কুতুবদিয়া হাসপাতালে রোগীদের আহাজারী : দেখার কেউ নেই

কুতুবদিয়া হাসপাতালে রোগীদের আহাজারী : দেখার কেউ নেই 1ইফতেখার শাহজীদ, কুতুবদিয়া : বজলুল আহমেদ। বয়স ৬৫। শ্বাস কষ্টে ভোগছেন বেশ কিছু দিন ধরে। উপজেলার উত্তর বড়ঘোপ এলাকা থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে হাসপাতালে এসেছেন। সকাল ন’টায় আসলেও ঘড়ির কাটা এখন এগারটা পার হচ্ছে। তারপরও চিকিৎসকের দেখা পাননি তিনি। তাই অধির আগ্রহে বসে রয়েছেন। কপালে ষ্পষ্ট বিরক্তির চাপ দেখা যাচ্ছে। এ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে প্রতিবেদককে আক্রোশের সাথে বলেন, হাসপাতাল আমার বাবার নাকি? চাইলে চিকিৎসা পাব? ডাক্তার সাহেবের জন্য বসে আছি দেখতে পাচ্ছেন না? ডাক্তার কোথায় জানেন কিনা জিজ্ঞেস করলে বলেন, ডাক্তার সাহেব ফার্মেসীতে রোগী দেখতেছেন। চাপ একটু বেশী তাই আসতে দেরী হচ্ছে।

ফার্মেসীতে গিয়ে দেখা গেল চিকিৎসক রোগী দেখায় ব্যস্ত। হাসপাতালে রোগীদের ভীড়ের কথা শুনে দৌঁড়ে এলেন চিকিৎসক। ততক্ষণে রোগীদের মধ্যে হাতাহাতি। এক পর্যায়ে ডাক্তারের ওপর চড়াও। তারপর হাসপাতল ঘিরেই হৈ চৈ…। এক বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি। তেরই মার্চের চিত্র এটি।

পনের মার্চ দিবাগত রাতে হাসপাতালে ভর্তি হন লেমশীখালী ছামিরা পাড়া গ্রামের নেজাম উদ্দিনের সাত মাসের অন্তঃস্ত¡া স্ত্রী রুমি আক্তার (১৯) । রাত না পোহাতেই সীট কেটে দেওয়া হল তার। বিষয়টি নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায় হাসপাতাল এলাকায়। ফার্মেসীগুলোতে কর্তব্যরত ডাক্তারকে খোঁজতে থাকে সাধারণ জনগন। ঝটপট বন্ধ হতে থাকে দোকান পাট। পরে জানা যায়, অন্তঃসত্বা এ মহিলাকে গোপনে গর্ভপাত করার জন্য তার এক নিকট আত্মীয়কে দায়িত্ব দেন মহিলার স্বামী। তার নির্দেশমতে ঔষুধ কোম্পানীর এক এমআর ডাক্তারের সাথে সখ্যতার খাতিরে রুমি আক্তারকে ছাড়পত্র দিয়ে গর্ভপাতের ঔষধ লিখে একটি চিরকুট ধরিয়ে দেন। কিন্তু ওই মহিলা গর্ভপাত করাতে রাজি না হওয়ায় শুরু হয় নতুন সমস্যা। মহিলার ভাই বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এভাবেই প্রতিটি দিন পার হচ্ছে কোন না কোন নতুন ঘটনার জন্ম দিয়ে।

মূলত চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে ভুগছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। চিকিৎসকের অভাবে প্রতিনিয়তই অনাকাংখিত ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে হাসপাতালে। ২৭ জন চিকিৎসকের স্থলে কাজ করছেন মাত্র দুই জনে। যদিও চার জন রয়েছেন কাগজে কলমে। তাছাড়া অন্যান্য পদগুলোর মধ্যেও প্রায় অর্ধেকেরই বেশী শূণ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অফিস। একমাত্র সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে অর্ধেকের বেশী কর্মরত (১৬ জনে ১০ জন) রয়েছেন।

ঝাড়–দারের অভাবের কথা জানালেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল মাবুদ। হাসপাতালের শূণ্য পদগুলো পূরণে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে বললেন তিনি।

হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান দিন দিন কমছে বলে জানালেন সচেতন নাগরিক মহল। উপজেলার মেডিকেল গেইট এলাকার ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার নুরুল আনছার চৌধুরী বলেন, হাসপাতাল এলাকার ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হাসপাতালকে ঘিরে প্রতিদিন একটি না একটি ঘটনা ঘটে চলেছে। তাই সংঘর্ষের আশঙ্কায় যে কোন মুহূর্তে বন্ধ করে দিতে হয় দোকান পাট।

হাসপাতালে চিকিসৎকসহ পর্যাপ্ত জনবল না থাকার ব্যপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটি.এম. নুরুল বশর চৌধুরী বলেন,কুতুবদিয়া সরকারী হাসপাতাল দ্বীপের দু’লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যের রক্ষা কবচ। কিন্তু চিকিৎসক সংকটে ইদানীং হাসপাতাল ঘিরে অনাকাংখিত ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। যার ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ রোগীরা।এই দূর্ভোগ লাগবে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের জরুরী পদক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

কুতুবদিয়ার একমাত্র সরকারি হাসপাতালটি এভাবে চলতে থাকলে রোগী শূণ্য হাসপাতালে পরিণত হতে বেশী দিন সময় লাগবে না বলে জানালেন দ্বীপের সচেতন নাগরিক মহল। তারাও দাবী করেন জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালের চিকিৎসকসহ জনবল সংকট সমাধান করা হোক।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!