চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়োগ পরীক্ষার ফল নেই দুই বছরেও

নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্নের প্রায় দুই বছর পরও চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে পারেনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। এতে চাকরি প্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। ফল প্রকাশ দেরির পেছনে আর্থিক লেনদেন ও অনিয়মের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরীক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, লেনদেনে বনিবনা না হওয়ায় এখনো পর্যন্ত ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে না। এছাড়াও জাতীয় নির্বাচনের পর প্রশাসনে রদবদল হওয়াকে ফলাফল প্রকাশ না হওয়ার কারণ বলা হচ্ছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে ‘নিম্নমান সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর’ পদে ৪১৬ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি। যোগ্যতা ছিল কমপক্ষে এইচএসসি পাস। আর বেতনক্রম ছিল ৯ হাজার ৩০০ থেকে ২৫ হাজার ৪৯০। এই পদে আবেদনের পর যাচাই-বাছাই করে প্রায় ২৩ হাজার পরীক্ষার্থীকে লিখিত পরীক্ষার সুযোগ দেয় চবক। লিখিত পরীক্ষা হয়েছে ২০১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। এতে উত্তীর্ণ হয় ৮৯০ জন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর-২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষাও দিয়েছেন। এই পদে মোট ১২১ জনকে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে। মৌখিক পরীক্ষার পর ২১ মাসেও চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। সার্কুলার দেওয়ার পর পার হয়েছে ২ বছর ৮ মাস।
সর্বশেষ গত ২৬ আগস্ট ফলাফল ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা করেনি চবক।

মৌখিক পরীক্ষার পর ফলাফল প্রকাশ না করাতে পরীক্ষার্থী চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমার পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। ফলাফল ঘোষণা করার জন্য বন্দরের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। ফলাফল প্রকাশে যেনো কোন দুর্নীতি না হয়। লিখিত ও ভাইভাতে যারা ভালো করেছে, তাদেরকে যেনো নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলাফলে সিরিয়ালে যারা প্রথম দিকে থাকে, তাদেরকে যেনো নিয়োগ দেওয়া হয়।

গোলাম সরোয়ার আরিফ নামে এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা কি কম্পিউটার অপারেটর পদে লিখিত ও মৌখিক পরিক্ষা দিয়ে অপরাধী? যদি তাই হয়; তাহলে বাতিল করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি কর্তৃপক্ষকে। কারণ আর টেনশন নিতে পারছি না। দয়া করে হয় রেজাল্ট দিন না হয় বাতিল করুন।’

অন্য এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘ভাইভা পরীক্ষার পর দুই বছর হয়ে গেল। খুব কঠিন অবস্থা আমাদের। আমাদের পরে অন্য পদে সার্কুলার হয়ে নিয়োগও হয়ে গেছে। আমাদেরটা হয়নি। কোন খবরও নেই। গত ২৬ আগস্ট ফলাফল দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি।’

নিম্নমান সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগে কেন দেরি হচ্ছে জানতে চাইলে চবকের সচিব মো. ওমর ফারুক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি ছাড়পত্রের মেয়াদ থাকতে হয়। সরকারি ছাড়পত্রের আগের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি ছাড়পত্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সহসাই নিয়োগ দেওয়া হবে।’

ফল প্রকাশ দেরির পেছনে আর্থিক লেনদেন বা অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়মের কোন ব্যত্যয় হবে না। সরকারি সকল নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেই নিয়োগ দেওয়া হবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে নিম্নমান বহি সহকারী, নিম্নমান সহকারী-কাম-কম্পিউটার পদ এবং জুনিয়র স্টোরম্যান পদে এক লাখ প্রার্থী আবেদন করে। এসব পদে এত বেশি আবেদন জমা পড়েছিল বাছাই করতে চট্টগ্রাম বন্দরকে হিমশিম খেতে হয়েছিল। এর আগে সবগুলো নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছিল চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। কিন্তু চবক প্রথমবার চট্টগ্রামের বাইরে গিয়ে ঢাকাতে এই পদের পরীক্ষা নিয়েছিল; এই পরীক্ষা নিতে বাড়তি খরচও বহন করতে হয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষকে।

বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব পদে নিয়োগে মন্ত্রী থেকে এমপি পর্যন্ত তদবির, আমলাদের সুপারিশ এবং আর্থিক লেনদেন সবকিছু ‘ব্যাটে-বলে’ মিলতে সময় লাগে। এ জন্য বন্দরে নিয়োগ কখনো দ্রুত হয় না।

এমএ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!