলের প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহে হাতিয়ে নেয়ায় এ অবস্থাকে আরো জঠিল পর্যায়ে নিয়েছে। ওয়ারেচীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্ধ স্পষ্ট ভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। এর জের ধরে ওই বিদ্যালয়ে শ্রেণী কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শিক্ষকদের এ বিরোধ স্কুলের বিভিন্ন ক্লাসে ছড়িয়ে পড়ে। যাতে করে শত শত শিক্ষার্থীর পড়ালেখায় এর নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এদিকে, সম্প্রতি বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও এসএমসি কমিটির সাথে বিরোধ আরো অধিক তীব্রতর হয়েছে। এসএমসি’র সভাপতি শিক্ষকদের একটি গ্রুপের অনুচর হিসাবে কাজ করছেন। শিক্ষকদের ওই পক্ষ প্রধান শিক্ষিকা বুলবুল আরা জান্নাতকে লাঞ্চিতে তৎপরতায় মেতেছেন। এর ধারাবাহিকতায় গত কয়েকদিন আগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহাবউদ্দিন প্রধান শিক্ষিকা বুলবুল আরা জান্নাতকে প্রাণনাশ চেষ্টা চালায়। অভিযোগ উঠেছে, প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে অফিস কক্ষে অবস্থান করছিলেন। এসময় ইউপি সদস্য শাহাবউদ্দিন আকষ্মিক ভাবে তেড়ে আসেন প্রধান শিক্ষিকাকে লাঞ্চিত করতে। লাঠিশোটা নিয়ে প্রধান শিক্ষিকাকে মারধরে আক্রমনাত্মক হন ইউপি সদস্য। এসময় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে তাকে নিবৃত করেন। শিলখালী বারবাকিয়া ওয়ারেচীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা তৈরী হয়েছে। গত ১বছর ধরে প্রধান শিক্ষিকার সাথে গুটিকয়েক অসাধু শিক্ষক অহেতুক দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েন। এ পরিস্থিতি উত্তরন ঘঠাতে প্রধান শিক্ষিকা দু’জন সহকারী শিক্ষককে দায়ী করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে একাধিক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সিনিয়র শিক্ষক মোসলেহ উদ্দিনও অভিযুক্ত ওই দু’শিক্ষককের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের ছড়াছড়ি চলছে শিক্ষকদের মধ্যে ওয়ারেচীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষিকা বুলবুল জান্নাত স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায় সহকারী শিক্ষক মুরশেদ আলমের বিরুদ্ধে চলতি বছরের গত ২২জানুয়ারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়েছে এ শিক্ষক ঋন সুবিধা হাতিয়ে নিতে দূর্দান্ত প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেন। জালিয়ত করেছেন ওই শিক্ষক প্রধান শিক্ষিকার স্বাক্ষর। ফলে, ওই অবৈধ প্রত্যয়ন বাতিল চেয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা। অনুরুপভাবে বিদ্যালয়ের অপর সহকারী শিক্ষিকা মেহেরুন্নেছার বিরুদ্ধেও অভিযোগ দিয়েছেন খোদ প্রধান শিক্ষিকা। যাতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে প্রায় সময় শ্রেণী কার্যক্রমে উপস্থিত থাকতে বিলম্ভের আশ্রয় নেন। প্রধান শিক্ষিকা এ বিষয়ে কিছু বললে তারা তার প্রতি চড়াও আচরন করেন। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করে নকশী কাথা বুনেন শ্রেণী কক্ষে। উদ্ধত্যপূর্ন আচরণ ও শৃংখলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত থাকায় শিক্ষক মুরশেদ আলম ও শিক্ষিকা মেহেরুন্নেছার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জনশ্রুতি রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে তারা দু’জনের বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগ দিয়েছিলেন সিনিয়র শিক্ষক মোসলেহ উদ্দিন। এদিকে, খোদ শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছায় এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও সেবা দিন দিন নি¤œমান হচ্ছে। এর নিরসন না হওয়ায় শিক্ষার্থীও সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে দিন দিন। গত বছর ৫শতাধিকেরও বেশি শিক্ষার্থী ছিল। প্রতিকুল অবস্থা বিরাজ করায় এর দিন দিন অবনতি ঘঠছে শিক্ষার মান। এ ব্যাপারে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, মেডাম মেহেরুন্নেছা মাঝে মধ্যে ক্লাসে আসেন। তিনি শ্রেণী কার্যক্রমের পরিবর্তে কাথা সেলাই নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বিদ্যালয়ে। মুর্শেদ স্যার অন্য শিক্ষকদের সাথে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত থাকেন। সাহাবউদ্দিন মেম্বার এ দু’জন বিতর্কিতের পক্ষ নিয়েছেন। সেদিন স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষিকাকে গালিগালাজ করে হামলার চেষ্টা করেন ইউপি সদস্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক জানান, এ পরিস্থিতিতে এ স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠানো সম্ভব হচ্ছেনা। পড়ালেখাও নিয়মিত এবং মান সম্মত নয়। প্রধান শিক্ষিকা বুলবুল আরা বেগম জান্নাত এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, দু’জন বিতর্কিত শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়েছেন। এবং আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেন। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে নারীর সাথে এমন অসৌজন্যতা ও বর্বর আচরণ অমানবিক। এ দু’জন শিক্ষক অবাধ্য হয়েছেন। ছেলেমেয়েদের ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগী নয়। তারা প্রাইভেট বাণিজ্য চালুর জন্য প্রতিনিয়ত চাঁপ দেয় শিক্ষার্থীদের। উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাছান মুরাদ জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। নতুন টিও স্যার যোগদান করেছেন। সমাধানের জন্য তিনিই দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। আমরা দু’য়েক দিনের মধ্যে সরোজমিনে ওই স্কুল পরিদর্শনে যাবো।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!