শিক্ষকের জন্য আলাদা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে

শিক্ষকের জন্য আলাদা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে 1শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড- এদেশে শিক্ষিত নাগরিক তৈরী করার কারিগড় হচ্ছে শিক্ষক সমাজ। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রভাষক, অধ্যাপক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, রাজনৈতিক, ও বিভিন্ন পেশাজীবি ব্যক্তিবর্গ সবই শিক্ষকদের পরিশ্রমের ফসল। একটি জাতি সমৃদ্ব হতে হলে শিক্ষক সমাজের পেশাকে উন্নত ও সমৃদ্ব করা একান্ত প্রয়োজন। বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের শিক্ষকদের পেশা যতটুকু উন্নত ও সমৃদ্ব সে তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষকদের পেশাগত জীবন উন্নত নয়। যদিও শিক্ষকদের পেশাকে উন্নত করার সরকারের সদিচ্ছার অভাব নেই। শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত জীবন যাপনের প্রক্রিয়া বিভিন্ন কারনে বাধাগ্রস্থ। সামাজিকভাবে সম্মানের সাথে বেচে থাকতে হলে অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল না হলে সমাজে আর্থ মর্যাদার সাথে বেচে থাকা অনেক কষ্ঠকর। শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করলে শিক্ষকরা উন্নত সমৃদ্ব জীবন প্রক্রিয়ার সাথে সহজে যুক্ত হওয়া সম্ভব। একটু পর্যালোচনা করলে দেখা যায় দেশে বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ১৫(পনের) লক্ষ, এ বিশাল পেশাজীবিকে একটি ছাতার নিচে নিয়ে এসে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সুযোগ দানের যে প্রক্রিয়া গ্রহন করা প্রয়োজন তা হল শিক্ষকদের জন্য একটি পৃথক ব্যাংক প্রতিষ্টা করা। যেখান থেকে শিক্ষকরা প্রভিডেন্ট ফান্ড, কল্যান ট্রাষ্ট, অবসর ভাতা, গোষ্টী বীমা, গ্র্যাচুয়িটি, কল্যান তহবিল, পেনশন সুবিধা ভোগ করার সুযোগ পাবে। কম সুদে লোন নিয়ে নেহায়ত অসচ্ছল শিক্ষকরা অন্তত মাথা গোজার একটি ঠিকানা তৈরী করতে পারবেন। যাহা বর্তমান অবস্থায় অনেক কঠিন। বাংলাদেশ ব্যাংক সীমান্তরক্ষীদের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়ার জন্য সীমান্ত ব্যাংক, কৃষকদের সুবিধার জন্য কৃষি ব্যাংক, ব্যাবসায়ীদের সুবিধার জন্য বানিজ্যিক ব্যাংক, বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক, শিল্পপতিদের জন্য শিল্প ব্যাংক, গ্রামীন দরিদ্র জনগোষ্টির সুবিধার জন্য গ্রামীন ব্যাংক, প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী ব্যাংক (যাহা চালু করা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে) যা বাংলাদেশ সরকার ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দিয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রায় ১৫ লক্ষ শিক্ষকদের জন্য অথচ দেশে কোন বিষেশায়িত ব্যাংক নেই। জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মোতাবেক প্রায়মারী স্কুলের শিক্ষক রয়েছেন ৩,২২,৪৮৭ জন এবং স্কুলের সংখ্যা ৬৫,১৩২, মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক রয়েছেন ২,৪৩,৫৫৩ জন স্কুলের সংখ্যা ১৯,৮৪৭, কলেজ শিক্ষকের সংখ্যা ১,১৭,০০০ জন কলেজের সংখ্যা ৪০০৭টি, মাদরাসার শিক্ষকের সংখ্যা ১,১৩,৩৬৮জন ও মাদরাসার সংখ্যা ৯,৩৪১টি, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষকের সংখ্যা ৩২,৩৭৯জন ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৮৯৭টি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংখ্যা ২৭,৭৯৪জন ও মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৩০টি, কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষকের সংখ্যা ৫০,০০০ জন ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৫,০০০, গনশিক্ষার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংখ্যা ৭০,০০০ জন ও কেন্দ্র সংখ্যা ৭০,০০০। স্বতন্ত্র এবতাধায়ী মাদরাসার শিক্ষক সংখ্যা ১৬,০০০ ও প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ৪০০০, কওমী মাদরাসার শিক্ষক সংখ্যা ৭৩,৭৩১ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৩,৯০২। এনজিও পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংখ্যা ১০,০০০ এবং প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১০,০০০। ইহা ছাড়াও ৭৮লক্ষ শিক্ষার্থী প্রাথমিক পর্যায়ে উপবৃত্তি পায় এবং ৪০ লক্ষ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পর্যায়ে উপবৃত্তি পাপ্ত হয়। উপরোক্ত সকল কার্যক্রমগুলো বিভিন্ন তপশিল ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসতেছে। যদি শিক্ষকদের নামে একটি আলাদা বিষেশায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে ছাত্র-ছাত্রীদের ও অবহেলিত শিক্ষকদের আর্থিক সেবা তাদের দোরগোড়ায় পৌছে দেওয়া সম্ভব হবে। সারাদেশে আনাচে কানাছে শিক্ষকতা মহান পেশায় নিয়োজিত পেশাজিবীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে চিটিয়ে রয়েছে। এমন কোন অঞ্চল নেই যেখানে দুূ-চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। এই দুর্গম অঞ্চলের শিক্ষকরা অর্থনৈতিক অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে এক ছাতার নীচে এনে সকল ন্যায্য অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব। সরকার যেখানে জাতীয় বাজেটের ১১% শিক্ষা খাতে বরাদ্ধ দেন সে বরাদ্ধ কৃত অর্থের সঠিক ব্যাবহারের জন্য একটি শিক্ষক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা খুবই যুক্তিসংগত। বিষটি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ সদয়বিবেচনা করতে পারেন।

 

লেখক : মোহাম্মদ হাশেম-উর-রশিদ, সুপারেনন্টেডেন্ট , বটতলী শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (রা:) এয়াকুবিয়া দাখিল মাদ্রাসা ।
বটতলী, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম
মোবাইল: ০১৮১৭২০০৭৩৩

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!