পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে কুতুবদিয়া

পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে কুতুবদিয়া 1সাভেজ কামাল , কুতুবদিয়া : বাংলাদেশের মূল-ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ তার নাম কুতুবদিয়া। এ দ্বীপের পশ্চিম উপকুল ঘেষে প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ বালি আঁড়িযুক্ত প্রকৃতির অপরূপ শোভায় শোভায়িত সৌন্দর্য্য মন্ডিত সমূদ্র সৈকত। জীববৈচিত্র্যপুর্ণ সাগর ঘেরা এ দ্বীপে বিচরণ করলে দেখা যায় নানা প্রজাতির পাখি, মাছ,কচ্ছপ,শামুক,ঝিনুক, মাছ ধরার নৌকার সারি। আর ঐতিহাসিক বিখ্যাত বাতিঘর, প্রাচীন স্থাপত্য কালারমার মসজিদ, লবণ শিল্প, মৎস্য ভান্ডার, সম্ভাবনাময়ী সর্ব বৃহৎ ভুগর্বস্থ গ্যাস ক্ষেত্র বাংলাদেশের সর্ব প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্প,অত্যাধুনিক এল,এম,জি টার্মিনাল ও দৃষ্টিনন্দন সারিসারি ঝাউবীথি। সরকারি এবং বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিলেই হতে পারে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র কুতুবদিয়া দ্বীপটি। দ্বীপের মধ্যখানে অবস্থিত হযরত শাহ আবদুল মালেক আল কুতুবী (রাঃ) এর কুতুব শরীফ দরবারের মাজার। দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য পর্যটক ও হযরত শাহ আবদুল মালেক আল কুতুবী (রাঃ) এর মাজার শরীফ অনুসারি ভক্তদের আগমন ঘঠে। লেমশীখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ প্রান্তে কুতুবদিয়া দ্বীপের পূর্ব পাশে বাংলাদেশ কুটির শিল্প (বিসিক) এর ঐতিহাসিক বিশাল লবণ উৎপাদন ও প্রদর্শনী খামার রয়েছে। প্রতি বছর শুস্ক মৌসুমে প্রদর্শনী বিসিক প্রকল্পে সুচারু ভাবে মাঠির মধ্যে সাদা লবণ উৎপাদনের দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিদিন পর্যটক, গবেষক, প্রযুক্তিবিদ ও কবি লেখক সাহিত্যিক লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়া স্ব চোখে মনমুগ্ধ পরিবেশ দেখে যাওয়ার পর তাদেরকে বার বার দেখতে আসার হাতছানি দেয়। কর্মব্যস্থতার এক ফাঁকে বুকের পাথর চাপা কষ্ট গুলো ভুলে স্বীয় মন মানসিকতাকে সতেজ করতে প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের রানী কুতুবদিয়ায় ভ্রমণে আসলে নিঃসন্দেহে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায় এমন উক্তি করেছেন অনেক রতি মহরতি জ্ঞানী ব্যক্তিগণ। এ দ্বীপে চলাফেরার যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা ও আবাসনের জন্য জেলা পরিষদের একটি ডাকবাংলো এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল সুমুদ্র বিলাস, হোটেল আলমাস, হোটেল সাগরিকা এবং বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের রেষ্ট হাউস অন্যতম । বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে গাড়িযোগে সোজা কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মগনামা ঘাটে এসে কুতুবদিয়া চ্যানেল পার হয়ে স্পীড বোটে ৬-৭ মিনিট এবং ডেনিশ বোটে ২০-২৫ মিনিটে কুতুবদিয়া দ্বীপে পৌছা যায়। কুতুবদিয়াকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষনা করার জন্য স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের দীর্ঘদিনের দাবীর সমর্থনে বর্তমান কুতুবদিয়া দ্বীপ উপজেলার ইউএনও সুজন চৌধূরী বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বরাবরে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি পত্র প্রেরণ করেছেন। এতে বলা হয় সমূদ্র বেষ্টিত ৬ ইউনিয়ন বিশিষ্ট কুতুবদিয়ার পশ্চিমে ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ সমূদ্র সৈকত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে দিক দিয়ে কুতুবদিয়ায় কোন অংশেই সেন্টমার্টিনের চেয়ে কম সৌন্দর্য নয়। যেহেতু সেন্টমার্টিন একটি মাত্র ইউনিয়ন। বিখ্যাত পর্যটন হনলুলু, ওয়াইকিকি, সিসিলি এ রকম বিছিন্ন সাগর বেষ্টিত পর্যটন কেন্দ্র আজ পৃথিবীখ্যাত। কিন্তু আশ্চর্য্যরে বিষয় কুতুবদিয়ার মত একটি দারুণ সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র থাকার পরে ও এর উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ এ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। পর্যটন মন্ত্রণায়ের উদ্যোগে কুতুবদিয়াকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষনার প্রয়োজনে জরীপ কার্য সম্ভাব্যতা যাচাই করার দাবী জানানো হয়। এতে কুতুবদিয়া দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটনখাতকে আরো প্রসারিত করে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে তোলে ধরার পাশাপাশি অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে পত্রে উল্লেখ আছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এস.কে.লিটন কুতুবীর লেখা “কুতুবদিয়া পরিচিতি” নামের বইয়ে লিখেছে বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে গড়ে উঠেছে সাগর ঘেরা একটি দ্বীপ। এ দ্বীপের সৌন্দর্য্য বর্ধণ যে কোন ভ্রমন প্রিয়সী মানুষ দেখলে মন কেড়ে নেয়। আকর্ষন আর সৌন্দর্য্য পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে আহবান করলেও প্রচার প্রচারনার দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে থাকায় এ দ্বীপের আকর্ষনের কদর ভ্রমন প্রিয়সীদের মনে নাড়া দিচ্ছে না। অপরূপ সৌন্দর্য্য সমুদ্র উপকুলে বালু চরে সারিসারি ঝাউবিথি, সোনালী কাগড়ার ছুটাছুঠি, সৃষ্ট পাথরের টাপুস টুপুস শব্দ, সাগর থেকে মাছ আহরণ করে উপকূলে ফিরে আসা সারিসারি ফিশিং ট্রলারের পাল তোলা নৌকার বহর, গাঙছিল পাখির চেচাচেছি কলকাকলির শব্দ,দেশের সর্ব প্রথম বাযুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্প, নোনা পানি থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে লবণ উৎপাদনের দৃশ্য,আধ্যাতিক সাধক শাহ আবদুল মালেকের মাজার শরীফ, উপকূলে সাগরের ঢেউয়ের শব্দ, দেশী-বিদেশী জাহাজের সারি এবং নাবিকদের পথ দেখানো লাইট ইউজ (বাতিঘর)সহ নানান সৌন্দর্য্য অনেক স্পট রয়েছে এ দ্বীপে।
এছাড়াও কুতুবদিয়া দ্বীপে বিদেশী কোম্পানীদের গড়ে তোলা দৃশ্যমান এলএমজি টারমিনাল নির্মান হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডক্টর কামাল হোছাইন বলেন, গত অক্টোবর/১৭ প্রথম সপ্তাহে কুতুবদিয়া দ্বীপে আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট ও সমুদ্রচরে বনায়ন গড়ে তোলার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটি প্রতিনিধি দল ঘুরে গেছেন। কুতুবদিয়া দ্বীপে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দৃশ্যয়মান পর্যটকদের আকর্ষনীয় স্থাপনা গড়ে উঠলে সরকার এ দ্বীপ থেকে শত শত কোটি টাকা পর্যটন খাতে আয় করতে পারবে। ইতোমধ্যে দেশের গুরুত্বস্থানে কুতুবদিয়ায় পর্যটনের গুরুত্ব উল্লেখ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন কুতুবদিয়া দ্বীপের পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে যান। কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী পর্যটকদের আহবানে সহজে আসা যাওয়া উপায় হিসেবে জানান, বাশঁখালীর ছনুয়া ঘাট হয়ে কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আকবরবলী ঘাট ও ধুরুং ঘাট উন্নত মানের জেটি দিয়ে উঠানামা করা যায়। আবার পেকুয়া উপজেলার মগনামা জেটি দিয়ে কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ স্টীমার ঘাট জেটি, দরবারঘাট জেটি ও আলী আকবর ডেইল জেটিসহ অত্যাধুনিক ৫টি জেটি দিয়ে পর্যটকরা আসা যাওয়া করে থাকেন। কুতুবদিয়া দ্বীপে পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীদের যোগাযোগ সুবিধার্থে আকবরবলী জেটি ঘাট, লেমশীখালী মিরাখালী সড়কের মাথায় প্রস্তাবিত অত্যাধুনিক জেটি ঘাট নির্মান প্রক্রিয়ায় চলমান, দারবার জেটি ঘাট, আলী আকবর ডেইল জেটি ঘাট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের (এলজিইডির) অর্থায়নে নির্মিত অত্যাধুনিক জেটি ঘাট দৃশ্যমান বলে উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ মহসীন তথ্য প্রকাশ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌ-পরিবহণ মন্ত্রাণালয়ের অর্থয়নে নির্মিত বড়ঘোপ স্টীমার ঘাট ও ধুরুং জেটি ঘাট রয়েছে যাতায়াতের জন ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!