নাফ নদী সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে ১১ জন রোহিঙ্গা যুবক

নাফ নদী সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে ১১ জন রোহিঙ্গা যুবক 1গিয়াস উদ্দিন ভুলু,টেকনাফ : রাখাইন রাজ্য থেকে  ক্ষুধার যন্ত্রনা সর্য্য করতে না পেরে, কোমরে প্লাষ্টিক কন্টেনার বেঁধে,জীবনের ঝুঁকি নিয়ে,গভীর নাফ নদ সাঁতরিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ করল ১১ অসহায় রোহিঙ্গা যুবক।। বুধবার (১১ অক্টোবর) সকাল ৮ টার দিকে এই ১১ জন রোহিঙ্গা যুবক প্রান বাঁচাতে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিয়ানমার দংখালী সীমান্ত থেকে মানবিক বাংলাদেশে  আসার জন্য নাফ নদে ঝাঁপ দেয়। প্রায় তিন ঘন্টা সময় নাফ নদ সাঁতার কেটে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি শাহপরদ্বীপ পৌঁছলে নাফ নদী টহলরত কোস্ট গার্ড সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে।। জেটিঘাটে নিয়ে আসে। পরে রোহিঙ্গা যুবকদের মানবিক সহায়তা দিয়ে স্থানীয় বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে।একইদিন বিকালে বিজিবি তাদের নির্ধারিত স্থান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রেরন করার জন্য সাবরাং হারিয়াখালী সেনা বাহিনীর ত্রান ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়।
এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কোস্ট গার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফট্যান্ট কমান্ডার জাফর ইমাম সজীব বলেন, মিয়ানমার থেকে ১১ রোহিঙ্গা যুবক সাঁতার কেটে নাফ নদীর শাহপরীর দ্বীপ জেটির দিকে অগ্রসর হলে নাফ নদী টহলরত কোস্টগার্ডের দৃষ্টি গোচর হয়। কোস্ট গার্ড টহলদল দ্রুত তাদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে কূলে নিয়ে আসে এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রেরণের জন্য স্থানীয় বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানায়।এরা হল, মিয়ানমার বুচদং সিনডং এলাকার আলী আহাম্মদের ছেলে ফয়েজুল ইসলাম(১৭), ইসমাইল পাড়া এলাকার পেটান আলীর ছেলে হামিদ হোসন(১৮), তার ভাই কামাল হোসন(৩০), আব্দুল মোনাফের ছেলে আনসার উল্লাহ (২৪), পুইমালী এলাকার সব্বির আহাম্মদের ছেলে ইমান হোসন(২৫), কালা মিয়ার  ছেলে মোঃ রিয়াদ(২১), সৈয়দ আহাম্মদের ছেলে রমজান আলী (২২), হংমুড়া পাড়া এলাকার কালা মিয়ার ছেলে মোঃ উল্লাহ(২৬), কাইন্দা পাড়া এলাকার নূরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ হোসেন(৩০), আজলী পাড়া এলাকার নূরুল ইসলামের ছেলে মোঃ আরফ(৩০), টারম রাঙ্গই এলাকার মোঃ ইলিয়াছের ছেলে আব্দুল মতলব(২৬), মোঃ ইয়াছিন(২৪)।
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি মেম্বার আব্দুস সালাম বলেন, বুধবার সকালে আমরা নাফ নদীর তীর থেকে কয়েকজনকে মাঝ নদে সাঁতার কাটতে লক্ষ করি। তারা সবাই সাঁতার দিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসছিলেন। তবে প্রত্যেকের হাতে একটি করে ছোট হলুদ রংঙ্গের গ্যালন ছিল।
উদ্ধার হওয়াদের মাঝে মোঃ ইয়াছিন ও কামাল হোসন জানান, মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার পর থেকে সেনাবাহিনী তাদেরকে গ্রামে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ঘর থেকে কোথাও বের হতে দিচ্ছিলনা। এতে খাবার সংকটে পড়ে গ্রামের লোকজন। খেতে না পেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সুযোগ পেয়ে ১১ দিন আগে পায়ে হেটে পাহাড় পাড়ি দিয়ে নাফনদীর ওপারের নাইক্যংদ্বীপ ও দংখালী তীরে চলে এসে অবস্থান করি। তবে তীরে আসলে নৌকা পাওয়া যাবে কিন্তু বেশ কয়েক দিন অপেক্ষার পরও কোন নৌকা পাওয়া যাচেছনা। সেখানে খাদ্যের অভাব ও নানা রোগে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
তারা আরো জানায়, আমাদের বাড়ী-ঘর বুচিদং এলাকায়। সেদেশের বাহিনী যেতে দিচেছনা বাড়ী-ঘরে। নৌকা বা ট্রলারের অভাবে এদিকেও আসতে পারছিনা। কোন উপায় না দেখে ওপারের সৈকতে থাকা গ্রামের ৫ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এদের মধ্যে অনেকেই অর্ধাহারে অনাহারে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাদের বাঁচাতে আমরা একদল যুবক উদ্যোগ গ্রহন করি। আমরা চিন্তা করছি যদি সাঁতার কেটে ওপারে যায় তাহলে বাংলাদেশসহ অন্যান্যদেশ ওপারের সৈকতে অবস্থান নেওয়া লোক জনকে বাঁচাতে উদ্দ্যোগী হবে। সে লক্ষ্যে আমরা ১১ জন যুবক মংডু দংখালী সীমান্ত এলাকা দিয়ে সকালের দিকে এপারের উদ্দেশ্যে নদীতে নেমে পড়ি। সাঁতরাতে গিয়ে অনেকে মাঝখানে এসে ক্লান্ত হয়ে যায়। কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার না করলে হয়তো কয়েক জনের সলিল সমাধি হতো বলে জানায়।
টেকনাফস্থ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এস এম আরিফুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার হওয়া মিয়ানমার নাগরিকদের চিকিৎসা ও সহায়তা দেয়া হয়। পরে স্বাভাবিকতা ফিরে আসলে তাদের বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যা¤েপ পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
টেকনাফ থানার ওসি মো. মাইন উদ্দিন খান বলেন, এটি উদ্বেগের বিষয়। আমরা মৃত্যুর মিছিল কমাতে চেষ্টা চালাচ্ছি আর রোহিঙ্গারা জীবন বাজি রেখে নদী সাতরাচ্ছে। পুরুষরা না হয় যেকোন ভাবে পার হলো। কিন্তু নারী বা শিশুদেরও যদি একই পদ্ধতিতে সাঁতরানো হয় তবে তা আরো ভয়াবহ হবে।
রাখাইনে সহিংসতার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫৫ জন রোহিঙ্গার মৃতদেহ হয়ে বাংলাদেশে ফিরেছে বলে জানায়। তবে ট্রলার বা নৌকা ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ রোহিঙ্গাদের এখনো কোন হদিস মিলেনি বলে জানায় নিখোঁজ রোহিঙ্গা পরিবার।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!